নরসিংদী: আর বিদেশ নয়, দেশেই ফলবে বীজবিহীন সুস্বাদু আঙ্গুর।
কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের নরসিংদীর শিবপুর আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা বীজবিহীন সুস্বাদু আঙ্গুরের গবেষণায় সফলতা পেয়েছে।
আঙ্গুর ইংরেজিতে গ্রেভ। যা লতা জাতীয় দ্রাক্ষালতা গাছে ফলে থাকে। এর রং কালো, নীল, সোনালি, সবুজ, বেগুনি, লাল বা সাদা হতে পারে। এটা মিষ্ট এবং উপাদেয় ফল।
ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ও মধ্য আমেরিকা অঞ্চলে আঙ্গুরের উৎপত্তি। ভারতবর্ষে আঙ্গুরের চাষ শুরু হয় ১৩০০ সালে। শুরুতে উত্তর ভারতের কিছু অঞ্চলে শুরু হলেও ধীরে ধীরে তা বিস্তৃত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এক সময় বাংলাদেশের বন-জঙ্গলে ‘ঝাক্কা’ নামে এক প্রকার আঙ্গুর প্রাকৃতিকভাবে ফলতো। কিন্তু ফলটি টক বেশি হওয়ার কারণে ধীরে ধীরে তা বিলুপ্ত হয়। এ কারণে ‘আঙ্গুর ফল টক’ প্রবাদটি তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তিপর্যায়ে বিক্ষিপ্তভাবে একেবারে ছোট পরিসরে আঙ্গুর আবাদ হয় ঠিকই, কিন্তু তা টক। যার জন্য দেশে আঙ্গুর আবাদ ও উৎপাদন বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়নি। যার জন্য চাহিদার পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
’৯০ এর দশকে দেশে আঙ্গুর চাষের সম্ভাব্যতা নিয়ে গবেষণা করে গাজীপুরের কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র। ওই সময় বিদেশ থেকে শতাধিক জাতের আঙ্গুরের জাম প্লাজম সংগ্রহ করে গবেষণা করা হয়। কিন্তু দক্ষ জনবলের অভাবে এ উদ্যোগ সফল হয়নি।
সফলতার খবর হলো, বিশ্বের অন্যান দেশের মতো আমাদের দেশেও আঙ্গুর চাষ প্রথা চালু হয়েছে। নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায় মজলিশপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে গবেষণার মাধ্যমে আঙ্গুর চাষের সফলতা আসছে। ৯০ দশকে গবেষকরা ১০০টি জাত নিয়ে গবেষণা করে সফলতা আনতে না পারলেও বর্তমানে তা সম্ভব হয়েছে। সময় উপযোগী ছাটাই পদ্ধতির মাধ্যমে দ্রুত ফুল ফোটে এবং ফুল থেকে কুড়ি বের হতে দেখা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে শিবপুর কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. নাজিরুল ইসলাম বলেন, ‘এ পদ্ধতিতে সময়মতো জিএ-৩ হরমুনিয়াম প্রয়োগ করলে বিচিবিহীন আঙ্গুর সারা বছর জন্মে। সেইসঙ্গে শুষ্ক আবহাওয়ায় আঙ্গুর ভালো জন্মে। তবে অক্টোবর থেকে মে মাস পর্যন্ত আঙ্গুরের ফলন ভালো হয়। আঙ্গুর গাছগুলো সাধারণত লতা জাতীয়। আমরা আঙ্গুর নামে যে ফলটি চিনি তার ইংরেজি নাম হলো Grape, বৈজ্ঞানিক নাম Vitis Lubrusca। পরীক্ষামূলকভাবে শিবপুর কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে চারা রোপনের দেড় বছরের মধ্যে বিচিবিহীন আঙ্গুর ধরছে। এক সময় বৈজ্ঞানিকরা বিচিবিহীন আঙ্গুর চাষে ব্যর্থ হয়ে মনে করতেন আমাদের দেশের আবহাওয়ায় বিচিবিহীন মিষ্টি আঙ্গুর হয়তো জন্মাবে না। ফিলিপাইনে প্রশিক্ষণের পর দেশে এসে পুনরায় গবেষণার মাধ্যমে সফলতা অর্জন করেছে।’
আর হরমুনিয়ামের খরচ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, ১ গ্রাম জিএ-৩ হরমুনিয়ামের মূল্য ২৮,০০০/ যা কৃষকদের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ দিলে ৫শ হেক্টর জমিতে আঙ্গুর চাষ সম্ভব হবে বলে জানান। দেশের কৃষকরা আঙ্গুর চাষে আন্তরিক হলে তার সহযোগিতা অব্যাহত থাকারও অঙ্গীকার করলেন তিনি।
এক সময় আমাদের দেশে উৎপাদিত আঙ্গুর চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও বীজ দিয়ে উদ্ভব করলে নরসিংদীর অন্যান্য শিল্প ও সফলতার পাশাপাশি আঙ্গুর চাষ ও জেলাকে নতুন করে পরিচিত করতে সহযোগিতা করবে বলে প্রত্যাশা।