শিং-মাগুরের খাবার হিসেবে ছাই উৎপাদনের জন্যই দফায় দফায় সুন্দরবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. হাসান মাহমুদ।
বুধবার (১৮ মে) জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংকালে তিনি এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘এ ছাই সুন্দরবনের শিং ও মাগুড় মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।’
হাসান মাহমুদ বলেন, ‘সুন্দরবনে চার দফায় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে, যা অস্বাভাবিক। গত ১৫ বছরে ২২ বার হলেও ২০১৬ সালের প্রথম চার মাসেই ৪ দফায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।’
স্থায়ী কমিটির সভাপতি বলেন, ‘পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির ২২তম বৈঠকে সুন্দরবনে আগুন লাগার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বন সংরক্ষকের কাছে জানতে চেয়েছি। বন সংরক্ষক বলেছেন, ৪টি অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে দুটিতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে, অন্যগুলো মাছ ধরার সময় জেলেদের মাধ্যমে লেগেছে। আর গ্রুপের কারণেও অগ্নিকাণ্ডের মত ঘটনা ঘটানো হয়েছে।’
আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে হাসান মাহমুদ বলেন, ‘সুন্দরবনের ভেতরে খুব স্যাঁতস্যাতে অবস্থা। সেখানে স্থানীয় প্রভাবশালীরা মাগুর ও শিং মাছের চাষ করেন। এই ছাই মাগুর ও শিং মাসের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আর এ কারণেই পরিকল্পিতভাবে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল সুন্দরবন ধ্বংস করে আধিপত্য বিস্তার লাভ করতে চাচ্ছে।’
উল্লেখ্য, ২৮ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল এই একমাসের ব্যবধানে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত, পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবনে ৪ বার আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।
গত ২৮ মার্চ সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশন এলাকায় নাংলি ফরেস্ট ক্যাম্পের কাছে চলতি বছরে প্রথমবারের মতো আগুন লাগে। তবে ওই আগুনে বনের কত একরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
ওই ঘটনার ১৬দিন পর ১৩ এপ্রিল সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশন এলাকায় আবারো আগুন লাগে। বন বিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দারা বনের ভেতর ফায়ার লাইন কেটে সে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। তবে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয় তাও থেকে যায় অজানা।
দ্বিতীয় দফার আগুনে নিভতে না নিভতেই ৪ দিন পর ১৮ এপ্রিল আবারো সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধান সাগর স্টেশনের নাংলী ফরেস্টক্যাম্প এলাকায় আগুনের সূত্রপাত হয়। সে অগ্নিকাণ্ডেও ঠিক কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয় তাও থেকে যায় অজানা।
সর্বশেষ ২৭ এপ্রিল আগুনের সূত্রপাত হয় চাঁদপাইরেঞ্জের ধানসাগর ফরেস্ট ক্যাম্পের আড়ুয়াদের খাল এলাকায়।
উপযুপরি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। এ ঘটনার প্রতিবাদে সারা দেশে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে সুন্দরবন বিধ্বংসী এমন অমানবিক কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে দ্রুত যথোচিত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সূত্রঃ বাংলামেইল২৪ডটকম