বাংলাদেশ থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য নিয়োগের আগে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি যাচাই-বাছাই করার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। এইচআরডব্লিউ জাতিসংঘের প্রতি এ আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়েরে ল্যাক্রোইক্সের শিগগিরই বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে। উচ্চ পদস্থ এই কর্মকর্তার বাংলাদেশ সফরের আগে এইচআরডব্লিউ থেকে এমন আবেদন অত্যন্ত গুরুত্ব রাখে।
সোমবার (১২ই জুন) এইচআরডব্লিউর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ল্যাক্রোইক্স এমন সময়ে বাংলাদেশ সফর করছেন, যখন সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো দেশটির রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে এবং বিভিন্ন অধিকার কর্মী, গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার সদস্যদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের হয়রানি করছে। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাবাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশ সফরকালে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলের খোলাখুলি উদ্বেগ জানানো উচিত।
এইচআরডব্লিউ বলছে, জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবদান সবচেয়ে বেশি। এই অবস্থান ধরে রাখতে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত নীতিমালা যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করতে হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে, জাতিসংঘের হয়ে যারা কাজ করবে তারা কেউ মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত নয়। সফরকালে জ্যঁ পিয়েরে ল্যাক্রোইক্সে এই নীতিমালার ওপর জোর দিতে হবে।
এইচআরডব্লিউ বলছে, বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে জড়িত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। নিরপত্তা বাহিনীর যেসব সদস্য মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত দেশের বাইরে শান্তি রক্ষা মিশনে যেন তারা অংশ না নিতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত নীতিমালা ব্যর্থ হয়েছে। শুধু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মানবাধিকারসংক্রান্ত বিষয় যাচাই-বাছাই করে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে র্যাবের প্রসঙ্গ টেনে এনেছে এইচআরডব্লিউ। বলা হয়েছে, সামরিক বাহিনী ও পুলিশের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত এই বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত। ২০১৯ সালে জাতিসংঘের নির্যাতন বিরোধী কমিটি জানিয়েছিল, জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের এমন অনেক সদস্যকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যাঁরা র্যাবের হয়ে কাজ করেছেন। বিষয়টি উদ্বেগের। এমন পরিস্থিতিতে একটি স্বাধীন যাচাই-বাছাই ব্যবস্থার সুপারিশ করেছিল জাতিসংঘের ওই কমিটি। ওই যাচাই-বাছাইয়ের উদ্দেশ্য ছিল, নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমসহ অন্যান্য গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত কোনো ব্যক্তি বা ইউনিটকে যেন শান্তি রক্ষা মিশনে নিয়োগ না দেওয়া হয়, তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এইচআরব্লিউ বলছে, জাতিসংঘের উচিত কোনো বাংলাদেশি কর্মকর্তা র্যাবের সঙ্গে জড়িত থাকলে, তা প্রকাশ করা এবং বাহিনী–সংশ্লিষ্ট কাউকে শান্তি রক্ষা মিশনে যোগদানে বিরত রাখা। শুধু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নয়, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সব সদস্যের মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট বিষয় যাচাই-বাছাই করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশন বিভাগকে।
জ্যঁ পিয়েরে ল্যাক্রোইক্সের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এইচআরডব্লিউ বলেছে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার, মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে সরকারের ব্যর্থতা এবং বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষার জন্য তারা যে হুমকি সৃষ্টি করেছে, তা চিহ্নিত করতে সফরকালে ল্যাক্রোইক্সকে মানবাধিকার যাচাইবাছাইয়ের বিষয়ে প্রকাশ্যে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।