জীবন বড়ই বিচিত্রময়।কার জীবনে কখন কি চলে আসে বোঝা বড় দায়।জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে বেঁচে ফেরা সেই বহুল আলোচিত সাভার ট্রাজেডির রেশমা এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।হয়ত স্বপ্নের মাঝেও আজকের বাস্তবতাকে ঘুরে দেখার সাহস ছিল না তার।
মাত্র আট মাসের কম সময়েও জীবন কতো বর্নাঢ্যময় হয়ে উঠতে পারে, এর অন্যতম প্রমাণ গার্মেন্ট কন্যা এই রেশমা। ঢাকার সাভারে ধসে পড়া আলোচিত রানা প্লাজা ভবনের করুণ ঘটনার সঙ্গে উঠে আসে তার নাম। তবে এখন আর ‘করুণ’ চোখে তাকানোর মতো জীবন নয় তার। যথারীতি বিলাসবহুল জীবন। আট মাসের কম সময়েও জীবন এতো বদলে যায়!
দামি গাড়িতে চড়ছেন রেশমা। থাকেন রাজধানীর গুলশানের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে। আধুনিকতায় ভরা জীবন তার। সমাজের উঁচু তলার মানুষরা আছেন তার বন্ধু, স্বজন, শুভাকাঙ্খী, পরিচিতজনের তালিকায়। চাকরি করছেন ঢাকার পাঁচতারা হোটেল ওয়েস্টিনে। সামাজিক অবস্থানও তার অকল্পনীয় পর্যায়ে।
খেয়ে, না খেয়ে যে রেশমাকে সকালে ঘুম থেকে জেগে দৌড়াতো হতো গার্মেন্টে, সেই রেশমার এখন অনটন নেই। যেই রেশমা চিনতেন কমদামি কিছু লিপিস্টিক, টিপ, সেই রেশমা এখন জানেন দেশি, বিদেশি সব মদের নাম। যেই রেশমা গ্রাম্য মেলা থেকে কিনতেন কানের দোল, মানহীন কাচের রেশমি চুরি, এখন তার চাই জগতখ্যাত ব্র্যান্ডের জিনিসপত্র। সবমিলিয়ে রেশমা এখন বিস্ময়ের নাম!
প্রতিদিনের সকালে ঘুম থেকে উঠে গার্মেন্টস এর কাজ, আর রাত শেষে নিষ্পেষিত মানুষের সাথে নাম মাত্র ঘুম।আর খাওয়া?সে তো হলেই হয়।দু’বেলা না খেয়ে একবেলা তো খাওয়া হয়।আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান শিল্প খাতের এই গার্মেন্টস কর্মীদের জীবন টা অনেকটা এভাবেই কেটে যায়।
চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে আটটার দিকে রানা প্লাজা ভবন ধসের ঘটনা ঘটে। বিশ্বের ইতিহাসে ভয়াবহতম শিল্প দুর্ঘটনার একটি হিসেবে চিহ্ণিত হয়েছে ভয়াবহ ওই ভবনধস। দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের রেশমা রানা প্লাজার ভবনের একটি গার্মেন্টে কাজ করতেন। ভবনটি ধসের ১৭ দিন পর ১০ মে ধ্বংসাবশেষ থেকে তিনি উদ্ধার হন। এ ঘটনা সারাবিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি করে।
এমন ঘটনায় বাংলাদেশসহ পুরো দুনিয়ার কোটি কোটি মানুষ বিমোহিত হয়ে পড়েন। একটি জীবনের জয়গানে তারা ভুলে যান রানা প্লাজা ভবন ধসে ১১২৭টি তাজা প্রাণের লাশ হয়ে যাওয়ার দুঃখ! সর্বত্র চলে হই-হুল্লোড়। শুধু দেশিয় নয়, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও রেশমার সংবাদকে গুরুত্ব দেয়। বাহবা কুড়ায় সরকার!
তবে রেশমাকে নিয়ে দেশ, বিদেশে সরকারকে বেশ হোঁচটও খেতে হয়। গত ২৩ জুন দৈনিক আমার দেশ’র অনলাইন সংস্করণে প্রতিবেদন প্রচারিত হয়, ‘রানা প্লাজা ট্রাজেডি: রেশমা উদ্ধার নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য’ শিরোনামে।
আমার দেশ’র প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ‘গত ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর প্রথম দিনই ভবনের ভেতর থেকে আহত অবস্থায় বের হন রেশমা। তাকেই আবার কথিত ১৭ দিন পর উদ্ধার করা হয়।… রেশমা উদ্ধারের কাহিনী ছিল একটি সাজানো নাটক।’
আমার দেশ’র পর লন্ডনের ডেইলি মিররও একই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তবে প্রতিবেদন দুটির প্রতিবাদ জানানো হয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে।
থেমে থাকে না মানুষের জীবন,চলে যাবে দিন, চলে যাবে রাত।এটাই তো জীবনের নিয়ম।আর সেই নিয়মকে ভাগ্যের চাকা দিয়ে অনেকটা উল্টো দিকে ঘুরিয়ে রেশমা এখন সমাজের সেই উঁচু স্তরের একজন।