ঢাকা: রাজধানী ঢাকায় আরবি ভাষায় দেয়ালে লিখে যত্রতত্র মূত্রত্যাগ বন্ধ করার একটি প্রচারণা চলছে।এই কাজটির সাথে জড়িতরা বলছেন, অভিনব এই কাজটির মাধ্যমে তারা কিছু ইতিবাচক সাড়াও পাচ্ছেন। তবে উদ্যোগটিকে অনেকেই সমর্থন করলেও এর কিছুটা সমালোচনাও করছেন কেউ কেউ।
ঢাকার রাস্তায় যে একদিন ঘোরাফেরা করেছেন, রাস্তার পাশের কোন না কোন দেয়ালে একটি সতর্কবানী হয়তো কারোই চোখ এড়াবে না, যেখানে লেখা ‘এখানে পস্রাব করবেন না’ সেইসাথে ৫০ থেকে ১০০ টাকা জরিমানা।
তবে এই সতর্কবানী কিংবা জরিমানার ভয় দিয়ে সাধারণত: কাউকেই দমিয়ে রাখা যায় না। অনেক ফুটপাথের পাশে মূত্রের দুর্গন্ধে হাটা ই কঠিন হয়ে পড়ে।
কিন্তু সতর্কবার্তার ভাষাটি পাল্টে দিয়েই এখন ভিন্ন একটি ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে।
উদ্যোগটিকে অনেকেই সমর্থন করলেও এর সমালোচনাও করছেন কেউ কেউ সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওচিত্রে ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমানকে বলতে শোনা যায়, আরবিতে দেয়াললিখন দিয়ে যত্রতত্র মূত্রত্যাগ বন্ধের একটি উদ্যোগের কথা।
“আরবি নামাজ এবং কুরানের ভাষা। ফলে আরবি ভাষায় নির্দেশনা লিখে পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার সুযোগ নেয়ার সুযোগ আমরা কেন হারাচ্ছি” এমন ভাবনা থেকে এ উদ্যোগ, বলছিলেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব চৌধুরী মোহাম্মদ বাবুল হাসান।
তবে তিনি বলেন ধর্ম মন্ত্রণালয় এক্ষেত্রে কোন অর্থায়ন করছে না।
কিন্তু ধর্মমন্ত্রী এবিষয়ে সিটি কর্পোরেশনকে পরামর্শ দিয়েছেন।
ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকার ফুটপাতের একপাশে রাস্তায় রিকশার স্ট্যান্ড এবং অপরপাশে দেয়ালে লাল অক্ষরে আরবি লেখা, যার নীচে একটি তীর চিহ্ন দিয়ে লেখা রয়েছে টয়লেট।
আরবি হরফে সতর্কবানী দিয়ে হয়তো প্রকাশ্যে মূত্রত্যাগ কিছুটা ঠেকানো গেছে। তবে এর সমালোচনাও করছেন কেউ কেউ।
ঐ দেয়াললিখনের তীরচিহ্ন ধরে কিছুটা সামনে এগুলেই একটি মসজিদ এবং সেখানে শৌচাগারও রয়েছে।
মসজিদটির ইমাম মোহাম্মদ ফজলুল করিম বলছেন, তিনি লেখাটি দেখেছেন, কিন্তু তিনি মনে করেন আরবি ভাষাটি এভাবে ব্যবহার না করাই ভালো।
“ভাষা হিসেবে এটি কোন সমস্যা নয়, তবে যেহেতু আমরা আরবি ভাষাকে সম্মান করি দেয়ালে এভাবে না লেখাটাই ভালো বলে মনে করি।”
প্রচারণার ফলে এখনো পর্যন্ত একটি বিশ্রী সমস্যা সমাধানের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে এদিকে, ব্যতিক্রমধর্মী এই উদ্যোগ নিয়ে ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও অনেকে সমালোচনা করছেন, এটিকে সাধারণ মানুষের সাথে একধরণের প্রতারণাও বলছেন কেউ কেউ।
তবে সচিব মি. হাসান বলছেন, কাজটি একটি ভালো উদ্দেশ্য নিয়েই করা হয়েছে।
কিন্তু ঢাকায় শৌচাগারেরও অভাব রয়েছে এবং মসজিদের শৌচাগার ব্যবহারের কথা বলা হলেও পানি সংকট এবং নিরাপত্তার কারণে সব মসজিদের শৌচাগারও সবসময় খোলা থাকে না।
কাজটি প্রাথমিকভাবে শুরু করেছিল বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘গ্রে’।
সংস্থাটির একজন কর্মকমর্তা নুরুর রহমান বলছিলেন, সমস্যা কিছুটা থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর সমাধান সম্ভব।
অভিনব এ উদ্যোগের সাথে জড়িতরা বলছেন, এটি যদি ছড়িয়ে দেয়া যায় তবে হয়তো প্রকাশ্যে মূত্রত্যাগের ঘটনা আরো অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। সেটি হয়তো সময়ই বলে দেবে।
কিন্তু প্রচারণার ফলে অন্তত এখনো পর্যন্ত একটি বিশ্রী সমস্যা সমাধানের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।