আজ ৩০ মে, বাংলাদেশের মানুষের কাছে খুবই শোকাবহ দিন। ১৯৮১ সালের এই কালো রাতে চট্টগ্রামের অভিশপ্ত পুরনো সার্কিট হাউসে ঘুমন্ত অবস্থায় দেশি-বিদেশি ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের ক্রীড়নক কিছু বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে নির্মমভাবে শাহাদতবরণ করেন বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’-এর কালজয়ী দর্শন ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, আধুনিক স্বনির্ভর বাংলাদেশের স্থপতি এবং ইতিহাসের রাখাল রাজা খ্যাত দেশের প্রথম নির্বাচিত সফল প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম।
জিয়াউর রহমানের ৩৫তম শাহাদতবার্ষিকীর শোকাবহ এ দিনটি স্মরণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি পক্ষকালব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। প্রিয় নেতাকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর অশ্রুসিক্ত নয়নে স্মরণ করবে দেশের কোটি কোটি মানুষ। এ উপলক্ষে শহীদ জিয়ার মাজার জিয়ারত, কোনআনখানি, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা, কালো পতাকা উত্তোলন ও দরিদ্রদের মাঝে খাবার বিতরণসহ ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো। : বাংলাদেশ ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এক সঙ্গে গাঁথা। ‘আমি যুগে আসি, আসিয়াছি পুনঃমহাবিপ্লব হেতু…’ আমাদের জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্রান্তিকালে বিদ্রোহী কবির ধূমকেতুর মতোই ত্রাতার ভূমিকায় জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব ঘটেছিল। তিনি একজন সৈনিক থেকে ক্রান্তিকালে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ, প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এবং সর্বোপরি একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে এদেশের সমৃদ্ধির প্রতিটি ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। জিয়াউর রহমানের সততা ও দেশপ্রেম ছিল সকল প্রশ্নের ঊর্ধ্বে ও ঈর্ষণীয়। তার দেশপ্রেমের প্রকৃষ্ট উদাহরণই হলো ‘বাংলাদেশ’। তার সততা নিয়ে তার চরম শত্র“ও কোনো প্রশ্ন তুলতে পারেনি।
একজন সাধারণ মেজর হয়েও ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ভয়াল রাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের সময় প্রাণ বাঁচাতে অনেকে যখন পালিয়ে গিয়েছিল, এর বিপরীতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলে আজও দেশবাসীর হৃদয়ে অমর হয়ে আছেন। : মহান এই দেশদরদী নেতা ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলার নিভৃত পল্লী বাগবাড়ীর এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব ও কৈশোরে তিনি কমল নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর পিতা মনসুর রহমান সরকারি চাকরির জন্য প্রথমে কলকাতায় ও ’৪৭ সালে দেশ ভাগের পর চলে যান পাকিস্তানের করাচি শহরে। সেখানেই তিনি লেখাপড়া করেন। শিক্ষাজীবন শেষ করে ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি কাকুলে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।
১৯৫৫ সালে তিনি কমিশন লাভ করেন। পাক-ভারত যুদ্ধে একটি কোম্পানির অধিনায়ক হিসেবে খেমকারান সেক্টরে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। বিশেষ কৃতিত্বের জন্য তিনি এই যুদ্ধে কোম্পানির সর্বোচ্চ খেতাব ও ১টি বিশেষ উপহার লাভ করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে হানাদার পাকবাহিনী মারণাস্ত্র নিয়ে মুজিব-ভুট্টো আলোচনারত অবস্থায় হঠাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ নিরস্ত্র ঘুমন্ত মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে নিহত হয় হাজার হাজার মানুষ। শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতারের পর পাকিস্তান পাঠানো হয়। হানাদারদের অতর্কিত আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ। চট্টগ্রামে অবস্থানরত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান এ রাতেই ষোলশহরে সেনাবাহিনীর ৮ম ব্যাটালিয়নের সব বাংলাভাষী অফিসার ও জওয়ানকে ডেকে একত্র করে বিদ্রোহ করে স্বাধীনতার ডাক দেন। মেজর জিয়ার এই আহবানে গোটা অষ্টম ব্যাটালিয়নে ব্যাপক সাড়া দিয়ে সৈনিক ও অফিসাররা উল্লসিত হয়ে ওঠেন।
মেজর জিয়াউর রহমান পাকবাহিনীর আক্রমণে নিরস্ত্র জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানিয়ে ২৬ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জাতির উদ্দেশে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। মেজর জিয়ার কণ্ঠস্বর শুনে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে দিশেহারা গোটা জাতি। ‘আমি মেজর জিয়া বলছি…বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি’ তাঁর এই অবিস্মরণীয় অবিনাশী ঘোষণায় পথহারা মুক্তিকামী জনতা ঝাঁপিয়ে পড়ে মরণপণ মুক্তিযুদ্ধে। : জিয়াউর রহমান শুধু মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েই ক্ষান্ত হননি, তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৫তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বাণীতে জাতীয় জীবনের চলমান সংকটে শহীদ জিয়ার প্রদর্শিত পথ ও আদর্শ বুকে ধারণ করেই সামনে এগিয়ে যেতে এবং জাতীয় স্বার্থ, বহুমাত্রিক গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকার সুরক্ষায় ইস্পাতকঠিন গণঐক্য গড়ে তুলতে আহবান জানান। গতকাল এক বাণীতে তিনি “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির স্থপতি, মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ কালজয়ী দর্শনের প্রবর্তক, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার, সফল রাষ্ট্রনায়ক, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৫তম শাহাদতবার্ষিকীতে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও বিদেহী আত্মার মাগফিরাত করে বলেন, শহীদ জিয়ার অম্লান আদর্শ, দর্শন ও কর্মসূচি আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষা, বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং দেশীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির নিশ্চয়তা।”