ডেস্ক: বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবিতে ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশি তাণ্ডবের প্রতিবাদে আগামী মঙ্গলবার দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন।
রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন ছাত্র ইউনিয়ন নেতারা।
মঙ্গলবারের ধর্মঘট কর্মসূচির আগে সোমবার সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশও করবে ছাত্র ইউনিয়ন। এরমধ্যে ওইদিন বিকেল ৪টায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি হাসান তারেক বলেন, ‘যেই পুলিশ বিগত ২৬ দিনেও কোনো নিপীড়ককে আটক করতে পারেনি তারাই আজকে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা করেছে। এটি আমাদের বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে আরো বেগবান করছে।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশ বারবার আমাদের ওপর হামলা করেছে। তারা একপর্যায়ে আমাদের ওপর ট্রাক তুলে দিতে চেয়েছিল এবং দুইবার আমাদের উপর সাঁজোয়া যান তুলে দেয়। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে তারা বারবার আমাদের মাইক বন্ধ করে দেয়। এরপর হঠাৎ করেই আমাদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করে।’
বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারসহ ৬ দফা দাবিতে রোববার দুপুরে ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয় ঘেরাও করতে যায় ছাত্র ইউনিয়ন। দুপুর ১২টার দিকে মধুর ক্যান্টিন থেকে ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপুর্ণ সড়ক প্রদিক্ষণ করে ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ের দিকে যায়।
ছাত্র ইউনিয়নের এ কর্মসূচি ঠেকাতে পুলিশ আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। বিশেষ করে ঢাবি ক্যাম্পাস ও শাহবাগ এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা ছিল। ব্যারিকেড দেয়া হয় শাহবাগে। তবে ছাত্র ইউনিয়নের মিছিলটি শাহবাগের দিকে না গিয়ে উল্টোপথে টিএসসি-কার্জন হল হয়ে ডিএমপি কার্যালয়ের দিকে চলে যায়। প্রধান বিচারপতির বাসভবনের কাছে পুলিশি বাধায় পড়ে মিছিলটি। বাধা পেয়ে ছাত্র ইউনিয়ন নেতাকর্মীরা রাস্তায় অবস্থান নেন এবং নেতারা বক্তব্য দিতে শুরু করেন। অবস্থানের প্রায় আধা ঘণ্টার মাথায় বিনা উসকানিতে পুলিশ নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হয় বলে অভিযোগ করেন ছাত্র ইউনিয়ন নেতারা। এতে ৩৩ জন আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আটক করে ৫ জনকে।
এ ঘটনায় ৬ পুলিশ আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রমনা থানার ওসি মশিউর রহমান বাংলামেইলকে বলেন, ‘ছাত্র ইউনিয়ন স্মারকলিপি দেয়ার কথা বলে মূলত নাশকতা সৃষ্টির জন্য এসেছিল।’
তিনি বলেন, ‘তারা পুলিশের তিনটি ব্যারিকেড (দোয়েল চত্বর, মৎস্যভবন, কাকরাইল মসজিদ মোড়) ভেঙে সর্বশেষ বেইলি রোডের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করে। এখানে তারা ব্যর্থ হয়ে রাস্তায় বসে পড়ে। তাদের উঠিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এসময় তিন রাউন্ড টিয়ারশেল ছোড়ে পুলিশ। অন্যদিকে ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইপ-পাটকেল ছোড়ে। এতে ৬ পুলিশ আহত হন।’
ছাত্র ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক লাকী আক্তার বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ অবস্থানের ওপর পুলিশের এই নারকীয় তাণ্ডব প্রমাণ করে তারা দোষীদের আড়াল করতে চায়। রাষ্ট্রের এমন ফ্যাসিবাদী আচরণ রুখে দিতে দেশব্যাপী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’