নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের শাস্তি খুজে পায়নি হাইকোর্ট, তাই সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ

0

ফ্যাসিবাদী সরকারের দু:শাসনের বিরুদ্ধে ফেইসবুকে সমালোচনা করলে আওয়ামী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। অথচ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ছাত্রলীগের নারী সন্ত্রাসীরা বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণের শাস্তি হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্টের আওয়ামী বিচারকদের একটি বেঞ্চ। এই আওয়ামী বিচারকদ্বয় জে বি এম হাসান ও রাজিক আল জলিল রাতভর নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের কোন শাস্তি খুজে পাননি। তাই সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করেন তারা।

বুধবার (পহেলা মার্চ) তারা এই নির্দেশ দেন। একই সাথে সংশ্লিষ্ট হল প্রভোস্টকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন তারা।

হাইকোর্টের আওয়ামী বিচারকদের দৃষ্টিতেও ছাত্রলীগের নারী সন্ত্রাসীদের জন্য আইনের কোন প্রয়োগের চিন্তা নেই। একজন ছাত্রীকে ঘন্টার পর ঘন্টা নির্যাতন এবং বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের শাস্তি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার! ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা এভাবেই আস্কারা পাচ্ছে সরকার এবং আওয়ামী আদালত থেকে। এতে এই সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া এখন। ছাত্রলীগের নারী সন্ত্রাসীদের দ্বারা প্রায়ই সাধারণ নিরীহ ছাত্রীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ছাত্রদেরকে পিটিয়ে মারা হচ্ছে। তারপরও আওয়ামী আইনে তাদের কোন শাস্তি নেই। শাস্তি হচ্ছে দল অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সাময়িক বহিষ্কার।

বুধবার হাইকোর্টের আওয়ামী বিচারকদের নির্দেশ অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার হওয়া ছাত্রলীগের নারী সন্ত্রাসীদের মধ্যে রয়েছে- পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তাঁর সহযোগী নারী সন্ত্রাসী চারুকলা বিভাগ ২০২০-২০২১ সেশনের শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার উর্মি, আইন বিভাগের ২০২০-২০২১ সেশনের ইসরাত জাহান মীম, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান।

উল্লেখ্য, গত ১২ই ফেব্রুয়ারি ছাত্রী হলে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের সময় তাঁকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল ও এ ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকিও দেয় এই নারী সন্ত্রাসীরা।

ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী ১৪ই ফেব্রুয়ারি দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর, হলের প্রভোস্ট ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করে।

ছাত্রলীগের নারী সন্ত্রাসী সানজিদা চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী ছাত্রী গণমাধ্যমকে জানান, গত ৮ই ফেব্রুয়ারি প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়। এ জন্য তিনি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের এক আবাসিক ছাত্রীর কাছে অতিথি হিসেবে থাকেন। বিভাগের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তাবাসসুম নবীন শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চান, কারা দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে থাকেন। এ সময় ওই ছাত্রী হাত তোলেন। হলে ওঠার বিষয়টি আগে তাবাসসুমকে না জানানোয় মারাত্মক রেগে যান তিনি। এরপর তাঁকে হলের কক্ষে (প্রজাপতি-২) দেখা করতে বলেন। তবে অসুস্থ থাকায় দেখা করেননি তিনি। ১১ই ফেব্রুয়ারি ক্লাসে গেলে তাঁকে বকাঝকা করেন তাবাসসুম।

নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রী অভিযোগ করেন, এই ঘটনার জেরে ১২ই ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার দিকে হলের গণরুমে (দোয়েল) তাঁকে ডেকে নেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নারী সন্ত্রাসী সানজিদা চৌধুরী। সেখানে পাঁচ থেকে ছয়জনের একটি দল তাঁকে রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত নানাভাবে নির্যাতন করেন।

নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল দিচ্ছিল আর এর ফাঁকে ফাঁকে চালাচ্ছিল শারীরিক নির্যাতন। কিল, ঘুষি, থাপ্পড় কোনোটাই বাদ রাখেনি। কাপড় আটকানোর আলপিন দিয়ে পায়ের ঊরুতে ফুটাচ্ছিল।

তিনি বলেন, নির্যাতনের সময় আরেক ছাত্রী মোবাইল ফোন দিয়ে ভিডিওধারণ করেন। একপর্যায়ে বিবস্ত্র করে ভিডিওধারণ করা হয়। কাঁদতে কাঁদতে তিনি পা ধরে ক্ষমা চাইলেও তাঁরা কোনো কথা শোনেননি। গণরুমে এ সময় উপস্থিত সাধারণ ছাত্রীরাও কোনো কথা বলেননি।

ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, বিবস্ত্র করে ভিডিওধারণের সময় হুমকি দেওয়া হয়। বলা হয় এই কথা কাউকে জানালে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এমনকি প্রভোস্টের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষয় লিখে দিয়ে আমাকে বলেছে, হাসবি আর এগুলা বলবি। সব তারা ভিডিও করে রেখেছে। আপুরা মারার সময় বলছিল ‘মুখে মারিস না, গায়ে মার যেন কাউকে দেখাতে না পারে।’

রাতের কথা কাউকে জানালে ওই ছাত্রীরা তাঁকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। নির্যাতনের এ কথা কাউকে বললে হল থেকে বের করে দেবে বলে শাসায়। এই কথা বাইরে গেলে ভিডিও ভাইরাল করে দেবে। তাঁরা বলে, তুই হলের প্রভোস্ট স্যারকে বলবি, সব আমার দোষ, এই হলে থাকব না। এসব বলে হল থেকে একেবারে চলে যাবি। এই কথা ১৪ তারিখ বলবি।

ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, অনেকবার ক্ষমা চেয়েছি, কেউ কোনো কথা শোনেনি। রাত সাড়ে তিনটার পর তাঁরা চলে যায়। আমি গণরুমেই ছিলাম। এরপর সকাল নয়টার দিকে ক্যাম্পাসের সামনে থেকে বাসে উঠে গ্রামের বাড়িতে চলে আসি। আমার শরীর ব্যথা। জ্বর অনুভব করছি। ঠিকমতো খেতে পারছি না। গালের ভেতর সামান্য কেটে গেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। যাঁরা জড়িত, প্রত্যেকের শাস্তি চাই।

এ ঘটনায় রিট হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের পাশাপাশি কিছু নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।

ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি করে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন গতকাল রোববার জমা দেওয়া হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, ঘটনার সত্যতার প্রমান পাওয়া গেছে। এর প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের আওয়ামী বিচারকদ্বয় নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের শাস্তি হিসাবে কোন আইন না পেয়ে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছেন।

উৎসঃ   আমার দেশ
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More