[ads1]হলি আর্টিসানে জিম্মি হয়ে লোকজন যখন জীবন-মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন তখন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসানাত রেজাউল করিম ফুরফুরে মেজাজেই ছিলেন। জঙ্গিদের সঙ্গে অস্ত্র হাতে হলি আর্টিসানের ছাদেও উঠেছিলেন, জঙ্গিদের সামনে ধূমপান করেছেন নির্বিঘ্নে।
অপর জিম্মি তাহমিদ হাসিব খানও ছিলেন অনেকটা চিন্তামুক্ত। নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরা করেছেন। আর রেস্তোরাঁটির কর্মী জাকিরুল হোসেনের অবস্থানও ছিল সন্দেহজনক। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জিম্মি ওই তিন ব্যক্তির সঙ্গে অস্ত্রধারী জঙ্গিদের রহস্যময় ‘ঘনিষ্ঠতা’ পেয়েছেন।
বিভিন্ন ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং ওই তিনজনসহ জীবিত উদ্ধার হওয়া কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এর সত্যতা পান তারা। তবে তারা জঙ্গি বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা বা নিহত জঙ্গিদের সঙ্গে পুরনো পরিচয়ের কথা স্বীকার করেননি। তারা দাবি করেছেন, রেস্তোরাঁয় জিম্মি হয়ে তারা যা করেছিলেন তা বাঁচার জন্যই করেছিলেন।
এদিকে রেস্তোরাঁর বাবুর্চির সহকারী সাইফুল চৌকিদারকে নিয়েও রহস্য কাটেনি। নিহত সাইফুল জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ছিলেন নাকি জঙ্গিরা ঢাল হিসেবে তাকে ব্যবহার করেছিল সে প্রশ্নেরও জবাব মেলেনি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছেন, তাকে মামলায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
গুলশানের নৃশংস ঘটনায় দায়ের মামলাটির তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, হলি আর্টিসানে জিম্মি ঘটনা ও হত্যাকাণ্ডের পর রেস্তোরাঁর ভেতরে কোনো সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায়নি। ফলে ভেতরে ওই তিনজনের গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়নি। [ads1]
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ এবং আশপাশের ভবনের সিসিটিভির কিছু ফুটেজে হাসনাত রেজাউল করিম, তাহমিদ হাসিব খান ও জাকিরুলের গতিবিধির কিছু চিত্র পাওয়া গেছে
গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, হাসনাত করিম ও তাহমিদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অনেক আগেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যগুলো যাচাই করা হচ্ছে। এ ছাড়া তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের কললিস্ট যাচাই চলছে। এ থেকেই বোঝা যাবে জঙ্গিদের সঙ্গে তাদের আগে কোনো যোগাযোগ ছিল কি-না। এ ছাড়া চিকিৎসা শেষে গত বুধবার রেস্তোরাঁ কর্মী জাকিরুলের সঙ্গেও কথা বলেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হাসনাত করিমকে ছেড়ে দেওয়ার কথা জানালেও বিষয়টি নিশ্চিত হতে গতকাল সন্ধ্যায় তার স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তার বাবা এম রেজাউল করিম ওই বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, হাসনাত করিমের স্মার্টফোনে বিশেষ অ্যাপস ব্যবহার করে জঙ্গিরা বিদেশিদের নৃশংসভাবে হত্যার পর সে ছবিগুলো কোথায়ও পাঠিয়েছে। তা ছাড়া ভিডিওতে হাসনাত করিমকে জঙ্গিদের অস্ত্র হাতেও দেখা গেছে। ২ জুলাই ভোরে কমান্ডো অভিযান প্রস্তুতির আগে দুই জঙ্গি সদস্যসহ তাকে হলি আর্টিসানের ছাদেও দেখা গেছে। এ ছাড়া তাহমিদের হাতেও এক সময় অস্ত্র দেখা গেছে। তারা হাতে অস্ত্র নিয়ে রেস্তোরাঁর ভেতর ঘোরাফেরা করেছেন বলেও জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার হওয়া কয়েক প্রত্যক্ষদর্শী তদন্ত কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। এ ছাড়া রেস্তোরাঁ কর্মী জাকিরুল হামলার মাসখানেক আগে সেখানে চাকরি নেন। তার বাড়ি উত্তরাঞ্চলে। ঘটনার সময় জঙ্গিরা তার সঙ্গে যেমন সাধারণ আচরণ করেছে, তার আচরণও ছিল সন্দেহজনক। এর সব কিছুই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। যদিও ওই তিনজনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তারা।
এদিকে সাইফুল জঙ্গি বা সন্ত্রাসী নন বলে তার স্বজনরা দাবি করলেও তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, হলি আর্টিসানে বিদেশিদের জিম্মি এবং নৃশংস হত্যায় জড়িত জঙ্গি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সাইফুলের রহস্যজনক সখ্য দেখেছেন জিম্মি প্রত্যক্ষদর্শীরা। জিম্মিদশা থেকে বেঁচে ফেরা কয়েকজন পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই রাতে অস্ত্রধারী জঙ্গিদের নানাভাবে সহায়তাও করেছেন সাইফুল। এ জন্যই তাকে মামলায় আসামি হিসেবে দেখানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাঁচ জঙ্গির সঙ্গে তার লাশটিও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের মর্গে ছিল।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, কমান্ডো অভিযানের পর পাঁচ জঙ্গির লাশের সঙ্গে রেস্তোরাঁর সামনের সবুজ মাঠে সাইফুলের লাশটি পড়েছিল। অভিযানের সময় তিনি জঙ্গিদের সঙ্গেই রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। যদিও কমান্ডোরা ওই সময় অনেক জিম্মিকে অক্ষত উদ্ধার করেছেন। তা ছাড়া কোথাও হামলা চালাতে গেলে স্বাভাবিকভাবে সেখানকার কারও সহায়তা প্রয়োজন_ সাইফুল তাদেরই কেউ কি-না সে তদন্তও শুরু হয়েছে।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, মামলার আসামি হলেও সাইফুলকে এখনই জঙ্গি সদস্য বলা যাচ্ছে না। এ জন্য তার পুরনো রেকর্ড যাচাই চলছে। গ্রামের বাড়িতে তদন্ত চলছে। মোবাইল ফোনের বিশাল কললিস্টও যাচাই করা হচ্ছে।
সাইফুলের ভায়রা মো. কবির জানান, সাইফুল ১০ থেকে ১২ বছর জার্মানিতে থেকে ২০০৪ সালে দেশে ফেরেন। এরপর গ্রামের বাড়ি নড়িয়ায় একটি চক্ষু হাসপাতালে চাকরি নেন। ওই হাসপাতালের মালিকের মাধ্যমে তিনি ২০১৫ সালে ১০ হাজার টাকা বেতনে হলি আর্টিসানে চাকরি নেন। স্ত্রী-সন্তানরা বাড়িতে থাকায় প্রায় প্রতি মাসেই তিনি গ্রামে যেতেন। তিনি কোনোভাবেই জঙ্গি দলের সদস্য বা সন্ত্রাসী নন। এ জন্য তারা তার লাশটি ফেরত চান।[ads2]
সূত্র:সমকাল