ঢাকা: যুদ্ধাপরাধের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে আজ রাতেই। এদিকে মঙ্গলবার রাত ১২ টা এক মিনিটে তার ফাঁসি হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু।
এর আগে আজ রাত আটটার দিকে কাদের মোল্লার সঙ্গে দেখা করার জন্য তার পরিবারের সদস্যদের চিঠি দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে দুটি সাদা মাইক্রোবাসে (ঢাকা মেট্রো ঘ-০২ ২৯২১ ও চ ৫১ ৪৬৪০) করে পরিবারের ১১ সদস্য কারাগারে গেটে পৌঁছান।
পরিবারের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন ছেলে হাসান জামিল, মেয়ে, স্ত্রীসহ কয়েকজন আত্মীয় স্বজন ও আইনজীবীরা।
প্রস্তুত মঞ্চ:
কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝোলানোর জন্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দুদিন আগেই ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে। কারাগারের দুটি ফাঁসির মঞ্চের একটিকে এ জন্য ধুয়ে মুছে তৈরি করা হয়েছে। ফাঁসির দড়িও ঠিক করে রেখেছে কারা কর্তৃপক্ষ। সোমবার রাতে ফাঁসির মঞ্চে জ্বালানো হয়েছে বিশেষ আলো। এরই মধ্যে কারাগারের অভ্যন্তরে ফাঁসির মহড়াও দেয়া শেষ।
কারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে গেছে, যে দড়িতে কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে, সে দড়িতে কাদের মোল্লার সমপরিমাণ ইটসহ বস্তা বেধে এ মহড়া দেয়া হয়। যাতে কাদের মোল্লাকে ঝোলানোর পরে সে দড়িতে কোন ধরণের সমস্যা তৈরি না হয়।
ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ মঞ্চ পরিদর্শন করেছেন বলেও জানা গেছে।
জল্লাদ যারা:
কাদের মোল্লাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানোর জন্য জল্লাদের তালিকা চূড়ান্ত করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। এ তালিকায় ছয় জল্লাদের নাম এসেছে বলে জানা যায়। কারা সূত্র জানায়, প্রধান জল্লাদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন, ৬০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদী শাহজাহান মোল্লা। এ জল্লাদ ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পাঁচ আসামীকে ফাঁসিতে ঝোলানোর দায়িত্ব পালন করেন।
ফাঁসিতে কাদের মোল্লাকে ঝোলানোর সময় আরও পাঁচ সহকারি জল্লাদকে সঙ্গে রাখা হবে। তাদের সঙ্গে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক ও একজন ম্যাজিস্ট্রেটও উপস্থিত থাকবেন। ফাঁসির আগে কাদের মোল্লাকে ইসলাম ধর্মের রীতি অনুযায়ী ‘তওবা’ পড়ানোর কথা রয়েছে।
যেভাবে কার্যকর হবে রায়: কারাগার সুত্র থেকে জানা যায়, নির্দিষ্ট সময়ে কাদের মোল্লাকে ফাঁসির কাষ্ঠে নিয়ে যাওয়া হবে। কারাগারের তত্ত্বাবধায়কের হাতে এ সময় একটা লাল রুমাল থাকবে। তার হাত থেকে রুমালটি মাটিতে পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফাঁসি কার্যকর হবে। এ সময় জল্লাদ মঞ্চে লোহার তৈরি বিশেষ হাতল (লিভার) টেনে ধরবেন। ফলে কাদের মোল্লার পায়ের তলা থেকে মঞ্চের কাঠ সরে যাবে। ফাঁসিতে ঝোলানোর পর আধাঘণ্টা পর্যন্ত কাদের মোল্লার লাশকে দড়িতে ঝুলিয়ে রাখা হবে।
৫ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতে কাদের মোল্লাকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর কাদের মোল্লাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার-২ থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে গত রোববার মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ থেকে তার মৃত্যু পরোয়ানা গত রোববার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়।
২০১০ সালের ১৩ জুলাই অন্য একটি মামলায় কাদের মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই বছরের ১৪ অক্টোবর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তদন্ত শুরু হয় ২১ জুলাই।
২০১২ সালের ২৮ মে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ৩ জুলাই থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ৫ ফেব্রুয়ারি তাকে যাবজ্জীবন সাজার রায় দেন ট্রাইব্যুনাল-২।
এরপর আপিলের শুনানি শেষে গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতে আবদুল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন।
এইচ এন