দুটি আপিলের রায়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান ঠিক এক বছর। দুটিরই তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর জামায়াতের নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার আপিলের চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ। ইতিমধ্যে সেই রায় কার্য্কর হয়েছে। বছর ঘুরে আরেক ১৭ সেপ্টেম্বর ঘোষিত হচ্ছে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলের চূড়ান্ত রায়।
বিষয়টি হয়তো কাকতালীয়। তবে এ নিয়ে সারা দেশের মানুষের মধ্যে চলছে কৌতূহল। কী আছে সাঈদীর ভাগ্যে?
সাঈদীর আপিলের রায় সামনে রেখে দেশের নিরাপত্তা-সংক্রান্ত তৎপরতা জোরদার করে প্রস্তুত প্রশাসন। প্রস্তুত আরো কটি পক্ষ। জামায়াতের অঙ্গসংগঠন ছাত্রশিবির জানিয়ে দিয়েছে, সাঈদীর প্রতি অবিচার করা হলে জনগণ মেনে নেবে না। গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা সাঈদীর সর্বোচ্চ শাস্তি বহাল থাকার আশায় অবস্থান নিয়েছেন শাহবাগে।
প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) আপিলের রায় ঘোষণা করবেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলের শুনানি গত ১৬ এপ্রিল শেষ হওয়ার পর এটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন আপিল বিভাগ। পাঁচ মাস পর বুধবার সেই অপেক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পিরোজপুর ও বরিশালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের কুড়িটি অভিযোগ আনা হয়েছিল দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারে ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসাবালী নামের দুজনকে হত্যার ঘটনায় সাঈদীর ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ট্রাইব্যুনাল ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেন। এর এক মাস পর ২৮ মার্চ আপিল করে উভয় পক্ষ। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে এ মামলার আপিল শুনানি শুরু হয়। উভয় পক্ষের আপিল শুনানি শেষ হতে সময় লাগে আট মাসে ৪৯ কার্যদিবস।
আপিলে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান। তাদের সহযোগিতা করেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী।
আসামিপক্ষে শুনানি করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান। তাদের সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার তানভীর আহমেদ আল আমীন।
সাঈদীর বিরুদ্ধে ২০টি অভিযোগের মধ্যে আটটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে মর্মে ট্রাইব্যুনাল রায়ে উল্লেখ করেন। এর মধ্যে দুটি অভিযোগে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়, আর ছয়টিতে কোনো দণ্ড দেওয়া হয়নি। প্রমাণিত না হওয়ায় বাকি ১২টি অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় সাঈদীকে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর প্রথম ব্যক্তি হিসেবে সাঈদীর বিচার শুরু হয় ট্রাইব্যুনালে। প্রসিকিউশনের সাক্ষ্য নেয়া শুরু হয় ওই বছরের ৭ ডিসেম্বর। সাঈদীর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তাসহ ২৮ জনের সাক্ষ্য নেন ট্রাইব্যুনাল। আসামিপক্ষে সাক্ষ্য দেন ১৭ জন। এরও আগে ২০১১ সালের ১১ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। ১৪ জুলাই সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে দায়ের করা এক মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেপ্তার হন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। ওই বছরের ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক দেখানো হয় তাকে। ২০১০ সালের ২১ জুলাই থেকে ২০১১ সালের ৩০ মে পর্যন্ত সম্পন্ন হয় তদন্ত কার্যক্রম।
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে উভয় পক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ হয় ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর থেকে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন ট্রাইব্যুনাল-১ -র চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক। তবে স্কাইপ কথোপকথনের জের ধরে বিচারপতি নিজামুল হকের পদত্যাগের পর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে ফের শুরু হয় যুক্তিতর্ক। সব প্রক্রিয়া শেষে ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয় মামলাটি।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর আপিল বিভাগে এখন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিল। আর আপিল শুনানির শেষ পর্যাায় রয়েছে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মামলা।
অন্যদিকে ট্রাইব্যুনালে রায়ের অপেক্ষমাণ আছে বেশ কিছু মামলা।-নতুন বার্তা