প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার অবসরের পর বিচারকদের রায় লেখা নিয়ে দেয়া বক্তব্যের বিরোধিতা করে তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে জাতীয় সংসদে। তার বক্তব্যকে ভুল আখ্যায়িত করে এমপিরা সংবিধানে এ ধরনের কোনো আর্টিকেল নেই বলে দাবি করেছেন। এসময় আইনমন্ত্রীও এমপিদের সঙ্গে ঐক্যমত্য প্রকাশ করেন।
বিচারপতি সিনহার বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার মধ্যে মঙ্গলবার রাতে সংসদ অধিবেশনে অনির্ধারিত এ আলোচনার সূত্রপাত করেন স্বতন্ত্র এমপি ডা. রুস্তম আলী ফরাজী। এরপর একে একে বক্তব্য রাখেন- আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু।
প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিজের দায়িত্ব নেয়ার এক বছর পূর্তিতে গত ১৭ জানুয়ারি এক বাণীতে বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, অবসরে যাওয়ার পর বিচারকদের রায় লেখা ‘সংবিধান পরিপন্থী’। তার ওই বক্তব্য আসার পর থেকে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে। তার ভিত্তিতে বিএনপি বলছে, অবসরের পরে লেখা তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের রায়ও তাহলে অবৈধ।
প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের বিরোধিতা করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, অবসরে যাওয়ার পর কোনো বিচারপতির রায় লেখা অসাংবিধানিক হতে পারে না। সংবিধানের কোনো আর্টিকেলে এ কথা লেখা নাই যে বিচারপতি তার অবসর গ্রহণের পর রায় লিখতে পারবেন না। আইনমন্ত্রী বলেন, হাই কোর্ট ডিভিশনের স্টাবলিশ রুলস এ যেটা আছে, রায় যতদূর সম্ভব এজলাসে বসেই দেয়ার কথা। কিন্তু যদি এমন হয় তারা রায়টা এজলাসে দিতে পারছেন না মামলার চাপের জন্য। তাহলে অর্ডারিং পোর্শন বলার পরে এজলাসের বাইরে রায় লেখার অধিকার রাখে। এপিলেট ডিভিশন রুলস আছে। সেখানে কিন্তু একথা নাই যে এজলাসে দিতে হবে। পরিষ্কার লেখা আছে। রায় দিতে হবে- ওপেন কোর্টে অর্ডারিং পোর্শন পর্যন্ত। রায় পরে লেখা হবে। অবসরে যাওয়ার পর আর লেখা যাবে না সেটা লেখা নাই। কোনো রুলস বা আইন দ্বারা বারিত নয় বলে অবসরে যাওয়ার পরে রায় লেখা বেআইনি নয়।
আনিসুল হক বলেন, রায় দ্রুত লেখা প্রয়োজন। কারণ বিলম্বে রায়ের কারণে মামলার বাদী-বিবাদীরা ভোগান্তির শিকার হন। এ ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি নির্দেশনা দিতে পারেন যে ভবিষ্যতে তিন থেকে চার মাসের মধ্যে মামলার রায় দিতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলো তাঁর বক্তব্য ষড়যন্ত্রকারীরা লুফে নিয়েছে। যারা পেট্রলবোমা মেরে মানুষ মেরেছে, তারা বলতে শুরু করেছে অতীতের সব রায় অবৈধ। যদিও প্রধান বিচারপতি বলেছেন, তাঁর বক্তব্য অতীতের রায়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। প্রধান বিচারপতি সম্ভবত রায় লেখার কাজে বিলম্বের কারণে দুশ্চিন্তায় আছেন।
আবদুল মতিন খসরু বলেন, অবসরের পর মামলার রায় লেখার সুযোগ থাকাটা রেওয়াজ। তাঁর বক্তব্য বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। এভাবে কথা বলা তাঁর ঠিক হয়নি। একই কথা তিনি বারবার বলে যাচ্ছেন। তিনি যা ইচ্ছা তা বলতে পারেন না। তবে তাঁর বক্তব্য ভবিষ্যতের জন্য দিকনির্দেশনা হতে পারে। কারণ রায় লেখার ক্ষেত্রে একজন বিচারপতি দু’তিন মাস সময় নিতে পারেন। দেড় বছর, দু’বছর, ১৩ বছর লাগাতে পারেন না।
Next Post