ঢাকায় ছয় তলা থেকে ফেলে দেয়ার পরও বিস্ময়করভাবে বেঁচে গিয়েছিল যে নবজাতকটি, মঙ্গলবার রাতে তার রক্তচাপ বেশ কমে যাওয়ায় চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। অবশ্য রক্তচাপ বাড়ানোর ঔষধ দেবার পর তার অবস্থা এখন স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানাচ্ছেন মগবাজারের আদ-দ্বীন হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক এসএম জাবরুল হক। তিন দিন বয়েসী এই ছেলে শিশুটিকে এখন বেবি অফ আদ-দ্বীন নামে ডাকা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের কর্মকর্তারা। বেইলি রোডের একটি ভবনের ছয় তলার ফ্ল্যাট থেকে গত সোমবার দুপুরে সদ্যজাত এই শিশুটিকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল তার কুমারী মা। নিচে এক দোকানের ছাদে পড়ার পর দোকানীরাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় ও পুলিশে খবর দেয়।
মেয়েটির বরাত দিয়ে পুলিশ জানাচ্ছে, ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিল কিশোরী মেয়েটি এবং সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়া এড়াতেই ছেলেটিকে সে ছুড়ে ফেলেছিল। মেয়েটি ওই ফ্ল্যাটটিতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করত। কয়েকমাস আগে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গেলে তার এক আত্মীয় তাকে ধর্ষণ করেছিল বলে সে জানিয়েছে। তাকে এখন পুলিশী হেফাজতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তার শরীরের অবস্থাও বেশী ভাল নয় বলে জানা যাচ্ছে। তার থেমে থেমে রক্তক্ষরণ হচ্ছে এবং ভাল হতে আরো কয়েকদিন লাগবে বলে জানিয়েছেন রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান।
এদিকে, আদ-দ্বীন হাসপাতালের ডা. জাবরুল হক জানাচ্ছেন, শিশুটির ডান পায়ের হাড় ভেঙে গেলেও সেটা খুব তাড়াতাড়ি জোড়া লেগে যাবে বলে তাদের বিশ্বাস। তবে নতুন পরীক্ষা নিরীক্ষায় তার মাথার হাড়ে ফ্র্যাকচার পাওয়া গেছে। মাথার বহিরাংশ থেকে রক্তক্ষরণও হচ্ছে। ডা. হক বলছেন, ‘আমরা পরীক্ষা করে দেখছি। আশা করি ঠিক হয়ে যাবে। তবে ব্রেন টিস্যুতে ক্ষতি হলে ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে। তবে ডা. হক আরো বলছেন, এত কিছুর পরও শিশুটির কর্মকাণ্ড এখন স্বাভাবিক নবজাতকের মতোই এবং বোঝার উপায় নেই যে সে এত বড় একটি দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে এসেছে। সে এখন আর তেমন কান্নাকাটিও করছে না।
পরিস্থিতি এরকম থাকলে আগামী সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হবে উল্লেখ করে ডা. হক বলেন, তার পায়ের হাড় পুরোপুরি জোড়া লাগতে দু-তিনমাস সময় লাগবে। আর এক বছর পর বোঝাই যাবে না তার পায়ে কিছু হয়েছিল।