একইসঙ্গে সংগঠনটি বলছে, ট্রাইব্যুনালের দেওয়া আগের মৃত্যুদণ্ডাদেশগুলোর ক্ষেত্রেও ন্যায় বিচার নিয়ে একাধিক প্রসিদ্ধ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক তাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।
সোমবার রাতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করেছে নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন এইচ আর ডবলু।
সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের দেয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশের চূড়ান্ত রায়ের বিরুদ্ধে গত ৫ মে মাওলানা নিজামীর রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার পর একমাত্র বিকল্প ‘রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা’র সময়সীমা শেষ হলেই যেকোন সময় রায় কার্যকর করা হবে বলেও প্রেসবার্তায় জানানো হয়।
সংগঠনটি বলছে, এই ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ের ব্যাপারে ইতিপূর্বে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা ন্যায় বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুললেও কয়েকটি মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায় কার্যকর করেছে সরকার।
আন্তর্জাতিক এই মানবাধিকার সংগঠনটির এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যেকোন পরিস্থিতিতেই মৃত্যুদণ্ডকে স্থায়ী সমাধান মনে করে না। এটাকে অমানবিক ও নিষ্ঠুর শাস্তি হিসেবেই বিবেচনা করে সংগঠনটি।
অ্যাডামস বলেন, যখন একটি বিচার প্রক্রিয়ার ন্যায়বিচার ও আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড রক্ষা করার বিষয়ে একাধিকবার প্রশ্ন ওঠে, তখন তা বিশেষ একটি সমস্যা হিসাবেই থেকে যায়।
সংগঠনটি বলছে, ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন অন্যান্য মামলার মতো এ মামলার সময়ও নিজামীর পক্ষের সাক্ষীর সংখ্যা কমিয়ে নির্দিষ্ট করে দেয় আদালত। যারা নিজামীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিত। কিন্তু মাত্র চারজন সাক্ষীকে নিজামীর পক্ষে আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়। আর সরকারের পক্ষে প্রসিকিউশন টিমের দেয়া সাক্ষীরা আদালতে অভিযোগের ব্যাপারে অসংলগ্ন সাক্ষ্য দিলেও ওই সাক্ষীদেরকে নিজামীর আইনজীবীদের জেরা করতে দেয়নি ট্রাইব্যুনাল। এমন অভিযোগই করেছে এইচ আর ডব্লিউ।
ট্রাইব্যুনালে বিচার চলাকালীন সময়ে স্কাইপ কেলেঙ্কারী প্রসঙ্গে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, দি ইকোনোমিস্ট পত্রিকায় একজন বিচারকের স্কাইপ কেলেঙ্কারীর যে তথ্য ফাঁস হয়েছে তাতেও প্রকাশ হয়েছে, কিভাবে নিজামীর বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বেআইনীভাবে একজন বিচারক বিচারাধীন মামলার প্রসিকিউশন নিয়ে বহিরাগত এক ব্যাক্তির সঙ্গে পরামর্শ করেছেন। একটি বিতর্কিত বিচারের কৌশল চূড়ান্ত করতে তারা যা করছিলেন, তা তাদের মুখেই শোনা গেছে ওই স্কাইপ কেলেঙ্কারীরর মধ্য দিয়ে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ খুব জোরালোভাবেই চায় যে, বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে যুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাপরাধের যে ঘটনা ঘটেছে, তার সুষ্ঠু বিচার ও জবাবদিহিতা হোক। কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়ায় যেভাবে ত্রুটিপূর্ণ বিচার (flawed judgments) হচ্ছিল তার অনেকগুলোর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল ন্যায়বিচারের প্রশ্নে। কিন্তু সেগুলো আমলে নেয়া হয়নি। কিছু মামলার ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার না করা নিয়ে যথেষ্ট প্রমাণ থাকার পরেও মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছে আদালত।
সংগঠনটি জানিয়েছে, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনে যাদের বিচার করা হচ্ছে তাদের মানবাধিকার সুরক্ষার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে দীর্ঘদিন ধরে বলা হচ্ছে আমাদের পক্ষ থেকে।
আন্তর্জাতিক এই সংগঠনটি বলছে, বাংলাদেশের সংবিধানের সমস্যাগ্রস্থ অনুচ্ছেদ ৪৭এ(১) ধারায় বলা হয়েছে, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তদের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষা করা হবে না। দ্রুত বিচার করার ক্ষেত্রে একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালও এর আওতায় থাকে। সংবিধান সংশোধন করে আনা এই ক্ষতিকর অনুচ্ছেদের কারণে বিচক্ষণ বিচারকগণ অন্যান্য আসামিদের মত যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তদের আইনগত অধিকার ও বিচার প্রক্রিয়াকে অস্বীকার করেছে।
অর্থাৎ সাধারণ মামলার আসামিরা যেভাবে আইনি সুবিধা ও বিচার প্রক্রিয়া পায়, তা এ যুদ্ধাপরাধের অপরাধে অভিযুক্তদের দেয়া হয়নি।
অ্যাডামস বলেন, বিচারপতি শুধু ন্যায় বিচারের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থার সেবা করে যাবেন আর এটাই হওয়া উচিৎ।
তিনি আরো বলেন, অতি দ্রুত ফাঁসির রায়সহ এই রকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে সম্ভাব্য সব রকম ব্যবস্থা নিশ্চত করতে হবে, যাতে করে অভিযুক্ত ব্যক্তি তার সকল প্রশ্ন ও আনীত অভিযোগের ব্যাপারে সঠিক উত্তর পায়।