সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের রক্ত ও ভারতের মানুষের রক্ত এক হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে। ভারত আমাদের প্রতিবেশী। অনেক কিছু নিয়ে আমাদের বিরোধ থাকতে পারে, মতপার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু ইতিহাসকে অস্বীকার করা যাবে না।
‘এদেশের মাটিতে কখনই যুদ্ধাপরাধীদের কবর হতে পারে না’ বলেও একই সঙ্গে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের এদেশে কবর দেওয়ার পক্ষপাতি আমি নই। কারণ তারা শুধু মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে তা নয়। তারা কাজ করেছে দেশের বিরুদ্ধে।
বুধবার সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী নাট্যোৎসবের উদ্বোধকের বক্তব্যে এসব কথা বলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
দেশে ও দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন উন্নয়নের মধ্যে বসে থাকি তখন উন্নয়নকে অনুভব করতে পারি না। দেশের এই উন্নয়নকে যারা পেছন থেকে টেনে ধরতে চায় সেই শক্তিকে কোনোভাবেই এই সুযোগ দেওয়া যাবে না। কারণ এরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি নয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আছে বলেই গত কাল ২৮ তারিখ আমরা নাট্যোৎসব করতে পারছি। যদি না থাকতো, আর কিছু না হোক আমরা সংস্কৃতিচর্চা করতে পারতাম না।’
‘মিলি মৈত্রী বন্ধনে গড়ি সংস্কৃতির সেতু’ স্লোগানকে সামনে রেখে আট দিনব্যাপী এই নাট্যোৎসবের আয়োজন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে এই উৎসব আয়োজনে সহযোগিতা করছে ভারতীয় হাইকমিশন। উৎসবে অংশগ্রহণ করছে দুই বাংলার ১০টি নাট্যদল।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচারক লিয়াকত আলী লাকী, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্য দেন নাট্যকলা বিভাগের সভাপতি শাহরিয়ার হোসেন এবং উৎসব সম্পর্কে বক্তব্য দেন উৎসবের আহ্বায়ক আরিফ হায়দার।
মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের, মুুক্তিযোদ্ধাদের যেমন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বরণ করার পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের কখনও ক্ষমা করা যাবে না বলেও উল্লেখ করে উদ্বোধকের বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষের রক্ত ও ভারতের মানুষের রক্ত এক হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে। ভারত আমাদের প্রতিবেশী। অনেক কিছু নিয়ে আমাদের বিরোধ থাকতে পারে, মতপার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু ইতিহাসকে অস্বীকার করা যাবে না।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পঙ্কজ শরণ বলেন, এই নাট্যোৎসব শুধু নাটকের উৎসব নয়। এই উৎসব ভ্রাতৃত্বের, মানবতার এবং বন্ধুত্বের। ভবিষ্যতে আমরা এই ধরনের উৎসব আরও আয়োজন করতে চাই।
এর আগে বিকেল ৫টায় নাট্যকলা বিভাগের সামনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে উৎসবের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে মন্ত্রীকে স্বাগত জানান। এ সময় সেখানে অন্যান্য অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
বুধবার থেকে শুরু হওয়া এ নাট্য উৎসব চলবে আগামী ৪ নভেম্বর পর্যন্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে আট দিনে ১০টি নাটক মঞ্চস্থ করবে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যদল, ঢাকা মহানগরের দুটি নাট্যদল এবং ভারতের তিনটি নাট্যদল।
উৎসবের প্রথমদিনে সন্ধ্যায় মঞ্চায়িত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের প্রযোজনা ‘টিনের তলোয়ার’। বাংলা নাটকের রঙ্গালয়ের শতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘টিনের তলোয়র’ নাটকটি রচনা করেছেন নাট্যকার উৎপল দত্ত। নাট্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মীর মেহবুব আলমের নির্দেশনায় নাটকটিতে বিভিন্ন বর্ষের প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী অভিনয় করেন।
এদিকে উৎসবের উদ্বোধনের পরই ১৪ বছর ধরে বন্ধ থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসির উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। তবে টিএসসিসির নির্মাণ কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই এ উদ্বোধনের আয়োজন করা হয়।