জাতীয় সংসদে উত্থাপিত এমপিদের বেতন বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিলের বিরোধিতা করে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এমপিরা। বিলের প্রস্তাবনায় সরকারি সর্বোচ্চ পদ সচিবের বেতনের চেয়ে এমপিদের সম্মানী ভাতা কম রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা নামছেন মর্যাদার লড়াইয়ে।
তাদের মতে, সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে এমপিরা শুধু আমলা কেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের চেয়েও বেশি বেতন পাওয়ার দাবি রাখেন। অথচ প্রস্তাবিত বিলে এমপিদের ভাতা সচিবদের চেয়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকা কম রাখা হয়েছে। এটি খুবই সম্মানহানিকর। তারা চান, প্রয়োজনে সম্মানীভাতা ১ টাকা করা হোক; কিন্তু সম্মানটা যথাযথ দেয়া হোক।
এদিকে এমপিদের ভাতা সংক্রান্ত বিলে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে সংসদীয় কমিটিও। জাতীয় সংসদ ভবনে গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কমিটির সদস্যরা বিলটির বিরোধিতা করে এর রিপোর্ট চূড়ান্ত করেননি। সংসদে পাস করার সুপারিশ করা তো দূরে থাক, উল্টো বিল প্রস্তুত কাজে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং অর্থমন্ত্রীকে কমিটিতে তলব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য মো. শামসুল হক টুকু, অ্যাডভোকেট মো. জিয়াউল হক মৃধা ও সফুরা বেগম অংশ নেন।
কমিটির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, বিলের প্রস্তাবনায় সরকারি সর্বোচ্চ পদ সচিবের বেতনের চেয়ে এমপিদের সম্মানী ভাতা কম রাখায় সংসদীয় কমিটির সদস্যরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, এমপিদের জন্য প্রস্তাবিত সম্মানিভাতা একজন সচিবের চেয়ে অনেক কম। সচিবরা ৮২ হাজার টাকা বেতন পেলেও প্রস্তাবিত আইনে এমপিদের জন্য ৫৫ হাজার টাকা সম্মানি ভাতা রাখা হয়েছে। এটি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সদস্যরা মনে করেন, এখানে টাকার প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন সম্মানের। এমপিদের যদি সম্মানী ভাতাই দেয়া হয় তাহলে সচিবদের সঙ্গে তুলনা না করে এটি ১ টাকা ধার্য করা হোক। এতে অন্তত সম্মানটা বেঁচে যাবে।
সূত্র জানায়, কমিটির বৈঠকে বিশেষ আমন্ত্রণে উপস্থিত হয়ে মঈন উদ্দিন খান বাদল এবং ইমরান আহমেদও এই বেতন বৈষম্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তীব্র অসন্তোষ জানিয়ে তারা বলেন, আমলারা ৮২তেই থামেনি। সিনিয়র সচিবদের বেতন ৮৬ পর্যন্ত করেছেন। ওইসব আমলাদের অজুহাত হচ্ছে ‘এমপিরা তো বেতন নেন না; সম্মানি ভাতা নেন। এটি কম হলেও সমস্যা নেই।’ তারা বলেন, সম্মানীভাতা তো মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীও নেন। অন্যসব মন্ত্রীরাও নেন। তাহলে তাদের সম্মানীভাতা বাড়ানো হলো কেন? যদি সম্মানীভাতাই দেয়া হয় তাহলে তা ১ টাকা করে দেয়া হোক। কিন্তু এমপিদের মর্যাদাটা তো রাখতে হবে। আমলাদের নিচে তো এমপিরা থাকতে পারেন না।
কমিটিতে উপস্থিত এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে মানবকণ্ঠকে বলেন, সংবিধান অনুযায়ী জনগণই যদি সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হয়; আর জনগণের প্রতিনিধিত্ব যদি এমপিরাই করেন তাহলে তাদের প্রতিনিধিদের তো সবার ওপরে নিতে হবে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের বেতন-ভাতা বাড়ানো সংক্রান্ত বিলটি অবশ্য এরই মধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। এসব বিলে তাদের বেতন-ভাতাদি ৯৬ ভাগ বাড়ানো হয়েছে। আমলারা বোঝে কোথায় কি করতে হয়। তাই তারা তাদেরটাও বাড়িয়েছে নিজেদেরটাও বাড়িয়ে নিয়েছে।
এদিকে বিল নিয়ে এমপিদের অসন্তোষের মধ্যে জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলন করে বিলটির প্রকাশ্য বিরোধিতা করেছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, বেতন তো কমানো হয়েছেই। সেইসঙ্গে এমপিদের মেডিকেল বিল, যাতায়াত ভাতা, সংসদ অধিবেশন অ্যালাউন্স, কমিটি মিটিংয়ে অংশ নিলে যে অ্যালাউন্স পাওয়া যায় সেটাও বাড়ানো হয়নি। এ জন্য বৈঠকে বিলটি চূড়ান্ত করা হয়নি। সংশ্লিষ্টদের বলে দেয়া হয়েছে এগুলো ঠিক করে নিয়ে আসতে। সাবেক এই মন্ত্রী বলেন ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার বিষয়গুলো দেখার পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ১৮ ফেব্রুয়ারি আবার মিটিং করা হবে। সেটি সিরিয়াস বৈঠক হবে। অর্থমন্ত্রীকে ওই বৈঠকে ডাকা হবে বলেও জানান তিনি।