রাজধানীর সেগুনবাগিচা, বিজয়নগর ও জাতীয় প্রেস কাব এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীর কর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল জুমার নামাজের পরপরই মিছিল বের করেন হিযবুত তাহরীর সদস্যরা। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি ছুড়লেই শুরু হয় সংঘর্ষ। মুক্তাঙ্গনে হিজবুত তাহরীরের নির্ধারিত সমাবেশ ও মিছিলকে কেন্দ্র করে ওই সব এলাকা রণেেত্র পরিণত হয়। ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ ও মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের শতাধিক টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও শর্টগানের গুলিতে পথচারীসহ আহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন। এদের মধ্যে সাতজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে পুরানাপল্টনের সুমন নামে (৪০) এক ব্যক্তির অবস্থা আশঙ্কজনক। ঘটনার পরপর ওই সব এলাকা থেকে হিযবুত তাহরীর কর্মী সন্দেহে ৪৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সুমনের অভিযোগ, পুলিশ তার বাসার ভেতরে ঢুকে গুলি চালিয়েছে। এতে তার মুখমণ্ডল, পেট ও বুকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান গুলিবিদ্ধ হয়। শুধু তা-ই নয়, পুলিশ তার পরিবারের ছেলেমেয়েসহ সাতজনকে আটক করে নিয়ে যায়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা পৌনে ২টার দিকে সেগুনবাগিচা জামে মসজিদ থেকে হঠাৎ হিযবুত তাহরীরের শতাধিক কর্মী হাতে ব্যানার, ফেস্টুন, মাথায় কালেমা লেখা ফিতা ও লিফলেটসহ মিছিল নিয়ে পৃথক তিনটি ভাগ হয়ে যায়। তারা সেখান থেকে মিছিল নিয়ে মুক্তাঙ্গন যাওয়ার চেষ্টা করেন। একটি মিছিল বিজয়নগর দিয়ে, আরেকটি বারডেম হাসপাতাল-২ ও প্রেস কাব হয়ে এবং অপর একটি মিছিল সেগুনবাগিচার ভেতর দিয়ে পল্টন হয়ে মুক্তাঙ্গন যেতে চেষ্টা করে। এ সময় একটি মিছিল বারডেম হাসপাতালের সামনে পৌঁছলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পুলিশি বাধা উপো করে হিজবুত তাহরীর নিজস্ব ব্যানারে মিছিল নিয়ে মুক্তাঙ্গন যাওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও শর্টগানের গুলি ছোড়ে। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ধরে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে চেষ্টা করে পুলিশ। একপর্যায়ে হিযবুত তাহরীর কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ও ককটেল ছোড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ তাদের আর্মড পারসোনাল ক্যারিয়ার (এপিসি) গাড়ি নিয়ে ধাওয়া করলে মিছিলকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে আশপাশের অলিগলি ও বিভিন্ন ভবনে আত্মগোপন করে। পুলিশ পরে অভিযান চালিয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির পাশের একটি ভবনে লুকিয়ে থাকা ১৪ জন হিযবুত তাহরীর কর্মীকে আটক করে নিয়ে যায়।
একই সময়ে মৎস্য ভবন মোড় হয়ে হাইকোর্টের কদম ফোয়ারার সামনে একটি ঝটিকা মিছিল বের করেন হিযবুত তাহরীর কর্মীরা। এ সময় পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। পুলিশের গুলিতে ওবায়দুর রহমান (২৫), মনিরুল ইসলাম (৩০) ও মামুন গুলিবিদ্ধ হন। মিছিলকারীদের ধাওয়া করে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ সাতজনকে আটক করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়।
এ দিকে বেলা সোয়া ২টার দিকে বিজয় নগরে আরেকটি মিছিল বের করে হিযবুত তাহরীর কর্মীরা। মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি ছোড়ে পুলিশ। এতে আবুবকর সিদ্দিক, আবু হেনা সুমন, মাহাদিউজ্জামানসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হন। এ ছাড়া ঘটনাস্থল থেকে আরো ৯ জনকে আটক করে পল্টন থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। হিযবুত তাহরীর কর্মীরা ছত্র ভঙ্গ হয়ে ওই এলাকায় বিভিন্ন গলিতে আশ্রয় নিলে পুলিশ বাসাবাড়িতে ঢুকেও গুলি চালায়। এতে সুমন নামের এক ব্যক্তি আহত হন। আশঙ্কজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত সুমন বলেন, দুপুরে পুলিশ তার ২/২ পুরানা পল্টনের বাসায় ঢুকে তাকে গুলি করে। এ ছাড়া তার পরিবারের ছেলেমেয়সহ সাতজনকে আটক করে নিয়ে যায়।
শাহবাগ থানার পেট্রোল ইন্সপেক্টর শহিদুল ইসলাম জানান, আটক ব্যক্তিদের শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে কাফনের কাপড়, ব্যানার, ফেস্টুন ও সরকারবিরোধী স্লোগান সংবলিত লিফলেট পাওয়া গেছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মনিরুল ইসলাম জানান, তিনি ঢাকা বিশ্বদ্যিালয় থেকে পরিসংখ্যানে মাস্টার্স শেষ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছেন। সংঘর্ষের সময় তিনি ওই পথ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় পুলিশ তাকে ধরে বাম পায়ে গুলি করে।
গুলিবিদ্ধ ওবায়দুল ইসলাম জানান, তিনি একটি হোটেলে বয়ের কাজ করেন। পুলিশের ছোড়া শর্টগানের গুলির স্প্রিন্টার তার গলা ও মুখে বিদ্ধ হয়। ওবায়দুল জানান, তিনি এয়ারপোর্ট রোডের বিসমিল্লাহ বিরানি হাউজের বয় হিসেবে কাজ করেন। পুলিশ হিযবুত তাহরীর কর্মী সন্দেহে তাকে আটক করে।
হিজবুত তাহরীরের কর্মী মোহাম্মদ জাফর বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়ার অপসারণ দাবিতে তাদের মুক্তাঙ্গনে নির্ধারিত সমাবেশ করতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। লিফলেটে দেখা গেছে ‘হাসিনা-খালেদা নিপাত যাক, দেশবাসী মুক্তি পাক’।. তাতে আরো লেখা রয়েছেন ‘হে দেশবাসী, আওয়ামী লীগ-বিএনপি শাসকগোষ্ঠীকে অপসারণ করে হিযবুত তাহরীরের নেতৃত্বে খেলাফত প্রতিষ্ঠায় সামরিকবাহিনীর নিষ্ঠাবান অফিসারদের নিকট দাবি তুলুন এবং এ দাবিতে রাজপথে নেমে আসুন।’
মুক্তাঙ্গনে শুক্রবার বেলা আড়াইটায় সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছিল হিযবুত তাহরীর। কর্মসূচির জন্য তৈরি লিফলেটে বলা হয়, ‘হে দেশবাসী, আওয়ামী লীগ-বিএনপি শাসকগোষ্ঠীকে অপসারণ করে হিযবুত তাহরীরের নেতৃত্বে খেলাফত প্রতিষ্ঠায় সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠাবান অফিসারদের নিকট দাবি তুলুন এবং এ দাবিতে রাজপথে নেমে আসুন।’ এ ছাড়া সরকারবিরোধী নানা স্লোগান, আরবি হরফে কালেমা ও দেশরক্ষায় সেনা অফিসারদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
সূত্রঃ নয়াদিগন্ত