পাহাড়ে যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের মুখে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে নতুন গজিয়ে ওঠা সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। এদের সশস্ত্র শাখা কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) সদস্যদের আত্মসমর্পণের জন্য নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর কাছ থেকে।
প্রায় দীর্ঘ এক মাস ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের মিয়ানমার ও ভারত সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় সেনাবাহিনী ও র্যাবের সমন্বয়ে যৌথ বাহিনীর এই অভিযান চলছে।
তবে প্রস্তাব দেয়া হলেও আত্মসমর্পণের কোনো খবর এখনো কেএনএফের পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে।
অভিযানের মুখে কোণঠাসা হয়ে পাহাড়ে আত্মগোপনে রয়েছে কেএনএফের সশস্ত্র শাখা কেএনএ ও সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত উগ্রবাদী সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার সদস্যরা।
বান্দরবানের জেলা পরিষদের সদস্য ও বম সম্প্রদায়ের নেতা জুয়েল বম সোমবার (১৪ নভেম্বর) জানিয়েছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে বম সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ বৈঠক করেছে। বৈঠকের পর কেএনএফের সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নেয়া হয়। কেএনএফেরর জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করে এ প্রস্তাবগুলো দেয়া হয়। তবে এখনো পর্যন্ত প্রস্তাবের পক্ষে কোনো খবর আসেনি বলে তিনি জানিয়েছেন।
বম সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে কোনোভাবে কেএনএফকে সহযোগিতা না করার জন্য প্রতিটি পাড়ায় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
বম সম্প্রদায়ের অপর নেতা জারলম বম জানিয়েছেন, কিছু বিপথগামী তরুণের জন্য একটি জাতিগোষ্ঠী কষ্টের মধ্যে পড়তে পারে না। জেলার বিভিন্ন এলাকার বম সম্প্রদায়ের সকল নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকের পর সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনীকে সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শিগগিরই বিপথগামী তরুণরা তাদের ভুল বুঝতে পেরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
বম সম্প্রদায়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি আত্মসমর্পণের প্রস্তাব নিয়ে একটি দল ভারত সীমান্তের কেএএনএফের গোপন আস্থানায় গিয়েছে। কেএনএফের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের জ্যৈষ্ঠ নেতৃবৃন্দের নির্দেশনা পাওয়ার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
পাহাড়ে যে বেশ কয়েকটি সশস্ত্র সংগঠন রয়েছে তাদের মধ্যে এখন আলোচিত কেএনএফ। এ সংগঠনটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন এক সময়ের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র নাথান বম। প্রথম দিকে একটি সামাজিক সংগঠন থেকে পরে এটি সশস্ত্র সংগঠনে রূপ নেয়। আলোচিত উগ্রবাদী সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার সদস্যদের অর্থের বিনিময়ে কেএনএফ পাহাড়ে গোপন আস্তানায় প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল বলে র্যাবের কাছে তথ্য ছিল।
সাম্প্রতিক অভিযানে বান্দরবানের মিয়ানমার সীমান্তের কাছ থেকে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে সাত উগ্রবাদী ও তিন কেএনএফ সদস্যকে বিপুল অস্ত্র ও সরঞ্জামসহ আটক করে।
অন্যদিকে পাহাড়ে লুকিয়ে থাকা উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসীদের ধরতে গত ১৭ অক্টোবর থেকে যৌথবাহিনীর টানা অভিযান চলছে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায়। অভিযানের কারণে পর্যটকরা যাতে সমস্যায় না পড়ে সে কারণে বান্দরবানের মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি উপজেলায় দেশী-বিদেশী পর্যটকদের যাতায়াত প্রশাসনের নির্দেশনায় বন্ধ রয়েছে।
উগ্রবাদী ও কেএনএফের সশস্ত্র সদস্যরা ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তের রাইক্ষ্যং এলাকার গভীর জঙ্গলে আত্মগোপনে রয়েছে বলে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তবে মিয়ানমার ও ভারত সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ, পাহাড়ে যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান ও স্থানীয়দের অসহযোগিতার কারণে উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসীরা অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয় বিভিন্ন মাধ্যমের খবরে জানা গেছে।
র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার মঈন সোমবার জানিয়েছেন, সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সাথে উগ্রবাদী সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা পাহাড়ে আত্মগোপন করেছে। এদের আটক করা গেলে অনেক তথ্যই উঠে আসবে।
nayadiganta