দেশে ফিরতে শুরু করেছেন এদেশের হাজিরা। ৪ শতাধিক হাজি নিয়ে হজের প্রথম ফিরতি ফ্লাইট অবতরন করেছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে, আজ বিকাল সারে ৪ টার দিকে ফ্লাইট টি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরন করে। সৌদি আরব থেকে হাজিদের নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রথম ফ্লাইটটি আজ সোমবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে অবতরণ করার কথা ছিল। জানা যায় নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৭ ঘণ্টা ১০ মিনিট বিলম্বে অবতরণ করলো প্রথম ফিরতি হজ ফ্লাইট।
এর পরই তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় কি হয়েছিল মিনায় সেদিন। এর প্রেক্ষিতে একেকজনের কাছ থেকে এক এক রকম উত্তর পাওয়া যায়। চলুন শুনি কে কি বলছিল:
হঠাৎ দেখি মানুষ ছুটছে। এদিক ওদিক দৌড়াচ্ছে। চারদিক থেকে কান্নার রোল ভেসে আসছে। আমি তখন মিনার জামারাতে পাথর নিক্ষেপ করতে তিন তলায় অবস্থান করছিলাম। মানুষের চাপ থেকে বাঁচতে পাশের কনফেকশনারি দোকানে প্রবেশ করি। কিন্তু মানুষের চাপে দোকানটি চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে প্রাণ বাঁচাতে তিন তলা থেকে লাফ দেই। একেবারে নিচের তাঁবুর ওপর পড়ি। সঙ্গে সঙ্গে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলি। এরপর নিজেকে আবিষ্কার করি হাসপাতালের বিছানায়। এভাবেই হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে মিনা ট্র্যাজেডির বর্ণনা দিচ্ছিলেন রাজধানী যাত্রাবাড়ীর হাজী মো. বাবলু।
একই ফ্লাইটে ঢাকায় আসেন হাজী মো. আতিয়ার রহমান। মিনা ট্র্যাজেডির বর্ণনা করে তিনি বলেন, ওই ঘটনার দেড় ঘণ্টা আগে জামারাতে পাথর নিক্ষেপ করি। যখন ঘটনাটি ঘটে তখন আমি প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে। বেঁচে যাওয়া অনেকে আমাকে বলেছেন, পাথর নিক্ষেপ নিয়ে আফ্রিকান নাগরিকের সঙ্গে এক পাকিস্তানির মারামারি হয়। এ থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। মারামারি ঘটনা শুনে পেছন দিক থেকে সবাই দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। গরমে মানুষ তখন হাঁসফাঁস করছিল। প্রাণ বাঁচাতে মানুষ দিগ্বিদিক ছুটতে থাকেন। মানুষের প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে অনেকেই নিচে পড়ে যান। পায়ের নিচে চাপা পড়ে এসব মানুষ মারা যান। অনেকে আহত হন।
ফেনীর সোনাগাজীর হাজী আবু বকর সিদ্দিক জানান, মিনার জামারাতে পাথর নিক্ষেপ করে বের হওয়ার দুটি বহির্গমনের পথ বন্ধ ছিল। পাথর নিক্ষেপ করে বের হওয়ার সময় মানুষের জট লেগে যায়। এ সময় প্রাণ বাঁচাতে অনেকে হুড়োহুড়ি শুরু করেন। তখন পায়ের নিচে পিষ্ট হয়ে অনেকে মারা যান। রাজধানীর বাসাবোর বৌদ্ধমন্দির এলাকার বাসিন্দা হাজী সুলতান আলী বলেন, আমি তখন মিনার পাশেই অবস্থান করছিলাম। একজন ভিআইপির পাথর নিক্ষেপের কথা ছিল। তার সম্মানে দুটি রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। একটি রাস্তা দিয়ে সবাই বের হওয়ার চেষ্টা করেন। এতে প্রচণ্ড ভিড় লেগে যায়। মানুষের চাপাচাপিতে অনেকে নিচে পড়ে যান। পদদলিত হয়ে এসব হাজী মারা যান। তবে রাস্তা খোলা থাকলে এসব প্রাণহানিরা ঘটনা ঘটতো না। এখনও ৯৪ বাংলাদেশী হাজী নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানান তিনি।
বগুড়ার হাজী মতিয়ার রহমান জানান, আমি তখন মিনার ১নং গেটে অবস্থান করছিলাম। দুটি রাস্তা বন্ধ থাকায় প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে মানুষ ধাক্কাধাক্কি শুরু করে। একপর্যায়ে ৬-৭ জন নিচে পড়ে যান। এরপর প্রাণ বাঁচাতে অনেকে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। এতে পদদলিত হয়ে এসব হাজী মারা যান। বগুড়ার আরেক হাজী বিজেডএম ফারুক বলেন, আমি দুই ঘণ্টা আগে জামারাতে পাথর নিক্ষেপ করে আসি। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছি।
এ সম্পর্কিত ভিডিও দেখুন এনটিভির সৌজন্যে। এখানে ক্লিক করুন।