চট্টগ্রাম : ভিজিটিং কার্ডের তথ্য অনুযায়ী তিনি একই সঙ্গে কখনো ম্যাজিষ্ট্রেট, কখনো নারী ম্যাজিস্ট্রেটের স্বামী, কখনো বা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র। পাশাপাশি ছাত্রলীগ রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত! ইউনির্ভাসিটি অব লন্ডন থেকে এলএলবি ও এলএলএম ফার্স্ট ক্লাস। এখন পুলিশের ৩০ তম ব্যাচের সহকারী পুলিশ সুপার পদে কর্মরত।
কথিত এই তুখোড় মেধাবী মো. ফয়েজ আলী মাহি’র (৫০) বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার জোয়ারা গ্রামে। সর্বগুণে গুণান্বিত এই ব্যক্তি এক তরুণীর দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে শেষ পর্যন্ত আটক হয়েছেন।
জানা গেছে তরুণীকে টিউশনী দেওয়ার নাম করে পরবর্তীতে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের ডিভিও দৃশ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে ওই তরুণী চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশকে অভিযোগ দিলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাকে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. বাবুল আক্তার বলেন, আটকের পর মাহি বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছে। পরে বিভিন্ন সময়ে প্রতারণার বিষয়ে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। এছাড়া মাহী বর্তমানে নিজকে পুলিশের ৩০ তম ব্যাচের সহকারী পুলিশ সুপার পরিচয় দিয়ে ফেসবুক আইডিও ব্যবহার করছে। কিন্তু এসবই ভূয়া বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে।
গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, মাহী গত ১৫ জানুয়ারি লেডি টিউটর আবশ্যক বিজ্ঞাপন সাটিয়ে দেওয়া হয় নগরীর নারী হোস্টেলের সামনে। এরপর ২১ জানুয়ারি এক তরুণী টিউশনী পাওয়ার আশায় বিজ্ঞাপনে দেওয়া নম্বরে যোগাযোগ করে। এই নম্বরটি ব্যবহার করত মাহি। এই সময় মাহি তার নিকটাত্মীয়কে পড়ানোর প্রয়োজন আছে জানিয়ে ওই পরিবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কথা বলে। একই সঙ্গে টিউশন ফি পাঁচ হাজার টাকা ধরা হয়, সেখান থেকে দুই হাজার টাকা মাহীকে দিয়ে দিতে হবে বলে শর্ত জুড়ে দেয়। এতে ওই তরুণী রাজি হয়।
পরদিন ২২ জানুয়ারি তরুণীকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পূর্ব গেটে এসে সকাল ১০টায় যোগাযোগ করতে বলে মাহি। কথামতো ওই তরুণী নির্দিষ্ট সময়ে মাহির সঙ্গে দেখা করেন। ওইদিন পরিচয় ও কথা হয়। এরপর ২৬ জানুয়ারি তরুণীকে মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসে আসতে বলে মাহি এবং দুজন সারাদিন ক্যাম্পাসে ঘুরে এবং কথা বলে। শেষে রাতে চকবাজার এলাকায় ফোর স্টার হোটেলের ওই তরুণীকে নিয়ে রাতযাপন করে। শেষে ওই তরুণীর মাকে মাহি এই বলে হুমকি দেয়, ‘ইন্টারনেট থেকে আপনার মেয়ের নুড ছবি ডাউনলোড করুণ।’ এমন হুমকি শুনে তরুণীর পরিবার ভেঙে পড়ে এবং শেষে পুলিশের দ্বারস্থ হয়।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা বাবুল আক্তার জানান, শহরের বিভিন্ন নারী হোস্টেলের সামনে লেডি টিউটর আবশ্যক বিজ্ঞাপন দেয়। সেখান থেকে কোনো তরুণী টিউশনী পাওয়ার আশায় ফোন করলে ওই তরুণীদের ফাঁদে ফেলে কৌশলে ধর্ষণ করে। আর ধর্ষিতাদের ছবি ইন্টারনেটে আপলোড করার ভয় দেখিয়ে আইনের আশ্রয় নেওয়া থেকে বিরত রাখার কৌশল অবলম্বন করে।