ব্যয়ের ১৯ শতাংশই যাবে ভ্যাট ও অন্যান্য চার্জে

0

সরকারি ব্যবস্থাপনায় একজন হজযাত্রীর মোট ব্যয়ের ১৯ শতাংশই যাবে ভ্যাট ও বিভিন্ন চার্জের পেছনে। টাকার অঙ্কে এটি ১ লাখ ২৭ হাজার। এর মধ্যে ৬২ হাজার টাকার বেশি বাংলাদেশের ভ্যাট ও বিভিন্ন চার্জে। বাকি প্রায় ৬৫ হাজার টাকা সৌদি আরবে ভ্যাট ও বিভিন্ন চার্জে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবার হজের প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা।

অন্যদিকে বেসরকারি প্যাকেজে ভ্যাট ও অন্যান্য চার্জে ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ব্যয় হবে। এটা হজযাত্রীর মোট ব্যয়ের ২০ শতাংশ। ভ্যাট ও অনান্য চার্জের মধ্যে বাংলাদেশে ব্যয় হবে ৭১ হাজার টাকা। বাকি প্রায় ৬২ হাজার টাকা ব্যয় হবে সৌদিতে।

এবার বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। তবে ভ্যাট ও চার্জের অংশ বাদ দিলে সরকারি প্যাকেজের আকার নেমে আসবে ৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকায়। বেসরকারি প্যাকেজের আকার নেমে আসবে প্রায় ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকায়।

হজ এজেন্সিজ অব বাংলাদেশ (হাব) সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী যুগান্তরকে বলেন, সৌদি সরকার রাজস্ব বাড়াতে সব ধরনের পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করেছে। এটি তাদের রাষ্ট্রীয় আইন। তবে হজ ও ওমরাহ গমনেচ্ছুদের জন্য আলাদা কোনো ভ্যাট আরোপ করা হয়নি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার ভ্যাট কমানোর জন্য সৌদি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। গত বছরের তুলনায় সৌদি আরবে হজের খরচ তেমন একটা বাড়েনি। তবে বিমান ভাড়া অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি এবং ডলার ও সৌদি মুদ্রা রিয়ালের দাম বাড়ায় খরচ বেড়ে গেছে। মোট হাজির ৫০ শতাংশ যাত্রী বহন করবে বিমান বাংলাদেশ। চলতি মৌসুমে সরকারি বিমান সংস্থা অতিরিক্ত ভাড়া নির্ধারণ করেছে। যে কারণে প্যাকেজের খরচও বেড়ে গেছে। আমরা (হাব) হাজিদের কল্যাণে বিমান ভাড়া কমানোর জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছি। সরকার ভাড়া না কমালে সৌদিসহ অন্যান্য বিমান সংস্থা ভাড়া কমাবে না। গত হজ মৌসুমে বিমান বাংলাদেশ কয়েকশ কোটি টাকা লাভ করেছে। এবারও তারা একই নীতি অবলম্বন করেছে। এটা ঠিক নয়। যেহেতু মোট হাজির ৫০ শতাংশ বহন করবে সৌদি আরবসহ অন্যান্য বিদেশি বিমান সংস্থা। এতে তাদের অনেক মুনাফা হবে। ফলে দেশের টাকা বিদেশে চলে যাবে।

হাবের এক কর্মকর্তা জানান, সরকারি বিমান সংস্থা অতিরিক্ত মুনাফা করার জন্য এবারের হজ প্যাকেজে অনেক বেশি ভাড়া নির্ধারণ করেছে। গত বছরের চেয়ে ৩০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে ১ লাখ ৯৭ হাজার টাকা করেছে। সরকার চাইলে সৌদি আরবের সঙ্গে আলোচনা করে হজ যাত্রীদের জন্য সব বিমান সংস্থা উন্মুক্ত করে দিতে পারে। এতে যাত্রী বহনে প্রতিযোগিতা হবে। যে কারণে খরচও কমে আসবে।

