রাজধানীর তুরাগ এলাকায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের টাকা ডাকাতির ঘটনায় নতুন করে আরও ২ কোটি ৫৩ লাখ ৯৯ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শনিবার রাজধানীর বনানী, মিরপুর ও সুনামগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত আটজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে দুই দফায় ৬ কোটি ৪৩ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন মো. সানোয়ার হাসান, মো. ইমন ওরফে মিলন, মো. আকাশ মাদবর, সাগর মাদবর, মো. বদরুল আলম, মো. মিজানুর রহমান, মো. সনাই মিয়া ও মো. এনামুল হক বাদশা।
অন্যদিকে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে (ডিএমপি) থেকে আলাদা তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে তারা কাজ শুরু করেছে। গতকাল দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ডাকাত গ্রেফতার ও টাকা উদ্ধারের বিষয়ে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান ডিবির প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সিলেট যাওয়ার কথা বলে গাড়ি ভাড়া করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার দিন অর্থাৎ ৯ মার্চ ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ভাড়া করা গাড়িটি কুর্মিটোলা যাত্রীছাউনির সামনে এলে দুর্বৃত্তরা পেছনে সিট ঠিক করার কথা বলে। চালক পেছনে গেলে তার হাত-পা ও চোখ বেঁধে ফেলে এবং গাড়ি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় তারা। পরে টাকা লুট করতে মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় নির্দিষ্ট নম্বরের গাড়িকে অনুসরণ করার জন্য ওতপেতে থাকে।
একপর্যায়ে টাকা বহনকারী গাড়িটি এলে তারা পেছন পেছন অনুসরণ করে। নির্জন জায়গায় যাওয়ার পর তাদের ব্যবহƒত গাড়ি দিয়ে টার্গেট গাড়িকে ধাক্কা দিয়ে থামায়। এরপর তারা তর্কবিতর্ক শুরু করে ও গাড়িটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। পরবর্তী সময়ে টাকাসহ গাড়িটি নিয়ে তারা ৩০০ ফিট এলাকায় যায়। পথে গাড়িতে থাকা পাঁচজনকে তারা নামিয়ে দেয়। দুটি ট্রাঙ্ক ভেঙে টাকা বের করে তাদের সংগ্রহে থাকা দুটি চালের বস্তা ও পাঁচটি ব্যাগে টাকা ভর্তি করে। তখন আর ব্যাগ না থাকায় বাকি ট্রাঙ্কে থাকা টাকা দেখে তারা ভয় পায়। তারা চালকের সিটে বড় একটি টাকার ব্যাগ ফেলে রাখে এবং গাড়িতে কাপড় পরিবর্তন করে চলে যায়। অবশিষ্ট ব্যাগটি চালক সুস্থ হয়ে নিজ হেফাজতে নেন। এ ছাড়া তিনি ফেলে রাখা ট্রাঙ্ক থেকে অবশিষ্ট টাকা ভরে ভাইয়ের হেফাজতে দেন। পরে চালকের স্বীকারোক্তি মতে তাদের বাসা থেকে টাকা উদ্ধার করা হয়। হারুন অর রশিদ বলেন, ঘটনার পরপর ডিবি পুলিশের তৎপরতায় ওই দিনই রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডাকাতি করা ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির মিরপুর ও উত্তরা বিভাগের বিভিন্ন টিম রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ও সুনামগঞ্জে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে ডাকাতি করা ২ কোটি ৫৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ সময় ডাকাতির কাজে ব্যবহƒত একটি প্রাইভেট কারও উদ্ধার করা হয়েছে।
টাকা পরিবহনে যথেষ্ট নিরাপত্তা ছিল না উল্লেখ করে ডিবিপ্রধান বলেন, কোম্পানির ভাষ্যমতে ১১ কোটি টাকা পরিবহনের সময় নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা অর্থাৎ অস্ত্রসহ কোনো নিরাপত্তাকর্মী ছিল না। অধিকাংশ সময় এভাবে অধিক টাকা পরিবহন হয়, যা পরিবহন করা টাকার নিরাপত্তা রক্ষায় পর্যাপ্ত নয়। টাকা পরিবহনের সময় স্থানীয় থানাকেও তারা অবহিত করেনি।
ডাকাতির ঘটনায় জড়িত অন্য অভিযুক্তদের গ্রেফতার ও ডাকাতি করা অবশিষ্ট টাকা উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত আছে। তুরাগ থানায় করা মামলায় গ্রেফতার ব্যক্তিদের ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এ ঘটনার সঙ্গে কার কার সম্পৃক্ততা রয়েছে তা জানা যাবে।
তদন্ত কমিটি গঠন : টাকার হিসাব মেলাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (লজিস্টিক ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট বিভাগ) মো. আশরাফুজ্জামানকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘আমার তদন্ত করছি। তদন্ত শেষ হলেই প্রতিবেদন জমা দেব।’
জানা গেছে, যেসব প্রতিষ্ঠান এটিএম বুথে টাকা রাখে তারা চুক্তি অনুযায়ী চাহিদামতো টাকা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে তুলে তাদের গুদামে রাখে। এর পর তারা প্যাকিং করে এটিএম বুথে ফিডিং করে। শর্তানুযায়ী ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেওয়ার পর সব দায়িত্ব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. যশোদা জীবন দেবনাথ বলেন, ‘আমি মনে করি বাকি টাকাও উদ্ধার হবে। যে টাকা উদ্ধার হয়েছে সেগুলো আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে আমরা পেয়ে যাব।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যে টাকা উদ্ধার হবে না সেটা আসলে আমাদেরই লস। তবে আমাদের বীমা করা আছে।’
bdPatidin