চট্টগ্রাম শহরে এখন হাঁটলেই চোখে পড়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) তৈরি করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত বেশকিছু বিলবোর্ড। এসব বিলবোর্ডে সিডিএ-এর চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের ছবি ও চট্টগ্রামের উন্নয়ন বিষয়ে বেশ কিছু স্লোগান রয়েছে। গত কয়েক বছরে উন্নয়নের অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণ হয়েছে। আর সেসব স্থাপনার পাদদেশে শোভা পাচ্ছে স্লোগান সম্বলিত ওইসব ব্যানার ও বিলবোর্ড।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় অংশ নিয়েছেন পরিবর্তনের নিজস্ব প্রতিবেদক আমিনুল ইসলাম মিঠু ও চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান সালেহ নোমান।
পরিবর্তন : কেমন আছেন?
আবদুচ ছালাম : ভালো…তবে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চলছে সেগুলো নিয়ে ব্যস্ততায় দিন কাটছে।
পরিবর্তন : আপনি তো প্রায় পাঁচ বছর যাবত চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অনেক উন্নয়ন করেছেন চট্টগ্রামের। তা কিভাবে সম্ভব হলো?
আবদুচ ছালাম : আপনাকে ধন্যবাদ। আসলে পাঁচ বছর অতিবাহিত হতে চলেছে। ২০০৯ সালের ২৩শে এপ্রিল আমি সিডিএতে যোগ দেই। আপনারা জানেন আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমার প্রাণপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে আমি মনোনয়ন নিয়েছিলাম। কিন্তু মহাজোটের কারণে সে মনোনয়ন আমি প্রত্যাহার করি। যার কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে সিডিএর দায়িত্ব দিয়েছেন। যেদিন দায়িত্ব নিয়েছি, সেদিন আমি সবার সামনে ঘোষণা করেছিলাম- ‘সিডিএ ইজ ফর চিটাগাং’ মানে ‘সিডিএ শুধু চট্টগ্রামের’। আমার আরেকটা ঘোষণা ছিল, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে বিশ্বাস নিয়ে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি সে বিশ্বাস রক্ষা করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাব। আমি দায়িত্বকালীন সময়ে আজ যখন পাঁচ বছর অতিবাহিত হতে যাচ্ছে, আমি অত্যন্ত আনন্দিত। কারণ আমি চেষ্টা করেছি চট্টগ্রামের উন্নয়নে, আল্লাহপাকের রহমতে সফল হয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ওনার আগ্রহ, আন্তরিকতা, সর্বোপরি চট্টগ্রামের মানুষের সীমাহীন সহযোগিতা আমাকে সাহস জুগিয়েছে।
আমি দুঃসাহসিক কাজে যখন হাত দেই, তখন একসাথে অনেকগুলো প্রকল্প, রাস্তা, ফ্লাইওভার, কালভার্ট, ড্রেন, ডরমেটরি, শপিং কমপ্লেক্স, আবাসন, ফ্ল্যাট সব মিলিয়ে বিশাল এক কর্মষজ্ঞ শুরু করেছিলাম। অনেকের কাছে যা অবিশ্বাস্য ছিল, বিশ্বাসই করতে পারেনি, আমি তা শেষ করতে পারবো..!
তবে আমার বিশ্বাস, সততা ও আন্তরিকতার সাথে কেউ কাজ করলে আল্লাহ-পাক তাকে সাহায্য করেন, এটা প্রমাণিত হলো। আমি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান ২০১০ সালের ২রা জানুয়ারি বহদ্দারহাট চত্বরে মাননীয় প্রধামন্ত্রীর মাধ্যমে সংস্কার কাজের শুভ সূচনা করেছিলাম এবং ২০১৩ সালের ১২ই অক্টোবর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমেই সবগুলো প্রকল্প শুভ উদ্বোধন করাতে পেরেছি। এটা বিশাল একটা ভাগ্যের ব্যাপার..!
পরিবর্তন : সে সময় সিডিএর উন্নয়ন কাজের সূচনা কেমন ছিল?
