এক সময়ে জোর-জুলুম করে লোনা পানিতে চিংড়ি চাষ করা হলেও এখন সেই সুযোগ নেই। বর্তমান সরকার চিংড়ি নীতিমালা তৈরি করেছে। যেখানে পরিবেশের ক্ষতি করে চিংড়ি চাষ বন্ধ করা হয়েছে। স্থানীয় জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে সাদা সোনা খ্যাত এই চিংড়ি চাষের জন্য বলা হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলের লোনা পানি অধ্যুষিত এলাকার মানুষের লড়াই সংগ্রাম ও জীবন কাহিনী নিয়ে লেখা ‘লোনা পানির শোষণ সন্ত্রাস’ নামের দৃশ্যকাব্যের (নাটক) মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অতিথিরা একথা বলেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সিনিয়র সাংবাদিক রাহুল রাহা। প্রধান অতিথি ছিলেন ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। সাংবাদিক নিখিল ভদ্রের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, কথা সাহিত্যিক অধ্যক্ষ তৌহিদুর রহমান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ বিরোধী আন্দোলনের নেতা মো. রশিদুজ্জামান, বইয়ের লেখক রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস ও কবি সাকিরা পারভীন।
অনুষ্ঠানে লোনা পানি থেকে স্বাদু পানিতে চিংড়ি চাষকে রূপান্তর করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে ডেপুটি স্পিকার বলেন, এখন বিদেশে লোনা পানির চিংড়ির থেকে স্বাদু পানির চিংড়ির চাহিদা বেশি। আর স্বাদু পানিতে চিংড়ি চাষের পাশাপাশি একাধিক ফসল উৎপাদন সম্ভব। তাই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণায়লয়কে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষকে কেন্দ্র করে হত্যা-নির্যাতন-নিপীড়ন ও শোষণের চিত্র এই বইটিতে ফুটে উঠেছে। যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে চলতে পারে না। কারণ চিংড়ি ঘেরকে কেন্দ্র করে শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের ছত্রচ্ছায়ায় সেসব ঘটনা ঘটেছে। একজন আইনজীবী হিসেবে অনেক ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে আদালতে লড়েছি। তবে বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে নিপীড়িত ওই অঞ্চলের মানুষের শোষণমুক্ত ও নিরাপদ জীবন নিশ্চিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বিশেষ অতিথি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, চিংড়ি চাষের জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। এখন হাজার হাজার একর লোনা পানিতে চিংড়ি চাষ করার সুযোগ নেই। চিংড়ি ঘের সর্বোচ্চ ৩৩ একর হতে পারবে। জনবহুল এলাকায় চিংড়ি চাষ করা যাবে না। চিংড়ি ঘের করার ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণের মতামত বেশি গুরুত্ব পাবে। তিনি বলেন, পরিবেশের ক্ষতি করে এখন চিংড়ি চাষের সুযোগ নেই। যে কোন চাষের ক্ষেত্রে পরিবেশকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। লোনা পানির চিংড়ির চাষের পাশাপাশি সরকার স্বাদু পানিতে চিংড়ি চাষকে উৎসাহিত করছে। সরকারের এই উদ্যোগে সকলকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি।
উল্লেখ্য, বিগত শতাব্দীর আশির দশকে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে লোনা পানির পাশাপাশি প্রবেশ করে মানব চেহারার কিছু দানব; চিংড়ি চাষের নামে যারা ওই অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির উপর চালায় নানামুখী শোষণ-নির্যাতন-নিপীড়ন। ফলে অসংখ্য মানুষ পেশা-ভূমি হারিয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়। তাদের লড়াই সংগ্রাম ও জীবন কাহিনী নিয়ে লেখা হয়েছে ‘লোনা পানির শোষণ সন্ত্রাস’ নামের দৃশ্যকাব্য (নাটক)। অধ্যাপনা পেশায় নিয়োজিত রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস-এর লেখা নাটকটি প্রকাশ করেছে কথামেলা প্রকাশন।