জানা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মার্কিন ডলার এবং জ্বালানির দাম বাড়ায় হজ প্যাকেজের খরচও অনেক বেড়েছে। এই ব্যয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবে বড় অঙ্কের ভ্যাট পরিশোধ করতে হচ্ছে হজ যাত্রীদের। প্যাকেজের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় প্রাক নিবন্ধন করে অনেকেই হজে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। হজ প্যাকেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি মৌসুমে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে ইচ্ছুক প্রত্যেক যাত্রীর সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য খরচ বাবদ ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৭৩৪ টাকা পরিশোধ করতে হবে।

মোট প্যাকেজের ১৫ শতাংশ ভ্যাট পরিশোধ করতে ব্যয় হবে ৬৫ হাজার টাকা। বিমান ভাড়ায় ভ্যাটসহ অন্যান্য চার্জে খরচ হবে প্রায় ৬২ হাজার টাকা। একইভাবে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট প্যাকেজের ১৫ শতাংশ ভ্যাট পরিশোধ করতে ব্যয় হবে প্রায় ৬২ হাজার টাকা। বিমান ভাড়ায় ভ্যাটসহ অন্যান্য চার্জে খরচ হবে প্রায় ৭১ হাজার টাকা।

এদিকে চলতি মৌসুমে বিমান ভাড়া প্রায় ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হলেও নিট ভাড়া ও কোন খাতে কত ব্যয় হবে তা প্যাকেজে উল্লেখ করেনি সরকারি বিমান সংস্থা। অথচ গত বছর ব্যয়ের বিস্তারিত খাত উল্লেখ করে প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে নিট বিমান ভাড়া ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। এর সঙ্গে এজেন্ট কমিশন, এম্বারকেশন ফি, আবগারি শুল্ক, বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি, যাত্রী সুরক্ষা ফি, হজ টার্মিনাল সার্ভিস চার্জ, সৌদি আরবে বিমানবন্দর বিল্ডিং চার্জ, সুরক্ষা চার্জ খাতে ব্যয় হিসাবে ভ্যাট ও অন্যান্য চার্জে ব্যয় হবে ১০ হাজার টাকার বেশি।

এছাড়া বেসরকারি হজ ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজে দেখা যায়, প্রত্যেক হজ যাত্রীর আইডি কার্ড ও ল্যাগেজ ট্যাগ বাবদ ৮০০ টাকা, কল্যাণ তহবিল বাবদ ২০০ টাকা, প্রশিক্ষণ ফি ৩০০ টাকা, খাওয়া খরচ ৩৫ হাজার টাকা, হজ গাইড বাবদ প্রায় ১৫ হাজার টাকা, মোনাজ্জেম বাবদ সাড়ে ৬ হাজার টাকা, সার্ভিস চার্জ বাবদ সাড়ে ৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই হিসাবে প্রত্যেক হাজিকে হজে যেতে বিমান ভাড়ার ভ্যাটসহ অন্যান্য খরচ বাবদ বাংলাদেশে পরিশোধ করতে হবে প্রায় ৬২ হাজার টাকা।

সংশ্লিষ্টদের অভিমত, এবার সরকারি ও বেসরকারি প্যাকেজে হজে যেতে ইচ্ছুকদের দুদেশে ভ্যাট ও অন্যান্য চার্জে মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় করতে হবে। এমনিতেই হজের ব্যয় অনেক বেড়েছে; তার সঙ্গে এত বড় অঙ্কের টাকা বহন করা হাজিদের কষ্টসাধ্য হবে। অথচ সরকার চাইলে দুদেশ আলোচনা করে এই খরচ মওকুফ অথবা অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারে।

সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে হজের খরচ ছিল সর্বনিম্ন ১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। ২০১৫ সালে তা বেড়ে হয় ২ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। ২০১৭ সালে আরও বেড়ে হয় ৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা। ২০১৯ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। ২০২০ সালে খরচ হয় ৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা। গত মৌসুমে খরচ লেগেছে গড়ে ৫ লাখ টাকার বেশি। এর বাইরেও হজযাত্রীদের নানা খরচ আছে। একটু আয়েশিভাবে হজ করতে চাইলে খরচ আরও বেশি লাগবে। গত বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজে-১-তে সর্বোচ্চ ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা লেগেছে। চলতি মৌসুমে এই খরচ বেড়ে হয়েছে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা। কুরবানি ও ব্যক্তিগত খরচ হিসাব করলে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা খরচ হবে।

jugantor

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More