আবদুচ ছালাম : আমি উন্নয়ন পরিকল্পনা ৪১টি ওয়ার্ডকে সংযুক্ত করে সাজিয়ে এমনভাবে কাজ শুরু করেছিলাম, যাতে কোনো ওয়ার্ড যেনো পরিকল্পনা থেকে বাদ না পড়ে। এমনকি কোনো ওয়ার্ডের মানুষ যাতে বলতে না পারে আমাদেরকে বাদ দেয়া হয়েছে। আজ পর্যন্ত আমার অক্লান্ত পরিশ্রম ও কাজের অভিজ্ঞতা বৃথা যায়নি। সে দৃষ্টিকোণ থেকে আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, চট্টগ্রামের মানুষ এত উন্নয়ন একসাথে আগে কখনো দেখেনি। যা তাদের কাছেও অবিশ্বাস্য লেগেছে, আমি তা শেষ করতে পারবো কিনা…ইনশাল্লাহ আমি সেই কাজ শেষ করেছি এবং এখন নতুনভাবে আরো উন্নয়ন কাজ শুরু করেছি।
পরিবর্তন : সকল উন্নয়ন কাজ শুরু করে শেষ করতে আপনার অনুপ্রেরণা কী ছিল?
আবদুচ ছালাম : আমি প্রত্যেকটি উন্নয়ন কাজ শুরু করার পর একটা ঝুঁকিপূর্ণ স্লোগান দিয়েছিলাম যে, ‘উন্নয়নের মহোৎসব নিয়ে বদলে যাচ্ছে চট্টগ্রাম’। কতগুলো কাজ শেষ করেছি, কতগুলো কাজ চলমান এবং আরো কতগুলো উন্নয়নমূলক কাজ প্রক্রিয়াধীন। আমার বিশ্বাস, চট্টগ্রামের ৬০ লাখ মানুষ আমার স্লোগানকে বিশ্বাস করেছে। তারা বিন্দুমাত্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাইনি। অনেকে বলতে পারতো এগুলো উচ্চভিলাসী। কেউ কেউ যে বলেনি তাও না। মানুষ আমার এ ঝুঁকিপূর্ণ স্লোগানকে প্রতারণাও বলতে পারতো। কিন্তু সবকিছু মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রামের মানুষ আমার ওপর বিশ্বাস করেছেন। আমার কার্যক্রমকে গ্রহণ করেছেন।
পরিবর্তন : এখন তো অনেকগুলো উন্নয়মূলক কাজ শেষে করেছেন, নতুন কাজও শুরু করতে যাচ্ছেন। এ বিষয়গুলো কিভাবে মূল্যায়ন করছেন?
আবদুচ ছালাম : উন্নয়নমূলক কাজ যখন শেষ পর্যায়ে তখন আমি ঘোষণা করেছিলাম ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার অবদান উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে চট্টগ্রাম’ আমি চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন পেয়েছিলাম। এটা অবিশ্বাস্য লাগে কারণ এতগুলো টাকা দিয়ে আমি কী করে শুরু করলাম, কোন সাহসে..কিভাবে শেষ করলাম…!
আমি বলবো, উন্নয়ন চলমান প্রক্রিয়া। এক সরকারের আমলে তা পুরোপুরি শেষ করা সম্ভব না। তবে উন্নয়নের যে গতি আমি সৃষ্টি করেছি, আশা করি তা অব্যাহত থাকলে, আগামী পাঁচ বছরে চট্টগ্রাম উন্নয়নের ক্ষেত্রে ৫০ বছর এগিয়ে যাবে। এটা আমার বিশ্বাস…।
পরিবর্তন : এ অবস্থায় আপনার সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ কী? নতুন কী কী কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছেন?
আবদুচ ছালাম : আগামী পাঁচ বছরে চট্টগ্রামে ৫০ বছরের উন্নয়ন বাস্তবায়নের লক্ষ্য মাথায় রেখে আমি নতুন স্লোগান দিয়েছি- ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার অবদান, উন্নয়নের মহাসড়কে চট্টগ্রাম’। এ স্লোগানটার কারণ হলো, আমরা যে কার্যক্রমগুলো শুরু করতে যাচ্ছি, তা অনেক বিশাল-বিশাল…যেমন- পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত সিটি আউটার রিং রোড ১৭০০ কোটি টাকার প্রজেক্ট। একসাথে এককালীন এ প্রকল্পের জন্য ৪০০ কোটি টাকা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যা ইতিহাসে নাই..!
