ঢাকা: শনিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিট। হাতিয়া থেকে এম ভি ফারহান নামে একটি লঞ্চ এসে ভিড়লো ঢাকার সদরঘাটের অদূরে শ্যামবাজার ঘাটে। যাত্রীদের বলা হলো এখানেই নেমে যেতে। যাত্রীরা কারণ জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ বললো, সদরঘাটে লঞ্চ যাবে না। গেলে আপনারা (যাত্রীরা) বিপদে পড়বেন।
কী বিপদ? জানা গেল, ২৯ ডিসেম্বর বিরোধী দলের ঢাকামুখী কর্মসূচি প্রতিহত করতে শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকেই সারা দেশ থেকে সড়ক ও নৌপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়।
বরিশাল, ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চেলের লঞ্চঘাটগুলো থেকে ঢাকামুখী কোনো লঞ্চ ছাড়তে দেয়নি পুলিশ এবং সরকার দলীয় স্থানীয় নেতাকর্মীরা।ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে লঞ্চঘাটে এসে বিপাকে পড়েন হাজার হাজার মানুষ। অনেকের জরুরি প্রয়োজনেও ঢাকায় যেতে পারেননি। এর মধ্যে অনেক রোগীও লঞ্চঘাট থেকে ফিরে গেছেন।
এরকম অবস্থায় নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে শুক্রবার দুপুরে এমভি ফারহান নামে যে লঞ্চটি ঢাকার উদ্দেশে ছাড়ে, সেটি ভোলার মনপুরা, তজুমদ্দিন হয়ে শনিবার সকালে ঢাকায় আসে। কিন্তু সদরঘাটে পৌঁছার আগেই লঞ্চ কর্তৃপক্ষ জানতে পারে যে, সদরঘাটে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা অপেক্ষা করছেন। কোনো লঞ্চ তারা সেখানে ভিড়তে দেবে না। যাত্রীদের এই তথ্য দিয়ে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ সদরঘাটের আগেই শ্যামবাজারে লঞ্চ থামিয়ে দেয় এবং যাত্রীদের নেমে যেতে বলে।
যাত্রীরা পরিবার-পরিজনসহ নেমে এখানে চরম দুর্ভোগে পড়েন। প্রথমত, লঞ্চ থেকে নেমে রাস্তায় ওঠার মতো ওখানে রয়েছে একটি কাঠের নড়বড়ে চিকন সাঁকো। ফলে ভারি ব্যাগ আর শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে লঞ্চ থেকে নামতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়েন যাত্রীরা। তাদের জন্য আরও নতুন বিপত্তি অপেক্ষা করে ঘাটের প্রবেশ পথে। সেখানে প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে আদায় করা হয় ঘাটের ভাড়া। এরপর যাত্রীরা যখন রাস্তায় ওঠেন, তখন সেখানে দেখা দেয় চরম পরিবহন সংকট। যাত্রীর তুলনায় সেখানে সিএনজি অটো রিকশা এবং রিকশার পরিমাণ ছিল খুবই কম।ফলে যাত্রীদের কাছ থেকে চলেছে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়। আবার অতিরিক্ত ভাড়া দিতে চাইল্ওে অনেক যাত্রীকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডার ভেতর।
দুর্ভোগে আক্রন্ত ক্ষুব্ধ যাত্রীরা বলছিলেন, সাধারণ মানুষ এরকম নোংরা রাজনীতির শিকার হবে আর কতদিন?