বিশেষ প্রতিনিধি : নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ প্রশ্নে সাংবিধানিক জটিলতা থাকলেও তা ক্ষমতাসীন দলের অনুকূলে অগ্রাহ্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ৫ই জানুয়ারির পরপরই দশম সংসদের সদস্য হিসেবে তারা তড়িঘড়ি শপথ পড়ানোর উদ্যোগ
নেবেন। একটি ইসি সূত্র নিশ্চিত করেছে, ১০ই জানুয়ারির মধ্যেই ৩০০ আসনের ফলাফল গেজেটে প্রকাশ এবং স্পিকার শিরীন শারমিন সুলতানাকে দিয়ে শপথ পড়ানো চূড়ান্ত করা হবে। যদিও নির্বাচন কমিশন ভালভাবেই জানে যে, ২৪শে জানুয়ারির আগে বর্তমান সংসদকে ভেঙে দেয়া হচ্ছে না।
বাংলাদেশ সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদের ২ ক বলেছে, ‘সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপিত হওয়ার তারিখ হতে পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে এই সংবিধানের অধীন এতদুদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা তদুদ্দেশ্যে অনুরূপ ব্যক্তি কর্তৃক নির্ধারিত অন্য কোন ব্যক্তি যে কোন কারণে নির্বাচিত সদস্যদের শপথ পাঠ পরিচালনা করতে ব্যর্থ হলে বা না করলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার উহার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে শপথ পাঠ পরিচালনা করবেন।’
এখন প্রচলিত আইনের কোথাও গেজেট প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করার কোন সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়নি। তাই প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে আইনে যদি কোথাও নিষেধ না থাকে, তাহলে নির্বাচন কমিশন কেন ৫ই জানুয়ারির পরেই ফলাফল গেজেটের মাধ্যমে প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকবে? এর উত্তর ইসি’র থাকবে। তার কারণ সংবিধানে এটা নিষিদ্ধ করা আছে।
সংবিধান বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন সংবিধান সংশোধন ছাড়া ২৪শে জানুয়ারির আগে শপথ পাঠ করানো হলে তাতে সাংবিধানিক জটিলতা দেখা দেবে। কারণ সংবিধানের দুটি অনুচ্ছেদে এবিষয়ে স্ববিরোধিতা আছে। সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের ২ দফা বলেছে, ‘সংসদ সদস্যদের যে কোন সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে সংসদের বৈঠক ডাকতে হবে।’
১৪৮ অনুচ্ছেদের ৩ দফা বলেছে, ‘এই সংবিধানের অধীন যে ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তির পক্ষে কার্যভার গ্রহণের পূর্বে শপথ গ্রহণ আবশ্যক, সেই ক্ষেত্রে শপথ গ্রহণের অব্যবহিত পর তিনি কার্যভার গ্রহণ করেছেন বলে গণ্য হবে।’ এর অর্থ হলো শপথ পড়ানো মাত্রই দশম সংসদের সদস্য হিসেবে প্রত্যেক ‘‘নির্বাচিতের’’ কার্যকাল শুরু হবে। অথচ ১২৩ অনুচ্ছেদের শর্তাংশ সাফ বলেছে, আগের সংসদের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নবনির্বাচিতরা কার্যভার গ্রহণ করতে পারবে না। এর ফলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বিতর্কিত ‘‘সর্বদলীয় সরকারের’’ আয়ু ২৪শে জানুয়ারি টেনে নিতে হবে। অথচ ক্ষমতাসীনরা এনিয়ে বড়ই অস্বস্তিতে আছেন। তারা অনতিবিলম্বে নবম সংসদের কালিঝুলি মুছে ফ্রেশ হতে চান। ইসি তাই তাজা মন্ত্রিসভা নিশ্চিত করতে সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের শর্ত না মানতে আপাতত পণ করেছে।