এরপর মুরাদপুর থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত ফ্লাইওভার করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন ৪৬২ কোটি টাকা। যার নাম দেয়া হয়েছে- ‘আকতারুজ্জামান ফ্লাইওভার’। বায়েজিদ রোড থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বাইপাস রোড করা হবে, চট্টগ্রামের মানুষ দীর্ঘ ৪২ বছরে বাইপাস রোডের মুখ দেখে নাই..! কিন্তু দেখা যায়, দেশের সকল জেলা-উপজেলা সব-পর্যায়েই বাইপাস করা হয়েছে…। কিন্তু চট্টগ্রামের মানুষ এত র্দুভাগা, একটা গুরুত্বপূর্ণ শহর হওয়া সত্বেও বাইপাস রোড গত ৪২ বছরে হয় নাই। এই প্রথম বায়েজিদ রোড থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বাইপাস রোড করা হচ্ছে।
পরিবর্তন : সিডিএর আর কী কী উন্নয়ন প্রস্তাব রয়েছে?
আবদুচ ছালাম : কর্ণফুলী নদীর ওপর টানেল করা আমার একটা প্রস্তাব ছিল। এটার ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ। আমি কয়েকদিন আগে মাননীয় যোগাযোগ মন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি। আমি উনাকে বললাম, এ প্রকল্প স্বপ্ন না বাস্তব…তিনি আমাকে বলেছেন, ‘আপনি নির্দ্বিধায় বলতে পারেন…অ্যার্ভিথিং ডান…এ প্রকল্প আমাদের সরকারের মেয়াদ কালেই শুরু হবেইনশাল্লাহ। এবং আমাদের সরকারের মেয়াদকালেই শেষ হবে। আমি তা করার জন্য চেষ্টা করবো। তারপর গত ২০১৩ সালের ১২ই অক্টোবর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করলেন, ‘চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট থেকে শাহ-আমানত ব্রিজ পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার এলিভেটর এক্সপ্রেসওয়ে হবে।’ যা শাহআমানত বিমানবন্দর থেকে বারিকবিল্ডিং-আগ্রাবাদ-জিইসি-মুরাদপুর হয়ে শাহ আমানত ব্রিজে গিয়ে শেষ হবে।
পরিবর্তন : কতটি প্রকল্প এখন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে?
আবদুচ ছালাম : এই যে পাঁচটা প্রকল্পের কথা বললাম। এর মধ্যে তিনটি আমরা আগামী দু-তিন মাসের মধ্যেই কাজ শুরু করবো।
এক- পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত রিং রোড, দুই- বায়েজিদ থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বাইপাস রোড, তিন- মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ফ্লাইওভার। এ তিনটির অনুমোদন হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে এ বছরের যা বাজেট সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় টাকাও পেয়ে গেছি। চলমান অর্থ বছরেই কাজ শুরু হচ্ছে। এর মানে দাঁড়ালো, এ প্রকল্পগুলো অনুমোদিত, টেন্ডার হয়ে গেছে, এখন কাজ শুরু…
তবে পাঁচটি প্রজেক্টের মধ্যে বাকি দু’টি প্রজেক্ট প্রক্রিয়াধীন রয়েছে- ‘কর্নফুলীতে টানেল ও এলিভেটর এক্সপ্রেসওয়ে’। আমি মনে করি, যদি এ পাঁচটি প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে যে কথাটি বলছিলাম যে, আগামী পাঁচ বছরে চট্টগ্রাম ৫০ বছর এগিয়ে যাবে তা কি বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে…? আর যে স্লোগান দিয়েছি- ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অবদান উন্নয়নের মহাসড়কে চট্টগ্রাম’ এটা কি মানুষ অবিশ্বাস করবে? সুতরাং মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারলেই অসাধ্য সাধন করা সম্ভব।
পরিবর্তন : প্রস্তাবিত টানেল নির্মাণে কত খরচ হবে?
আবদুচ ছালাম : প্রায় সাত হাজার কোটি টাকার মত। তবে এটা সরকারি অর্থে নির্মিত হবে না। চীনের সাথে আলোচনা হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রী মহোদয় জানিয়েছেন। এমনকি চীন ইতোমধ্যেই প্রস্তাব দিয়ে ফেলেছে। তারা বলেছে, ইফ দ্যা প্রজেক্ট ইজ ভায়াবেল দ্যান ফান্ড ইজ নট প্রবলেম। তো এখানে প্রজেক্ট তো ভায়াবেল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে টানেল হলে কী উপকার হবে?
