বাঙালির অশ্রু ঝরার দিন আজ

0

bangabandhu_308311আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস। বাঙালির অশ্রু ঝরার দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিন বাঙালি জাতির ইতিহাসে কলংক লেপন করেছিল সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী উচ্ছৃঙ্খল সদস্য। ঘাতকের নির্মম বুলেটে সেদিন ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের ঐতিহাসিক ভবনে শাহাদতবরণ করেছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের চার দশক পূর্ণ হচ্ছে আজ। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা জাতির পিতাকে হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করে তার স্বপ্ন দেশকে ‘সোনার বাংলা’য় পরিণত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। বিরোধী দলের নেত্রী রওশন এরশাদ এ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন।১৫ আগস্ট কালরাতে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী মহীয়সী নারী বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল ও তাদের স্ত্রীদ্বয় যথাক্রমে সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর শিশুপুত্র শেখ রাসেল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসেরসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের ২৮ সদস্য। একই দিন ঘাতকের নির্মম বুলেটে প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মনি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, শহীদ সেরনিয়াবাত, শিশু সুকান্ত বাবু, আরিফ, রিন্টু প্রমুখ। ঘাতকরা সেদিন বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়িতে আক্রমণ করে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সব সদস্যকেই হত্যা করে। কিন্তু দেশে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা। ঘাতকরা সেদিন বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের সদস্যদেরই কেবল হত্যা করেনি, বাঙালি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দুকে নস্যাৎ করতে চেয়েছিল। ৪০ বছর আগের সেই শোকাবহ দুঃসহ স্মৃতি আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

 আজ সরকারি ছুটি। ৪০ বছরের অধিকাংশ সময়ই দিনটি ছিল রাষ্ট্রীয়ভাবে চরম অবহেলার শিকার। এর মধ্যে মাত্র ১৩টি বছর দিনটি সরকারিভাবে শোক দিবস হিসেবে পালিত হয়েছে। আজ জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। সরকারি ও বেসরকারি ভবনে উড়বে কালো পতাকা। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথম শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এরপর ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এসে সে সিদ্ধান্ত বাতিল করে। তবে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে আবারও ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।
 বাঙালি জাতির ইতিহাসে অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু এদেশের স্বাধীনতার স্থপতিই ছিলেন না, ভাষা আন্দোলন, ৬ দফা আন্দোলনসহ প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামেই তার ভূমিকা ছিল ঐতিহাসিক। এই মহানায়কের জন্ম না হলে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারত না। যারা এ মহানায়ককে হত্যা করেছিল, আজকের এই দিনে জাতি ঘৃণাভরে তাদের প্রত্যাখ্যান করছে।
 ২০১১ সালের জানুয়ারিতে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে পঞ্চমবারের মতো জাতীয় শোক দিবস পালিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন বাংলাদেশ আজ তার খুনিদের পদচারণামুক্ত। ইতিমধ্যে স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের মধ্য থেকে দু’জনের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। কিছুটা হলেও কলংক থেকে মুক্ত হয়েছে জাতি।
 বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় এবং ভাবগম্ভীর পরিবেশে দেশব্যাপী পালনে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
 আজকের কর্মসূচি : আজ জাতীয় শোক দিবসে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনগুলোয় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোয়ও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে এবং আয়োজন করা হবে আলোচনা সভার। সকাল পৌনে ৭টায় ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন এবং সশস্ত্র বাহিনী গার্ড অব অনার প্রদান করবে। এ সময় বিশেষ মোনাজাত করা হবে। এরপর সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। দলের নেতারা সকাল ১০টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে ফাতেহা পাঠ এবং পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাদ জোহর দেশের মসজিদগুলোতে মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন রয়েছে। দুপুরে অসচ্ছল ও দুস্থ মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করা হবে। এছাড়া বাদ আসর বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
 জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সারা দেশের মন্দির, গির্জা ও অন্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ এবং বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। এছাড়া পোস্টার, সচিত্র বাংলাদেশের বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ ও বিতরণ এবং বঙ্গবন্ধুর ওপর ‘চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু’ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে।
 জেলা ও উপজেলা প্রশাসন যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের জন্য আলোচনা সভা এবং মিলাদ মাহফিলসহ জাতীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিজ নিজ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠন ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
 জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও সাংবাদিক সমাজ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সম্মেলন কক্ষে সর্বধর্ম প্রার্থনা সভার আয়োজন করেছে। বেলা সাড়ে ১০টায় এ প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আগামীকাল বিকাল চারটায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা। এছাড়াও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
 আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের আহ্বান : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জাতীয় শোক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সংস্থাগুলোর সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের সব জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ সব শাখার নেতৃবৃন্দকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে দিবসটি পালন করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
 টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী : গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে আজ টুঙ্গিপাড়ায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোক দিবসের কর্মসূচি সফল করতে ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে সমাধি সৌধ কমপ্লেক্স ও আশপাশ এলাকা।
 প্রধানমন্ত্রী ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছে সকাল ১০টায় জাতির জনকের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। পরে ফাতেহা পাঠ, কবর জিয়ারত ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেবেন। এ সময় তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল জাতির পিতাকে রাষ্ট্রীয় সালাম এবং প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করবে। বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু সমাধি সৌধ কমপ্লেক্স মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে মিলাদ মাহফিল।
 জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসকে সামনে রেখে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সের সৌন্দর্য বর্ধন, ধোয়ামোছা ও মিলাদ মাহফিলের স্থান পরিপাটি করার কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। জেলার বিভিন্ন রাস্তাঘাটে নির্মাণ করা হয়েছে কালো তোরণ। বিভিন্ন স্থানে কালো পতাকা দিয়ে শোকের আবহ সৃষ্টি করা হয়েছে।
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More