প্রায় সাড়ে চার মাস আগে পাচারের শিকার হয়ে ভারতের মুম্বাইয়ে আটক ছিলেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ২৮ বছর বয়সী এক নারী। পাচারের সময় তাঁর চার বছর বয়সী শিশুও ছিল। মুম্বাইয়ের ওই বাসায় তাঁকে যৌনবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়। গত সপ্তাহে ওই বাসা থেকে নিজের শিশুসহ পালাতে সমর্থ হন তিনি। গত বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে দেশে প্রবেশ করেন ওই নারী। দেশে ফিরে তিনি জানান, যে ভবনে তিনি ছিলেন সেখানে ৩০ জনেরও বেশি নারী আছে যারা বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে। এসব নারীরা অবর্ণনীয় কষ্টে বন্দী অবস্থায় আছে বলে তিনি জানেন। এসব নারীদের পতিতাবৃত্তি করতে বাধ্য করা হয়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মেয়েদের বাঁচান, দয়া করে।’ ওই নারী জানান, আট বছর আগে সদর উপজেলার মামুন হোসেন নামের একজনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তবে তিন মাসের মাথায় তথ্য গোপন করে মামুন আরো একটি বিয়ে করে। দুই বছর আগে মামুন চলে যান মালয়েশিয়ায়। এরপর আর বাড়ি ফেরেননি তিনি। পাচারের শিকার নারী জানান, এ বছরই পাশের পাঁচরকি গ্রামের শহীদ তাঁকে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখায়। পরে আনার, বাবলু, টুকু ও মহররম নামের চার যুবক শহীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে তাঁকে সাড়ে চার মাস আগে বৈকারী সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে পাচার করে দেয়। এরপর তাঁকে ট্রেনে উঠিয়ে নামানো হয় মুম্বাইয়ের টুরপা স্টেশনে। তিনি জানান, ওই শহরের এক বাসায় নিয়ে লিলি নামের এক নারীর কাছে তাঁকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। ওই বাড়িতে আরো ৩০ জনেরও বেশি বাংলাদেশি নারী আছেন। ‘পাচারকারী বাবলু কয়েকদিন পরপর লিলির কাছ থেকে এসে টাকা নিয়ে যেত। তাঁর শিশুকে তাঁর কাছে থাকতে দিত না।’ ওই নারী বলেন, ‘মুম্বাইয়ের যৌনপল্লীতে বাংলাদেশের অনেক নারীর চোখের জল কিছুতেই শুকাচ্ছে না। এতটুকু প্রতিবাদ করার সাহস ও সুযোগ নেই এসব মেয়ের। সেখান থেকে পালাতেও পারছে না তারা।’ তাঁকে ওই বাসা থেকে পালাতে সাহায্য করেছে যশোরের বেনাপোলের এক নারী। ভোরে বাইরে থেকে বন্ধ করে রাখা তালা কেটে তিনি বের হয়ে আসেন। পরে শফিকুল ইসলাম নামের বাংলাদেশের এক যুবকের সহায়তায় তিনদিন আগে পৌঁছান সাতক্ষীরায় নিজ বাড়িতে। এ ব্যাপারে আজ রোববার শহীদ, মহররম, টুকু, আনার ও বাবলুসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরার আদালতে মামলা করেছেন ওই নারী।