এখানে আপনাকে জানিয়ে রাখি, টানেলটি হলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা কর্ণফুলীর পাশ থেকে বিস্তৃত টেকনাফ…। এ সম্ভবনা যদি কাজে লাগাতে পারি তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই দক্ষিণ চট্টগ্রাম বিশাল অবদান রাখবে। কারণ পর্যটন শিল্প, এশিয়ান হাইওয়ে, ডিপ সি পোর্টসহ সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডই দক্ষিণ চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে। সুতরাং দক্ষিণ চট্টগ্রামকে যদি পোর্টের সাথে কানেকটিভিটি করাতে পারি, তাহলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃদপিণ্ডে প্রবেশ করবে। সবকিছু বিবেচনায় তো এসব প্রকল্প উন্নীত হলে আমার বিশ্বাস চট্টগ্রাম ৫০ বছর এগিয়ে যাবে। চট্টগ্রামের গুরুত্ব অদূর ভবিষতে বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে এবং চট্টগ্রাম ইকোনোমিক জোনে পরিণত হবে।
পরিবর্তন : চট্টগ্রাম শহরের মাস্টার প্ল্যান সম্পর্কে বলুন…
আবদুচ ছালাম : মাস্টার প্ল্যান হলো উন্নয়নকে পরিকল্পনার আওতায় আনা। আগে যে মাস্টার প্ল্যান করা হয়েছিল, তা ফেলে দেয়ার মতো না। কারণ সেটাও উন্নয়নে অবদান রাখছে। তবে আমি চাই নতুন মাস্টার প্ল্যানের সাথে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে। যা তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু হবে। যেমন আগের মাস্টার প্ল্যানে ছিল ১২টি জোন। কিন্তু আমি বললাম, না, ৪২টি ওয়ার্ডে ৪১টি জোন হোক। এবার এ ৪১টি ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, সংগঠন, সুশীল সমাজসহ সকল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের মতামতের ভিত্তিতে এ মাস্টার প্ল্যান ২০১৫ সালে রিভিউ করতে পারি। কারণ প্রতিটা ওয়ার্ডের প্রতিনিধিরা বলতে পারবেন ওই ওয়ার্ডে আগের মাস্টার প্ল্যানে কী কী ছিল। কিন্তু এটা অন্য কেউ বলতে পারে না এবং জানেও না। তাই প্রত্যেকটি ওয়ার্ডকে সম্পৃক্ত করতে আমরা কাজ শুরু করেছি।
পরিবর্তন : এতে মানুষের আগ্রহ বা রেসপন্স কেমন পাচ্ছেন এবং কী পদ্ধতিতে কাজ চলছে?
আবদুচ ছালাম : বিশাল রেসপন্স পেয়েছি। মানুষের যে আগ্রহ তাতে আমি অবাক হয়েছি। তবে এর জন্য আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করেকমিটি গঠন করেছি। বর্তমান কাউন্সিলর, সাবেক কাউন্সিলর ও নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলরসহ প্রত্যেক শ্রেণি-পেশার মানুষের সমন্বয়ে ২০ জনের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এবং তারা নিজ নিজ এলাকার লোকজন নিয়ে আমাদের সাথে পুরো প্ল্যান নিয়ে আলোচনা করে ঠিক করে দেবেন প্ল্যান অনুযায়ী কোথায় কী হবে।
২০ জনের কমিটি সংযোজন-বিয়োজন করে লিখিতভাবে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রস্তাব দেবেন। আমরা তা ফাইল করে রেকর্ড করবো। ফলে আমি থাকি বা না থাকি অন্য কেউ আসলে বা বিদেশ থেকে লোক আসলে তারা ওই রেকর্ড বিবেচনা করে কাজ করতে সুবিধা হবে। তাহলেই মাস্টার প্ল্যান এফেকটিভ হবে।
তবে একটা দুঃখের বিষয় হলো, চট্টগ্রামের মানুষ গত ৪২ বছরে প্রকৃত উন্নয়ন দেখে নাই। মাস্টার প্ল্যানের মত এ বিশাল কর্মষজ্ঞের ব্যাপারে তারা কখনও ভাবেনি।
পরিবর্তন : মাস্টার প্ল্যান কবে নাগাদ শুরু হবে?
