রাজশাহী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) জেনারেল ম্যানেজারের (জিএম) প্রদীপ কুমার দের মেয়ের বিয়ে আগামী ৯ আগস্ট। রাজধানীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে ঢাকঢোল পিটিয়ে জমকালো অনুষ্ঠান করা হবে। নিমন্ত্রণ করা হবে ভিআইপিদের। খাওয়ানো হবে উন্নতমানের খাবার। মেয়ের বিয়ের জমাকালো ওই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সমাজে আরো বেশি প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিতি হবেন জিএম সাহেব! কিন্তু অনুষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহের এত টাকা পাবেন কোথায়? তাই তিনি তার অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন ব্যয়ের বোঝা। দাওয়াত দেয়ার কোনো রকম পরিকল্পনা না থাকলেও টাকা চাই তার। মেয়ের বিয়ের জন্য তাই তিনি মাথা পিছু চাঁদা বসিয়েছেন।
শনিবার নওহাটায় পবিসের হেড অফিসে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে এ ব্যাপারে বৈঠকও করেছেন জিএম প্রদীপ কুমার দে। বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্ত পরদিন রোববার সকালে অন্য জোনাল অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত হারে চাঁদা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। এতে দুই ডিজিএমের ঘাড়ে চাপানো হয়েছে দেড় হাজার টাকা করে ৩ হাজার টাকা, ৮ জন এজিএমের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা করে ৮ হাজার টাকা, ২৫ জন সুপারভাইজারের কাছ থেকে ৭০০ টাকা করে ১৭ হাজার ৫০০ টাকা, ২০ জন লাইন টেকনিশিয়ান ও ক্যাশিয়ারের কাছ থেকে ৬০০ টাকা করে ১২ হাজার টাকা, ৩ ও ৫ গ্রেডে বেতন পাওয়া ১৫০ জনের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে ৭৫ হাজার টাকা ও ১৫০ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে ৪৫ হাজার টাকা চাঁদা ধরা হয়েছে।
মোট মিলে ১ লাখ ৬০ হাজার ৫০০ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, নির্ধারিত এ টাকা প্রদানের জন্য দেয়া হয়েছে আলটিমেটামও। আগামীকাল সোমবার সন্ধ্যার আগেই এসব টাকা উত্তোলন করে রাজশাহী পবিসের ভারপ্রাপ্ত জিএম ও দুর্গাপুর জোনাল অফিসের ডিজিএমের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে।
তবে লাইনম্যানদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে চলমান আন্দোলনের মধ্যেই চাঁদাবাজির এ ঘটনায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে।
সোমবারের মধ্যে টাকা পরিশোধের জন্য সবাইকে বলে দেয়া হলেও বিয়ের অনুষ্ঠানে কারা নিমন্ত্রণ খেতে যাবেন এ বিষয়ে কাউকে কিছুই বলা হয়নি। কর্মচারীদের অভিযোগ, চাঁদা নেয়া হলেও তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে যেতে দেয়া হবে না।
পবিস রাজশাহীর একটি সূত্র জানায়, রাজশাহী পবিসকে ঘিরে যে সিন্ডিকেটটি সক্রিয় রয়েছে তারাই জিএম প্রদীপ কুমার দের মনোতুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে এভাবে চাঁদা আদায় করছে।
লাইনম্যানদের কর্মবিরতি ও আন্দোলনের মধ্যে এভাবে ইচ্ছার বিরুদ্ধে চাঁদা আদায়ের ঘটনায় নাখোশ রাজশাহী পবিসের বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী পবিসের জিএম প্রদীপ কুমার দের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তিনি ছুটিতে থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তবে, পবিসের ভারপ্রাপ্ত জিএম ও দুর্গাপুর জোনাল অফিসের ডিজিএম রমেন্দ্র চন্দ্র রায় জানান, চাঁদা হিসেবে নয়, বিয়ের উপহার কেনার জন্য টাকা আদায় করা হচ্ছে।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশের অসন্তোষের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার কাছে এমন অভিযোগ কেউ করেননি। তাছাড়া এ ব্যাপারো কারো অসন্তোষ আছে বলে মনে হয় না।