সিএনজি অটোরিকশায় বর্ধিত ভাড়া রোববার থেকে কার্যকর কর হয়েছে। তবে অতিরিক্ত ভাড়া নিলে লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলে কঠোর হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
রোববার দুপুরে মানিক মিয়া এভিনিউ’র রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে বিআরটিএ পরিচালিত চলমান মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘সিএনজি অটোরিকশা মিটারে চলছে কি না তা দেখতে ইতোমধ্যে চালক, মালিক, বিআরটিএ ও ট্রাফিক পুলিশের সমন্বয়ে মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। এ টিম কাজ শুরু করেছে। এ ছাড়া রাস্তায় বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবে। যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়ামাত্র প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
রোববার দুপুর ১টা পর্যন্ত বিআরটিএ ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ১০টি মামলা, ৮ হাজার ৫শ’ টাকা জরিমানা এবং তিনটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়েছে।
এ সময় মন্ত্রী কয়েকটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা থামিয়ে চালক ও যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানান, মিটারের নিয়ম মেনেই চলছেন চালকরা। যাত্রীরাও এতে সন্তুষ্ট। এদিকে ৬টি স্পটে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালতের পাশাপাশি ঢাকা জেলা প্রশাসন পরিচালনা করছে আরও ৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালত। তাছাড়া চালক, মালিক, বিআরটিএ ও ট্রাফিক পুলিশের সমন্বয়ে মনিটরিং টিমও কাজ করছে।
এ সময় মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতেই এ অভিযান। এ অভিযান শুধু একদিনের জন্য নয়, প্রতিদিন চলবে।’
প্রাইভেট নাম দিয়ে মিটার ছাড়াই সিএনজি চালিত অটোরিকশার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী বলেন, গত কয়েকদিনে এক থেকে দেড়শ’ প্রাইভেট সিএনজি চালিত অটোরিকশাকে এ অভিযোগে ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়েছে।’
ওবায়দুল কাদের সিএনজি চালিত অটোরিকশার অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে বিআরটিএ’র ৪টি নম্বরও উল্লেখ করেন। নম্বরগুলো হচ্ছে- ৯১১৩১৩৩, ৫৮১৫৪৭০১, ৯১১৫৫৪৪, ৯০০৭৫৭৪। অফিস চলাকালীন সময়ে এসব নম্বরে ফোন করে যে কেউ অভিযোগ দিতে পারবেন।
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, নতুন ভাড়ায় প্রথম দুই কিলোমিটার ৪০ টাকা। পরবর্তী প্রতিকিলোমিটার ভাড়া হবে ১২ টাকা ও ওয়েটিং চার্জ (যানজট বা অন্য কোন কারণে থামলে) মিনিটপ্রতি ২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া ছিল ২৫ টাকা, পরবর্তী প্রতি কিলোমিটার ৭ টাকা ৬৪ পয়সা ও ওয়েটিং চার্জ ১ টাকা ৪০ পয়সা।
এছাড়া অটোরিকশা মালিকদের দৈনিক জমা ৬০০ টাকার পরিবর্তে ৯০০ টাকা করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরীতে বাণিজ্যিকভাবে চলাচলরত ১৩ হাজার অটোরিকশায় সরকার নির্ধারিত এই বর্ধিত ভাড়া আজ রোববার থেকে আদায় করতে পারবে। তবে চট্টগ্রাম মহানগরী আগামী ১ জানুয়ারি থেকে এই বর্ধিত ভাড়া কার্যকর হবে বলে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্র জানায়।
জানা গেছে, গত ১ সেপ্টেম্বর রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) প্রতি ঘনমিটারে দাম ৫ টাকা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ সেপ্টেম্বর সিএনজি চালিত বাস, মিনিবাস ও অটোরিকশার ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করা হয়। এ-সংক্রান্ত গেজেট জারি করা হয় গত ১৬ সেপ্টেম্বর।
গত ১ অক্টোবর থেকে রাজধানী ও চট্টগ্রাম মহানগরীসহ ঢাকার আশপাশের জেলা নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী ও গাজীপুরের বাস-মিনিবাসের বর্ধিত ভাড়া কার্যকর করা হয়। আর আজ ১ নভেম্বর থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশার বর্ধিত ভাড়া কার্যকরের নির্দেশ দিয়ে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তবে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত (মিটারে গেলেও বখশিসের নামে বাড়তি টাকা) আদায় অথবা চুক্তিতে যাওয়া কিংবা যাত্রীর ইচ্ছানুযায়ী গন্তব্যে যেতে রাজি না হলে ওই চালকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা রয়েছে।
বিআরটিএ’র সূত্র জানায়, গত ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মিটার ক্যালিবারেশনের নির্ধারিত সময়সীমা ছিল। ওই সময়ের মধ্যে ক্যালিবারেশন না করায় ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ক্যালিবারেশন সফটওয়ার সংযোজনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ১২ হাজার সিএনজি অটোরিকশার ক্যালিবারেশন যাচাই সম্পন্ন হয়েছে। বাকিগুলো ক্যালিবারেশনের পর যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।
উল্লেখ্য, ২০০২ সালে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালু হওয়ার পর পাঁচ বার সরকার ভাড়া বাড়ালেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করতে পারেনি। অটোরিকশা নীতিমালা-২০০৭ অনুযায়ী নির্ধারিত স্ট্যান্ডে অবস্থানকালে কোনো সিএনজি বা পেট্রোলচালিত থ্রি হুইলারের চালক স্বল্প দূরত্বসহ সরকার নির্ধারিত এলাকার মধ্যে যেকোনো দূরত্বে যেতে বাধ্য থাকলেও বাস্তবে রাজধানীর কোনো সিএনজি অটোরিকশা চালকই স্বল্প দূরত্বে এবং যাত্রীদের চাহিদামতো গন্তব্যে যেতে চান না।
নীতিমালার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণবিষয়ক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘অটোরিকশা চালক-মালিকদের মিটার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং মিটার টেম্পারিং (কারসাজি) থেকে বিরত থাকতে হবে।’
এ ছাড়া ‘নির্ধারিত স্ট্যান্ড ছাড়া যাত্রী নেওয়ার উদ্দেশ্যে রাস্তার যেখানে-সেখানে থেমে থাকতে পারবে না, চলাচলরত অবস্থায় থাকতে হবে।’ নীতিমালায় এসব কথা উল্লেখ থাকলেও তা মানেন না কোনো চালকই।