‘মাছের রাজা ইলিশ দেশের রাজা পুলিশ—ভয়ানক উক্তি’

0

51f8d6480349c-Mizanurজাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেছেন, পুলিশের পক্ষ থেকে ‘মাছের রাজা ইলিশ দেশের রাজা পুলিশ’ বলে যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ উক্তি করা হয়েছে তা একটি ভয়ানক উক্তি। দেশে যে অবস্থা চলছে তা এখনই রুদ্ধ করা না হলে, দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া না হলে দেশের সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে, যার পরিণতি ভালো হবে না।

আজ শনিবার দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) পরিচ্ছন্নতা বিভাগের পরিদর্শক বিকাশ চন্দ্র দাসকে (৪০) রাজধানীর ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালে দেখতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। বিকাশ চন্দ্র দাস হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি আছেন। শুক্রবার ভোরে পুলিশের বেধড়ক পিটুনিতে মারাত্মক আহত হন বিকাশ। ​মিজানুর রহমান বলেন, বিকাশ চন্দ্র দাসকে যে ভাবে নির্যাতন করা হয়েছে তা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানদণ্ড, সাংবিধানিক অধিকার এবং নির্যাতন বিরোধী আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
বিকাশকে মারার সময় সেখানে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলছিলেন, ‘মাছের রাজা ইলিশ, দেশের রাজা পুলিশ।’ বিকাশকে মারার সময় সেখানে উপস্থিত এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী গণমাধ্য​মকে এ কথা জানান।
শুক্রবার ভোরে চারটার দিকে পরিচ্ছন্নতার কাজ তদারক করতে বেরিয়ে ছিলেন বিকাশ। এক জায়গায় তদারক শেষে মীর হাজিরবাগ খাল-সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকজন লোক তাঁকে থামতে বলেন। বিকাশ তাঁদের ছিনতাইকারী ভেবে মোটরসাইকেল ঘোরানোর চেষ্টা করেন। এ সময় তাঁরা বিকাশকে তাড়া করেন। বিকাশ মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গেলে লোকগুলো বিকাশকে ধাওয়া করে ধরে মারধর শুরু করেন। পরে জানা যায়, এঁরা সাদাপোশাকের পুলিশ। এ সময় আশপাশে কর্মরত সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা দৌড়ে এসে বিকাশকে তাঁদের কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সামনেই তাঁরা বিকাশকে বন্দুকের বাঁট দিয়ে পেটান এবং বুট দিয়ে পা থেঁতলে দেন। একপর্যায়ে আহত বিকাশকে পুলিশি ভ্যানে তোলা হয়। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা পুলিশের ভ্যানটিকে ঘেরাও করেন। পরে পুলিশ বিকাশকে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান হাসপাতালে বিকাশ চন্দ্র দাসকে আইসিইউতে দেখে আসার পর গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে এক ধরনের দায়মুক্তির ভাব গ্রাস করেছে। তাদের কোনো কিছু হবে না, কোনো কিছু স্পর্শ করবে না ভাবছে। ডিএমপি কমিশনার সবাইকে আশ্বস্ত করেছেন। আমরাও তাঁর কথায় আস্থা রাখতে চাই, বিশ্বাস রাখতে চাই।’
মিজানুর রহমান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বিকাশ চন্দ্র দাস এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম রাব্বী এই দুজনের বেলায় অন্ততপক্ষে দৃষ্টান্ত রাখুন। প্রমাণ করুন আইন সবার জন্য প্রযোজ্য। পুলিশের কেউ অপরাধ করলেও রাষ্ট্র তা সহ্য করবে না তা আমরা দেখতে চাই।
বিকাশ চন্দ্র দাসের শারীরিক অবস্থা নিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, তিনি প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছেন। তাঁর কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। কথাও অস্পষ্ট। ঘাড়ে, মাথার পেছনে, হাঁটুতে চরম আঘাত পেয়েছেন। দুটো পা নাকি তাঁর অবশ মনে হচ্ছে মাঝে মাঝে। তীব্র যন্ত্রণায় ভুগছেন তিনি। এ ঘটনায় ভবিষ্যতে তাঁর কিডনি বা লিভারে প্রভাব ফেলবে কি না তা চিকিৎসকেরা পরে বলতে পারবেন।
মিজানুর রহমান পুলিশের হাতে নির্যাতনের শিকার ভিকটিমদের ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসা ব্যয়ভার রাষ্ট্রের বহন করা উচিত বলে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকেও যথাযথ জায়গায় আবেদন, সুপারিশ করা হবে।
ল্যাবএইড হাসপাতালের হাসপাতাল সমন্বয়ক ইখতিয়ার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বিকাশ চন্দ্র দাসের অবস্থা স্থিতিশীল আছে তবে শঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More