বাংলাদেশ পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজি ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমানের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দদুক)। কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদনক্রমে সমন্বিত জেলা কার্যালয় (সজেকা) নোয়াখালী থেকে মাহবুবুর রহমানের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি অনুসন্ধান করছেন বলে দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আরিফ সাদেক নিশ্চিত করেছেন।
ব্যরিস্টার মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও জ্ঞায় আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছেন সজেকা নোয়াখালী কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক আরিফ আহাম্মদ।
দুদকে জমা হওয়া অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ব্যরিস্টার মাহবুবুর রহমান অতিরিক্ত আইজি হিসেবে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধানের পদ থেকে গত ৩০ জুলাই অবসরে যান। তিনি পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশনস), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের প্রধান, হাইওয়ে পুলিশের প্রধান ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনারসহ (ট্রাফিক) বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। চাকরিকালীন তিনি ক্ষমতা অপব্যবহার, ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নেন। বিশেষ করে সরকারি বরাদ্দের অর্থের ব্যয় ও কেনাকাটায় অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার করেন বলে অভিযোগে বলা হয়।
ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমানের ভাই নোয়াখালী-৬ আসনের সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী ও তার স্ত্রী ও বর্তমান এমপি আয়েশা ফেরদৌসের বিরুদ্ধেও কমিশনে ক্ষমতার অপব্যাবহার, খাস জমি দখল ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ চলমান। জানা গেছে, ভাই ব্যরিস্টার মাহবুবের প্রভাব-প্রতিপত্তি ও ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতির আশ্রয় নেন মোহাম্মদ আলী ও তার পরিবার। মোহাম্মদ আলী প্রচুর ভুসম্পত্তির মালিক হওয়া সত্ত্বেও ভূমিহীন সেজে সরকারি খাস জমি নিজের এবং পরিবারের নামে বন্দোবস্ত নেন।
দুদকের অনুসন্ধানে মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী, হাতিয়ার বর্তমান সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস, তিন সন্তান ও দুই শ্যালকের বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার তথ্য উঠে এসেছে। হাতিয়া দ্বীপের তমরুদ্দিন ঘাট থেকে জাহাজমারা চর, আর নিঝুম দ্বীপের মৌলভীচর, কমলাদীঘি থেকে সূর্যমুখী পর্যন্ত মোহাম্মদ আলীর রয়েছে অঢেল সম্পদ, প্রভাব আর প্রতিপত্তি। এ ছাড়া ঢাকাতেও রয়েছে তার একাধিক বাড়ি ও বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। আর ভাই পুলিশের বড় কর্মকর্তা হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী তার টিকিটিও ছোঁয়ার সাহস পায়নি। ব্যারিস্টার মাহবুব প্রভাব খাটিয়ে দুদকেও ভাইয়ের অভিযোগটির তদন্ত এগোতে দেননি বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিগের অনুসন্ধান কর্মকর্তা জানান, ব্যরিস্টার মাহবুবের বিরুদ্ধে গৃহীত অভিযোগটির অনুসন্ধান এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। তারা কিছু নথিপত্র তলব করেছেন। এসবের মধ্যে রয়েছে ২০২০-২১ ও ২০২১ ২০২২ অর্থবছরে সিআইডি কার্যালয়ে কম্পিউটার ক্রয় খাতে বরাদের কপিসহ কম্পিউটার ক্রয়সংক্রান্ত সকল বিল-ভাউচারসহ সকল রেকর্ডপত্র এবং সংশ্লিষ্ট নথির নোটশিটের সত্যায়িত ফটোকপি, ২০২০-২১ ও ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সিআইডির কম্পিউটার টেবিল ক্রয় খাতে বরাদ্দের কপিসহ কম্পিউটার টেবিল ক্রয়সংক্রান্ত সকল বিল-ভাউচারসহ সকল রেকর্ডপত্র এবং সংশ্লিষ্ট নথির নোটশিটের সত্যায়িত ফটোকপি, ২০২১৯-২০ ও ২০২০-২০২১ অর্থবছরে রাজশাহী সিআইডি ফরেনসিক ল্যাবের জন্য জেনারেটর ক্রয়সংক্রান্ত বরাদ্দের কপি এবং বিল-ভাউচারসহ সকল রেকর্ডপত্র ও সংশ্লিষ্ট নোটশিটের ফটোকপি, ২০২০-২১ ও ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সিআইডির যানবাহন মেরামত খাতে বরাদ্দের কপিসহ সকল বিল-ভাউচার এবং অন্যান্য রেকর্ডপত্র এবং সংশ্লিষ্ট নোটশিটের সত্যায়িত ফটোকপি, ২০২০-২১ ও ২০২১ ২০২২ অর্থবছরে সিআইডির করেনসিক ল্যাব খাতে বরাদ্দের কপিসহ উক্ত খাতে ব্যয়ের বিল-ভাউচারসহ সকল রেকর্ডপত্র। আরও চাওয়া হয়েছে ২০২০-২১ ও ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সিআইডির মিটিংসহ বিভিন্ন খাতে বরাদ্দের কপিসহ উক্ত খাতে ব্যয়ের বিল-ভাউচারসহ সকল রেকর্ডপত্র এবং সংশ্লিষ্ট নথিসহ আরও রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ব্যরিস্টার মাহবুবুর রহমানের স্থাবর-অবস্থাবর সম্পদের বিষয়ে জানার জন্য বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংক, ভূমি অফিস, রাজউক, জেলা রেজিস্ট্রার, পৌরসভাসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আরও কিছু দপ্তরে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
অনুসন্ধানের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা হওয়া অভিযোগ আমলে নিয়ে আমরা অনুসন্ধান শুরু করেছি। সরকারি বরাদ্দের অর্থ অপচয়, আত্মসাৎ ও অনিয়মসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত বছরের ৩০ জুলাই অতিরিক্ত আইজি ব্যরিস্টার মাহবুবুর রহমান অবসরে যান। ২০২১ সালের ৩১ জুলাই থেকে পুনরায় তাকে অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদায় এক বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি এক বছর দায়িত্ব পালনের পর চলতি বছরের ৩০ জুলাই চাকরি থেকে অবসরে যান।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয় ব্যরিস্টার মাহবুবুর রহমানের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উৎসঃ দেশ রূপান্তর