সাঈদীকে হাসপাতালে আনা হলেও পরিবারের কাউকে তাঁর কাছে যেতে দেওয়া হয়নি

0

কথিত মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় ফরমায়েশি রায়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কারাগারে আটক আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ইন্তেকাল করেছেন

কথিত মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় ফরমায়েশি রায়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কারাগারে আটক আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ইন্তেকাল করেছেন

কথিত মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় ফরমায়েশি রায়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কারাগারে আটক আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। কারা কর্তৃপক্ষের বয়ান অনুযায়ী কারাগারে অসুস্থ বোধ করায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তির একদিনের মধ্যে ইন্তেকাল করেছেন তিনি।

কারাগারের কর্তাদের বয়ান অনুযায়ী রোববার হঠাৎ করেই বুকে ব্যথা অনুভব করায় তাঁকে গাজিপুরের স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ডাক্তাররা তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পিজি হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন। এখানেই তিনি একদিনের মাথায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।

হাসপাতালে আনা হলেও পরিবারের কাউকে তাঁর কাছে যেতে দেওয়া হয়নি। পরিবারের সদস্যরা চেষ্টা করলেও পুলিশ তাদেরকে অসুস্থ আল্লামা সাঈদীর কাছে পৌছাতে দেয়নি।

২০১০ সালের ২৯ জুন তাঁকে নিজের বাসা থেকে আটক করেছিল পুলিশ। এরপর তাঁকে দিনের পর দিন রিমান্ডে নিয়ে মিথ্যা বানোয়াট জবানবন্দি নেওয়ার অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল। এতে অনেকেই সন্দেহ করছেন আল্লামা সাঈদীকে পরিকল্পিতভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামীর কোন পদে ছিলেন না এবং সাধারণ একজন আলেম হিসাবে ওয়াজ নসিহত করতেন এমন তথ্য-প্রমাণ ছিল। দেলু রাজাকার হিসেবে তাঁকে আখ্যায়িত করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল ফ্যাসিবাদী সরকারের পক্ষ থেকে। আদালতে সেটাও প্রমান করা হয়েছিল দেলু রাজাকার হিসাবে যিনি আখ্যায়িত ছিলেন স্বাধীনতার পরপরই তাঁকে মুক্তিযোদ্ধারা তাঁকে হত্যা করেছিল।

যে বিসাবালীকে হত্যার অভিযোগে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, সেই বিসাবালীর ভাই সুখরঞ্জন বালী এসেছিলেন আল্লামা সাঈদীর পক্ষে সত্য কথা বলতে। যদিও তাঁকে সরকার পক্ষে সাক্ষী হিসাবে নথিভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু বিবেকের তাড়নায় তিনি মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি হননি। বরং উল্টা আদালতে এসেছিলেন সত্য কথা বলতে। প্রথমদিন যখন তাঁকে আদালতের সাক্ষ্য হিসাবে আল্লামা সাঈদীর আইনজীবীরা নিয়ে আসেন তখন নিজামুল হক নাসিম সেদিন প্রত্যাখ্যান করেন। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান পদে বসা নিজামুল হক নাসিম সেদিন বলেছিলেন সুখরঞ্জন বালীকে সাক্ষী হিসাবে উপস্থাপনের জন্য আগে কোন আবেদন দেওয়া হয়নি। আবেদন করে মঞ্জুর হওয়ার পর সাক্ষী হিসাবে তাঁকে উপস্থিত করার জন্য বলা হয় নিজামুল হক নাসিমের নেতৃত্বে গঠিত আদালত। পরের দিন সুখরঞ্জন বালীকে আদালতের নিয়ে যাওয়ার পথে ট্রাইব্যুনাল গেইটে আইনজীবীদের গাড়ি তল্লাশি করে সাদা পোশাক ও ইউনিফর্ম পরিহিত পুলিশ। এক পর্যায়ে আইনজীবীদের গাড়ি থেকে সুখরঞ্জন বালীকে পুলিশ গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে যান। তারপর থেকে আর কোন হদীস ছিল না তাঁর। পরবর্তীতে ভারতের একটি কারাগারে সন্ধান পাওয়া যায় তাঁর। ডিবি অফিসে গুম করে রাখার পর সুখরঞ্জন বালীকে সীমান্তের অপর পারে ভারতের ভেতরে ঠেলে দেয় রাষ্ট্রীয় বাহিনী। ভারতীয় সীমান্তরক্ষীর হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে ছিলেন সুখরঞ্জন বালী। এক পর্যায়ে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন আল্লামা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে অপহরণের শিকার সুখরঞ্জন বালী।

পরিকল্পিত সাজানো মামলায় সাক্ষ্য দিতে গোপন ট্রেনিং সেন্টার তৈরি করেছিল সরকার। এই গোপন ট্রেনিং সেন্টারে আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে ট্রেনিং দেওয়া হত। সেইফ হোম নামে তৈরি করা এই গোপন প্রশিক্ষণ সেন্টারে আনার পরও অনেকে সাক্ষ্য দিতে অস্বীকার করেন এবং এমনকি আদালতে নিয়ে যাওয়ার পরও অনেকে সাক্ষ্য দিতে রাজি হননি। কথিত সেইফ হোম নামক সাক্ষী প্রশিক্ষণ সেন্টারের গোপন নথি আমার দেশ ফাঁস করেছিল ২০১২ সালের এপ্রিলে।

সর্বশেষ স্কাইপ স্ক্যাণ্ডাল প্রকাশের পর এই বিচারের চরিত্র পুরোটাই উন্মোচিত হয়েছিল। সরকার ও ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা কিভাবে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল সবই বর্ণনাই উঠে আসে স্কাইপ স্ক্যাণ্ডালে। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা নিজমুল হক নাসিম ও আহমদ জিয়াউদ্দিনের কথোপকথন পুরোটাই ছিল আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সহ অন্যদের মামলা সাজানো এবং বিচার প্রক্রিয়া ও রায়ের পূর্ব পরিকল্পনা নিয়ে।

পূর্ব পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাজানো মামলায় ষড়যন্ত্রমূলক রায়ে আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল কথিত ট্রাইব্যুনাল। যে ট্রাইব্যুনালে বিচারকের আসনে বসানো হয়েছিল নিজামুল হক নাসিমের মত ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা এবং ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের।

পরবর্তীতে আপিল বিভাগে সুরেন্দ্র কুমার সিনহাদের পরিকল্পিত রায়ে আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড থেকে আজীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়। খায়রুল হক, সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, মোজাম্মেল হোসেনসহ আওয়ামী লীগের অনুগত ব্যক্তিরা পরিকল্পিত বিচারিক হত্যাকাণ্ডের চুড়ান্ত রায় গুলো দিয়েছেন। সুরেন্দ্র কুমার সিনহার লেখা বইয়েও উঠে এসেছে কিভাবে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে এবং জুডিশিয়াল মার্ডারের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

উৎসঃ   আমার দেশ
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More