আবদুচ ছালাম : কাজ শুরু হয়ে গেছে। ইতোমধ্যেই ১০টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ২০ বছরের জন্য এ মাস্টার প্ল্যান করা হবে। ২০১৫ সালে শুরু হয়ে শেষ করতে এক বছরের মত সময় লাগবে। তবে বলে রাখি এ প্ল্যানের ফলে জনসাধারণের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভবনা নেই। তারপরও এটা নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা হবে।
পরিবর্তন : চট্টগ্রামের মানুষের কোন দিকটি আপনাকে অনুপ্রাণিত করে?
আবদুচ ছালাম : দেশ ও জাতির স্বার্থে যে ত্যাগ চট্টগ্রামের মানুষ গত পাঁচ বছরে করেছে তা অবিশ্বাস্য…বাংলাদেশের ইতিহাসে এর কোনো নজির নেই, যে একটা টাকা না নিয়ে চট্টগ্রামের মানুষ উন্নয়নের নিজের জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন…এক টাকাও এডভান্স না নিয়ে বহদ্দার হাটে সংস্করণের জন্য মানুষ নিজ জায়গা আমাকে ছেড়ে দিয়েছেন। যে রোড ডেড ছিল ঢাকা ট্রাঙ্ক রোড। এর কাজ শুরুর সময় আমি স্থানীয় মানুষের কাছে গিয়েছি তাদেরকে বুঝিয়েছি। তারা আমার কথা বিশ্বাস করেছেন। আমাকে জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন। এ রোডের ১০০ পারসেন্ট কাজ শেষ, কিন্তু একটা টাকাও ক্ষতিপূরণ এখনো দেই নাই। ৪০ কোটি টাকা পায় মানুষআমার কাছে…সরকার যা দেয় তা দিয়ে কাজ করেছি। সরকার দেয় তো আস্তে আস্তে…চট্টগ্রামবাসীর এ ঋণ আমি শোধ করতে পারবো না। জানি না পারবো কিনা আল্লাহ পাক যদি সুযোগ দেয় তবে চট্টগ্রামবাসীর এ ঋণ আমি শোধ করবো…
পরিবর্তন : অসহজলোভ্য ও ব্যয়বহুল কাজ কী উপায়ে সহজ করে তুলেছেন?
আবদুচ ছালাম : আমি এত সব কিছু করতে পেরেছি, কারণ তিনটি ব্যাপার কাজ করেছে, এক- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা আমাকে সাহস জুগিয়েছে, দুই- চট্টগ্রামের ৬০ লাখ মানুষের সীমাহীন সহযোগিতা, তিনি- আমার সততা।
এছাড়া, আমার মিনিস্ট্রি থেকে শুরু করে আমার সিডিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সহযোগিতা রয়েছে। সিডিএর প্রত্যেকটি কর্মকর্তারা আমাকে নিয়ে সকাল থেকে রাত ৯টা অব্দি অফিসে কাজ করছেন। এমনকি ছুটির দিনেও তারা অফিস করেন। যেখানেই যেই কাজ করেছি তাদের সহযোগিতা পেয়েছি।
পরিবর্তন : আপনার সকল কর্মকাণ্ডের মধ্যে কোন উন্নয়নটি আপনাকে অনুপ্রেরণা দেয়?
আবদুচ ছালাম : চিটাগাং কলেজ রোডের উন্নয়নটি এবং ঢাকা ট্রাংক রোডের কাজটি। বিশেষ করে ঢাকা ট্রাংক রোডের কাজটি আমি মাত্র ৪৫দিনের মধ্যে শেষ করেছিলাম। যদি করতে না পারতাম তবে ২০১০ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট ভেন্যু থেকে চট্টগ্রাম বাদ হয়ে যেত। এখানে একটা বিষয় বলি-চার বছর পার হওয়ার পরও এই রোডটি এখনো যথেষ্ট মজবুত রয়েছে। গত কয়েকদিন আগে টি-২০ বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে পরিদর্শনে গিয়ে দেখি রোডের একটি পাথরও নষ্ট হয়নি। এটাকে বলে কোয়ালিটি…
পরিবর্তন : চট্টগ্রাম শহর বর্ধিত করা হবে কিনা?
