সিঙ্গাপুর থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় পড়াশোনা করে এসে ঢাকার তেজগাঁওয়ে অফিস খুলে ঘরের অঙ্গসজ্জার পরামর্শক হিসেবে কাজ করছিলেন ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূঁইয়া। কিছু ডিজাইনের প্রিন্ট বের করার জন্য ৭ মার্চ বেলা ১টার দিকে তেজগাঁওয়ের কুনিপাড়ার বাসা থেকে ফার্মগেটের উদ্দেশে বেরিয়েছিলেন। এরপর আর তাঁর খোঁজ পায়নি পরিবার। পরদিন ইমতিয়াজ নিখোঁজের কথা জানিয়ে কলাবাগান থাকায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। তখন পরিবারের পক্ষ থেকে থানা–পুলিশের কাছে দৌড়াদৌড়ি চলতে থাকলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যদিও পরদিনই মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের একটি ঝোপের ভেতর থেকে ইমতিয়াজের লাশ উদ্ধার হয়।
লাশ উদ্ধারের পর আঙুলের ছাপ মিলিয়ে পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা করে সিরাজদিখান থানার পুলিশ। তা কাজে না আসায় পরদিন (৯ মার্চ) লাশটি বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলের মাধ্যমে দাফন করা হয়। এর মধ্যে ছবিসহ লাশের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে বিভিন্ন থানায় বার্তা পাঠায় সিরাজদিখান থানা পুলিশ। কিন্তু তা আর নজরে আসেনি কলাবাগান থানার। একটি বেসরকারি টেলিভিশনে ইমতিয়াজ নিখোঁজের বিষয়ে প্রতিবেদন সম্প্রচারিত হলে ১০ দিন পর পরিবার জানতে পারে, ইমতিয়াজ মোহাম্মদ (৪৫) খুন হয়েছেন। সিরাজদিখানে যে ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার হয়েছে, তা ইমতিয়াজের।
এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ইমতিয়াজের স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘জিডির তদন্ত কর্মকর্তা সব সময় বলেছেন, তদন্ত চলছে। তিনি কী তদন্ত করেছেন, সেটি তিনিই বলতে পারবেন। স্বামী খুন হলেন, যখন জানলাম তখন তাঁর লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন হয়ে গেছে। সেই তথ্যও পুলিশ আমাদের জানাতে পারেনি।’
পুলিশের মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী সিরাজদিখান সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অজ্ঞাতপরিচয় লাশ উদ্ধারের পর স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন থানায় ছবিসহ বিস্তারিত জানিয়ে বার্তা পাঠানো হয়। বার্তা পাঠানোর পর অনেক লাশের পরিচয়ও পাওয়া যায়। তবে সব সময় সঠিকভাবে ‘সিস্টেম’ হয়তো কাজ করে না। এ ক্ষেত্রেও এমনটিই হয়তো হয়েছে।
এদিকে ইমতিয়াজ নিখোঁজের জিডির তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মহিদুল ইসলাম দাবি করেছেন, নিখোঁজের জিডি হওয়ার পর থেকে তিনি ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়েই তদন্ত করেছিলেন। তাহলে সিরাজদিখানে লাশ উদ্ধার হলেও তা নজরে এল না কেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির লাশ উদ্ধারের বিষয়ে সিরাজদিখান থানা-পুলিশের কোনো বার্তা পাওয়া যায়নি।
সিরাজদিখান থানার তথ্যমতে, ইমতিয়াজের লাশটি পাওয়া গিয়েছিল ঝোপের মধ্যে। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। মুখ থেঁতলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল খুনিরা।
ইমতিয়াজকে হত্যার অভিযোগে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে সিরাজদিখান থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। ইমতিয়াজকে কারা নিয়েছিলেন, সে বিষয়ে তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে কলাবাগান থানার উপপরিদর্শক মহিদুল ইসলাম বলেছেন, ইমতিয়াজ খুনের ঘটনায় সিরাজদিখান থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। খুনের মামলার তদন্ত তারাই করছে।
আর তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে টঙ্গিবাড়ী সিরাজদিখান সার্কেলের এএসপি মোস্তাফিজুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এই হত্যার ঘটনায় বলার মতো কোনো অগ্রগতি নেই। তবে আশা করছি, শিগগিরই এই হত্যার ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে।’
এদিকে স্বামীর লাশ ফিরে পেতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ফাহমিদা আক্তার। পুলিশের ভূমিকায় হতাশ এই নারী আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত দিন স্বামীকে খুঁজে পাওয়ার জন্য যুদ্ধ করেছি। এখন যুদ্ধ করছি তাঁর লাশ ফিরে পাওয়ার।’
যাঁরা তাঁর স্বামীকে হত্যা করেছেন, তাঁদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন ফাহমিদা।