ভরা মৌসুমে কোটি টাকার বাণিজ্যে প্রকাশনী!!

0

bookপীরগঞ্জে সাড়ে ৪ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে টার্গেট করে কোটি টাকার বাণিজ্য করতে বেশ কিছু প্রকাশনী মাঠে নেমেছে। ইতিমধ্যে দু’শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আর্থিক চুক্তিও সম্পন্ন করে শিক্ষার্থীদের হাতে নিষিদ্ধ গাইড ও সহায়ক বইয়ের তালিকা ধরিয়ে দিয়েছে প্রকাশনী ও প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রকাশনীগুলোর ভরা মৌসুমকে কাজে লাগাতে অবিরাম ছুটছে বিক্রয় প্রতিনিধিরা।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার নতুন বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বোর্ডের পাঠ্যবই তুলে দিয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ক্লাসে ইংরেজি ও বাংলা ২য় পত্র এবং সহায়ক বইয়েরও প্রয়োজন হয়। প্রতিষ্ঠান থেকে তালিকা না দেয়ায় শিক্ষার্থীরা বই ক্রয় করেনি। কারণ প্রকাশনীগুলোর সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিয়ে দরকষাকষি চলছে। ইতিমধ্যেই দু’শতাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রকাশনীর বই চালানোর শর্ত সম্পন্ন হওয়ায় উল্লেখিত বই বাজারজাত করা হয়েছে। ভরা মৌসুমকে কাজে লাগাতে প্রকাশনীগুলোর বিক্রয় প্রতিনিধিরা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে তাদের বই চালাতে দরকষাকষি করে নিষিদ্ধ গাইড বই বিক্রির প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে প্রকাশকরা। উপজেলাব্যাপী এ বাণিজ্যের পরিমাণ কোটি টাকার বেশি হবে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে, গাইড নির্ভরশীলতার ফলে সরকারের সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা মনে করছেন।
উপজেলা পরিসংখ্যান অফিস সূত্রে জানা গেছে, পীরগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ৬৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩৮টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৫৫টি মাদরাসা, এবতেদায়ী মাদরাসা, ২২৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৩১টি কেজি স্কুল রয়েছে। ওইসব প্রতিষ্ঠানের অর্ধ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীকে টার্গেট করে প্রাইম, জুপিটার, নিউটন, পাঞ্জেরী, ক্যাপিটাল, স্কলার, গ্লোবাল, নব পুথিঘর, আল ফাতাহ, আল বারাকা, লেকচার, গ্যালাক্সি, অনুপম, নবদূতসহ অর্ধশতাধিক প্রকাশনী ব্যাপক ভিত্তিতে প্রথম শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত গাইড বই প্রকাশ করছে। এছাড়াও বাংলা ব্যাকরণ, ইংরেজি গ্রামার ও এসএসসি টেস্ট পেপারসহ স্ব স্ব বিভাগের শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক ও সুপারদের সঙ্গে ডোনেশনের নামে চলছে আর্থিক চুক্তি। স্কুলের ছাত্রসংখ্যার ভিত্তিতে এ ডোনেশন নির্ধারণ করা হচ্ছে। শুধু ডোনেশন নয়, তার সঙ্গে সারা বছরের সকল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফ্রি দেয়ারও চুক্তি হচ্ছে। কেজি স্কুলের একটি বইয়ের মূল্য যেখানে ৩০/৩৫ টাকা, সে বই বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২৫ টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা সদরের এক বই বিক্রেতা জানান, যে গাইড বইয়ের দাম ৬৫০-৭০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে বাস্তবে তার মূল্য ২০০-২৫০ টাকা। প্রকাশনীর কাছ থেকে গাইড বই প্রতি ২০-২৫ ভাগ কমিশন নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রকাশকরা বই প্রতি দুই থেকে তিনগুণ দাম বেশি ধার্য করেছে। বাড়তি টাকা অভিভাবকদের পকেট থেকে কোম্পানিগুলো হাতিয়ে নিচ্ছে।
একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, শিক্ষকরা আন্তরিক হলে ছাত্র-ছাত্রীদের গাইড বইয়ের প্রয়োজন পড়ে না।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলহাজ্ব মাহাতাব হোসেন জানান, কোন বিদ্যালয়ে যেন গাইড বইয়ের ব্যবহার না হয় সেজন্য তিনি ইতিমধ্যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অবহিত করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষকরা জানিয়েছেন, এক শ্রেণীর প্রকাশনী ও প্রধান শিক্ষকরা শিক্ষাকে বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে নিয়েছে। ফলে বইয়ের মান বিচার না করে প্রকাশনীর কাছ থেকে বিদ্যালয়গুলো মোটা অংকের টাকা নিয়ে নিম্নমানের বই শিক্ষার্থীদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের মেধা নিম্নমুখী হতে বসেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মাজহারুল ইসলাম বলেন, আগামী প্রজন্মকে রক্ষায় আমরা গাইড ও নোট বই বিক্রি বন্ধের ব্যবস্থা নিচ্ছি। ইতিমধ্যেই লাইব্রেরিগুলোকে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More