আবদুচ ছালাম : চট্টগ্রাম শহরের আওতা বাড়াতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাথে সংযুক্ততা বাড়াতে হবে। টানেল, এলিভেটর এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়ন করে এর মাধ্যমে ইস্ট ও ওয়েস্ট চট্টগ্রামের কানেকটিভিটি উন্নয়ন করতে পারলে চট্টগ্রাম শহরের পরিধি বাড়ানো সম্ভব হবে। তবে ভবিষতে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে তা করা হবে।
পরিবর্তন : এবার ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি, দলের সিদ্ধান্তে রাজনীতিতে কি আবারো সক্রিয় হতে চান কিনা, বা মেয়র নির্বাচন কি করবেন?
আবদুচ ছালাম : দলের সিদ্ধান্ত, আমার নেত্রীর সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নিতেই হবে। এখানে আসার পেছনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছে। এর আগে নমিনেশন উইড্রো করার পেছনেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত। উনার সিদ্ধান্তের বাইরে আমি এক কদমও যাব না। উনি আমাকে কোন দায়িত্ব দিলে তা আমি সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাব।
পরিবর্তন : আওয়ামী লীগের মধ্যে অনেকগুলো দল ও উপদল রয়েছে। শোনা যাচ্ছে আপনিও এ সকল দলে রয়েছেন।
আবদুচ ছালাম : এটা বড় দলে হয়ে থাকে। তবে কোনো একটা সিদ্ধান্তে গেলে সকলে এক হয়ে যায়। যেমন ধরেন, নির্বাচন, যেকোনো নির্বাচনে বড় দলগুলোতে এমন হবেই। তবে প্রয়োজনবোধে সবাই এক হয়ে যায়।
পরিবর্তন : সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথেও তো আপনার কিছুটা দ্বিমত ছিলো?
আবদুচ ছালাম : আমি এমন একটা জায়গায় কাজ করি যেখানে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। এখানে কারো সাথে কোনো ধরনের বিভাজন বা মনে কষ্ট দিয়ে আমার কাজে মানানসই না।
পরিবর্তন : দলের ভেতর আপনাকে নিয়ে কোন্দল আছে কিনা?
আবদুচ ছালাম : যেহেতু দলের পরিচয়ে আমি চলি তাই দলের ভেতরে এমন কোনো নেতা নেই আমাকে ভালোবাসে না। আপনি দেখেন দল-মত নির্বিশেষে ৬০ লাখ মানুষ মন দিয়ে আমার জন্য দোয়া করে বলে আমার মনে হয়।
পরিবর্তন : সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আবদুচ ছালাম : আপনাদেরও ধন্যবাদ।
এক নজরে আবদুচ ছালাম
কর্ণফুলীর কূলঘেঁষা গ্রাম মোহরা গ্রামে ১৯৫১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর অতি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে আবদুচ ছালামের জন্ম। তার পিতা মরহুম আবদুর রশিদ এবং মাতা মাবিয়া খাতুন। ৬ ভাই ও ৪ বোনের পরিবারে তিনি দ্বিতীয়। ভাইদের মধ্যে সবার বড়। পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে অভাব-অনটনের মধ্যে বড় হয়েছেন। ১৯৬৭ সালে তিনি এ এল খান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৬৯ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম সিটি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। এরপর একই কলেজে বি.কম -এ ভর্তি হন। কিন্তু ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করতে গিয়ে বাড়ি ছাড়া হন। চলে আসেন নগরীর দক্ষিণ নালাপাড়ায়।
দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাসায় লজিং থেকে একই কলেজ থেকে ১৯৭১ সালে (পরীক্ষা হয় ১৯৭২ সালে) কুমিল্লা বোর্ডের ১১তম স্থান নিয়ে বি.কম পাস করেন। এরপর তিনি এমকম পড়ার জন্য ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। এম.কম পড়াকালীন আবদুচ ছালাম ১৯৭২ সালে তার তৎকালীন শিক্ষক মরহুম প্রফেসর নুরুল বারী চৌধুরীর পরামর্শে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে কর্ণফুলী পেপার মিল থেকে কাগজ ক্রয় করার মধ্য দিয়ে তাঁর ব্যবসা জীবনের সূচনা হয়।
আবদুচ ছালাম ১৯৭৭ সালে ৭ মে আখতারুন্নেছা বেগমকে বিয়ে করেন। তিনি একজন গৃহিনী। তাদের এক পুত্র ও দুই কন্যা সন্তান রয়েছে।