সফল সমর নায়ক আতাউল গণি ওসমানী

0

osman goniসুনামগঞ্জে ১৯১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর জন্ম। বাবা খান বাহাদুর মফিজুর রহমান, মা জোবেদা খাতুন। খান বাহাদুর মফিজুর রহমানের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে ওসমানী ছিলেন সবার ছোট। বাবার চাকরির সূত্রে ওসমানীর শৈশব-কৈশোর কেটেছে বিভিন্ন জায়গায়। ওসমানীর প্রাথমিক শিক্ষার শুরু গোহাটিতে। ১৯২৩ সালে তিনি ‘কটনস স্কুল অব আসাম’-এ ভর্তি হন। অসাধারণ কৃতিত্বের সঙ্গে ১৯৩৪ সালে সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। গোটা ব্রিটিশ ভারতে তিনি প্রথম স্থান লাভ করেন। এই অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য ব্রিটিশ সরকার এমএজি ওসমানীকে প্রাইওটোরিয়া পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে সম্মানিত করে। ১৯৩৮ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষে ১৯৩৯ সালে যোগ দেন রয়্যাল আর্মড ফোর্সে ক্যাডেট হিসেবে। দেরাদুনে ব্রিটিশ-ভারতীয় মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণ শেষে কমিশনড অফিসার হিসেবে তিনি ১৯৪০ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একটি ব্যাটালিয়নের কমান্ডার হিসেবে তিনি বার্মা (মিয়ানমার) সেক্টরে যুদ্ধে অংশ নেন। মেজর পদে উন্নীত হন ১৯৪২ সালে। এ সময় তিনি ছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ মেজর। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ওসমানী ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে লং কোর্স পরীক্ষা দিয়ে উচ্চস্থান লাভ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর ওসমানী পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। এ সময় তার পদমর্যাদা ছিল লেফটেন্যান্ট কর্নেল। ১৯৪৯ সালে তিনি চিফ অব জেনারেল স্টাফের ডেপুটি হন। ১৯৫১ সালে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রথম ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক নিযুক্ত হয়ে চট্টগ্রাম সেনানিবাস প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি কর্নেল পদমর্যাদা লাভ করেন এবং সেনাবাহিনীর হেডকোয়ার্টারের জেনারেল স্টাফ আন্ড মিলিটারি অপারেশনের ডেপুটি ডিরেক্টরের দায়িত্ব পান। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধে তিনি ‘ডেপুটি ডাইরেক্টর অব মিলিটারি অপারেশন’ হিসেবে যুদ্ধরত বিভিন্ন সামরিক হেড কোয়ার্টারে যোগাযোগ করতেন। ১৯৬৬ সালের মে মাসে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে অবসরকালীন ছুটি নেন। ১৯৭০ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে ’৭০-এর নির্বাচনে ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ-বিশ্বনাথ এলাকা থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ওসমানী সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। ১১ এপ্রিল, ১৯৭১ প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে দেয়া ভাষণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবকাঠামো গঠনের কথা উল্লেখ করে এমএজি ওসমানীকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে ঘোষণা দেন। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল গঠিত মুজিবনগর সরকারে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি করা হয় জেনারেল ওসমানীকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালের ২৬ ডিসেম্বর তিনি বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সের জেনারেল পদে নিয়োগ পান। ১৯৭২ সালে দায়িত্ব থেকে অবসর নিয়ে অভ্যন্তরীণ নৌ যোগাযোগ, জাহাজ ও বিমান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে যোগ দেন মন্ত্রিসভায়। ১৯৭৪ সালে ডাক, তার, টেলিযোগাযোগ, অভ্যন্তরীণ নৌ যোগাযোগ, জাহাজ ও বিমান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন। ১৯৭৪ সালের মে মাসে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৭৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‘জাতীয় জনতা পার্টি’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। ১৯৭৮ ও ১৯৮১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার্থে লন্ডন থাকাকালীন সময়ে এমএজি ওসমানী মৃত্যুবরণ করেন। গভীর শ্রদ্ধায় তাকে স্মরণ করি।< /p>

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More