প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কে বিঘ্ন সৃষ্টি এমনকি ক্ষতিগ্রস্ত করার এক মিশনে অবতীর্ণ হয়েছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। গত সপ্তাহে বাংলাদেশে পিআইএ’র ফ্লাইট চলাচল স্থগিত করা হয়েছে। সে দেশটিতে অবস্থানরত পিআইএ’র কর্মকর্তার বাসভবনে দৃশ্যত সবচেয়ে খোঁড়া অজুহাতে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ অভিযান পরিচালনার পর ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। চলতি মাসের গোড়ার দিকে ঢাকায় একজন পাকিস্তানি কূটনীতিককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা এবং তাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশের ভিসা সংগ্রহ করা পাকিস্তানিদের জন্য ক্রমাগতভাবে জটিল হয়ে পড়েছে। হাসিনা ওয়াজেদের সরকার অভিযোগ তুলেছে যে, পাকিস্তান বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার উনুনের আগুনে কাঠ দিচ্ছে এবং জঙ্গিবাদে মদত দিচ্ছে। কর্মকর্তারা এখানে যদিও দৃঢ়তার সঙ্গে এসব অভিযোগ নাকচ করছেন, যদিও তারা বাংলাদেশ নাটকে কিছু যোগ করা এবং যা কেবলই অস্বস্তিকর বিষয় তাকে বড় রকমের ভয়ানক ঘটনায় পরিণত করার সুযোগ গ্রহণ করা থেকে তারা বোধগম্য কারণেই এড়িয়ে যাচ্ছে।
বর্তমানে পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্ককে বিপরীতমুখী একটি রূপ দিতে শেখ হাসিনাকেই মূল চালিকা শক্তি বলে মনে হচ্ছে। তবে ঠিক এই মুহূর্তে পাকিস্তানের প্রতি বৈরী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর জন্য তাঁকে ঠিক কি ধরনের ঘটনা অনুপ্রাণিত করছে তা পুরোপুরি পরিষ্কার নয়।
এর একটি আংশিক ব্যাখ্যা হলো অভ্যন্তরীণ রাজনীতি- যা রাজনীতিতে প্রায় সর্বদাই ঘটে থাকে। আওয়ামী লীগ সরকার বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপির সঙ্গে আবারও এক তিক্ত লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছে। শেখ হাসিনার এক বছর বয়সী সরকারের বিরুদ্ধে বেগম জিয়ার দল রাজপথের লড়াইয়ে যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন, তার পরিষ্কার অর্থ হলো আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা।
অবশ্যই, বাংলাদেশের উভয় পক্ষের জন্য ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক যুদ্ধে অতি বেশি দেশপ্রেম, জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম ইসলামী শক্তি- এসব বিষয় বেশ খেলানো হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে পাকিস্তানকে প্রায়শ টেনে আনা হয়। তার কারণ ষাটের দশকের শেষ এবং সত্তরের দশকের গোড়ার দিকের বিয়োগান্তক ও ভয়ঙ্কর ঘটনাবলীর জন্য। কিন্তু এটা প্রতীয়মান হয় যে, এরকম একটি সময়ে পাকিস্তানকে একটি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করতে প্রধানমন্ত্রী হয়তো ভুল মূল্যায়ন করেছেন কিংবা নিতান্তই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
এটা নিশ্চিত বলা যায় যে, রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের যদি পাকিস্তানের হস্তক্ষেপের বিষয়ে কোন বৈধ উদ্বেগ থেকে থাকে, তাহলে সেই সমস্যা মোকাবিলা করার ভিন্ন পথ রয়েছে। অবশ্য সে ধরনের উদ্বেগের দ্বিমুখী রাস্তাও থাকবে।
বহু বছরের গতি-প্রকৃতি বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, বাংলাদেশের প্রায় সকল রাজনীতিবিদ প্রায় অবিরতভাবে এই অভিযোগের সুর তুলেছেন যে, পাকিস্তানি নিরাপত্তা সংস্থাগুলো বাংলাদেশ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে থাকে।
ওদিকে পাকিস্তানে, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের উত্তম আঞ্চলিক সম্পর্কের বিষয়ে ভারতের ভূমিকাকে দীর্ঘকাল ধরে সন্দেহের চোখে দেখা হয়। উভয় দিকের বৈধ উদ্বেগসমূহ প্রশমনে নিশ্চয় পদক্ষেপ নেয়া দরকার। তবে বাংলাদেশের দ্বারা সৃষ্ট বর্তমান বৈরী পরিবেশের মধ্যে তা মিটিয়ে ফেলার মতো নয়।
পাকিস্তানের দৈনিক ডন-এ গতকাল প্রকাশিত সম্পাদকীয় তরজমা।