ঢাকা: নির্ধারিত সময়সীমার তিন দিন পর আজ রোববার দিবাগত রাতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি আবেদনের প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশের কথা জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর আগে চার দফা সময় দিয়েও ফল প্রকাশে ব্যর্থ হয়েছে মন্ত্রণালয়। আর এসব ব্যর্থতার দায়ভারও নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান।
তবে এত কিছুর পরও রোববার রাতে ফল প্রকাশ নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। কারণ, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা নানা ধরনের জটিলতার মধ্যে কাজ করছেন। তারা ফলাফল নির্ভুল না হওয়ার আগ পর্যন্ত ফল প্রকাশ করতে রাজি নন। কিন্তু কাজের সর্বশেষ অগ্রগতি অনুযায়ী, রাতে ফলাফল ঘোষণা করলে ভুল হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান বাংলামেইলকে বলেন, ‘বুয়েটের সফটওয়্যারে ২ থেকে ৩টি বাগ বা ভাইরাস ধরা পড়েছে। এছাড়া বেশ কিছু কারিগরি ত্রুটিও রয়েছে। এসব কারণেই ফল প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে।’
বর্তমানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন কমিউনিকেশন টেকনোলজিতে (আইআইসিটি) ফলাফল প্রকাশের জন্য কাজ চলছে। প্রথমে বুয়েটের অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি দল ফল প্রকাশের কাজ শুরু করে। পরে গতকাল শনিবার থেকে বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের দল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ফল প্রকাশের জন্য কাজ করে চলছে।
কর্মরতদের একটি সূত্র বাংলামেইলকে জানান, ফলাফল প্রকাশে বিলম্বের জন্য বুয়েটের সফটওয়্যারের ভাইরাস বা কারিগরি ত্রুটির যে কথা বলা হচ্ছে সেটা পুরোপুরি সঠিক নয়। মূলত, ভর্তির আবেদনের শেষ দিন ছিল ১৮ জুন, পরে সেখান থেকে তিন দিন বাড়িয়ে ২১ জুন করা হয়। কিন্তু ফল প্রকাশের তারিখ ২৫ জুনই রাখা হয়। ফলে শিক্ষাবোর্ডগুলো যথাসময়ে তাদের তথ্য-উপাত্ত বুয়েটের দলটির কাছে পৌঁছাতে পারেননি, এটা ফল প্রকাশের বিলম্বের অন্যতম কারণ।
সূত্রটি আরো জানায়, কাজের যা অগ্রগতি তাতে রোববার রাতেই ফল প্রকাশ করলে নানা ধরনের ত্রুটি থাকার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। তারা চাচ্ছেন, একেবারে নির্ভুল একটি ফলাফল প্রকাশ করতে।
এদিকে ফল প্রকাশের বিলম্বের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে পাওয়া গেছে বিচিত্র সব তথ্য। এর মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন কলেজের প্রতারণার স্পষ্ট চিত্র। তারা নিজেরাই নিজেদের মতো করে শিক্ষার্থীদের হয়ে আবেদন করেছে। পরে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবোর্ডগুলোতে অভিযোগ করলে তা সমাধান করার চেষ্টা করা হয়। এ সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার বলে সূত্র জানায়।
এছাড়াও মেধাবী অনেক শিক্ষার্থী ভুলক্রমে বা অন্যের ভুলের শিকার হয়ে যোগ্যতা অনুযায়ী কলেজে আবেদন করতে পারেনি। সেখানে বোর্ড কর্তৃপক্ষ স্বপ্রণোদিত হয়ে যোগ্যতা অনুযায়ী মেধাবী শিক্ষার্থীদের কলেজ নির্বাচন করে দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি অনেকেই কলেজগুলোতে ভর্তির যোগ্যতা না দেখেই অনলাইনে সেই কলেজে আবেদন করেছেন। এ সংখ্যাও প্রায় ৩০ হাজারেও মতো বলে জানা গেছে।
ফলাফল প্রকাশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানায়, বিভিন্ন কলেজে নানা কোটা রয়েছে। এর মধ্যে ‘স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ এর অন্তর্ভুক্ত কলেজগুলোর স্কুল কোটা, বিভিন্ন সংস্থার কলেজগুলোতে পোষ্য কোটা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা রয়েছে। এসব কোটার বিষয় ভর্তি আবেদনের সফটওয়্যারে প্রথমে ছিল না। পরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটাও ফল প্রকাশে বিলম্বের অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে।
সূত্রটি জানায়, ২০১৫ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সোয়া এক লাখ শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদনই করে নাই। আবেদনকারীদের পছন্দের কলেজগুলোর মধ্যে রয়েছে- রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা কলেজসহ রাজধানীর বড় কলেজগুলো। সারাদেশের প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কলেজে অনলাইনে ভর্তি আবেদন করার প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়েছে। এর মধ্যে ৯৯৯টি কলেজে বিশ জনের কম শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন করেছে এবং ২১০টি কলেজে ৫ বা তার নিচে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয় ৬ জুন। পরে সময় বাড়িয়ে ভর্তি আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হয় ২১ জুন। এবার অনলাইনে (www. xiclassadmission. gov. bd) এবং বিকল্প হিসেবে আগের মতো এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন গ্রহণ করা হয়। অনলাইনে সর্বোচ্চ পাঁচটি কলেজের পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করা নিয়ম ছিল।
এছাড়াও এসএমএসের মাধ্যমে ইচ্ছামাফিক কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পেরেছে। এখান থেকে ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীকে ভর্তির জন্য কলেজ নির্ধারণ করে দেবে স্ব-স্ব শিক্ষাবোর্ড। দুই প্রক্রিয়াতে মোট ১১ লাখ ৫৬ হাজার শিক্ষার্থী প্রায় ৩৩ লাখ আবেদন করে। ২৭ থেকে ৩০ জুনের মধ্যে ভর্তি শেষে ১ জুলাই একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরুর কথা ছিল। কিন্তু ফল প্রকাশে বিলম্বের কারণে সবই পিছিয়ে যাবে।