আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের বদলে পরিকল্পিত ফাঁসি দেওয়ার পরিকল্পনা ফাঁস হওয়ার পর পদত্যাগকারী বিচারক নিজামুল হক নাসিম ফ্যাসিবাদী সরকার কর্তৃক বারবার পুরস্কৃত হয়ে এখন সাংবাদিকদের নসিহত করছেন। সাফাই গাইছেন নিবর্তনমূলক কালো আইন হিসাবে পরিচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পক্ষে।
বিচারের নামে ফাঁসি দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে স্কাইপ কথোপকথন ফাঁস হওয়ার পর পদত্যাগ করেছিলেন নিজামুল হক নাসিম। এরপরই তাঁকে প্রথমে হাইকোর্ট বিভাগে ফেরত নিয়ে পরবর্তীতে আপিল বিভাগে নিয়োগ দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকার। আপিল বিভাগ থেকে অবসরের পর তাঁকে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বানিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের সত্য সংবাদ প্রকাশে সতর্ক হওয়ার জন্য নসিহত করছেন।
তাঁর স্কাইপ কথোপকথন আমার দেশ ফাঁস করেছিল ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। এই কথোপকথনে উঠে এসেছিল কিভাবে ফাঁসির দণ্ড তৈরি করা হচ্ছিল।
ঝালকাঠি (২৩ ফেব্রুয়ারি) জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘সাংবাদিকতার নীতি ও নৈতিকতা এবং প্রেস কাউন্সিল আইন ও আচরণবিধি’ বিষয়ক দিনব্যাপী সেমিনার ও প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনি সাংবাদিকদের ন্যায়নিষ্ঠ হবার নসিহত করেছেন। তিনি বলেন, সত্য কথা লিখে সমাজের উপকার করতে হবে। এমনও সঠিক-সত্য সংবাদ আছে যা প্রকাশে দাঙ্গা-অস্থিরতা সৃষ্টি হয় তা বর্জন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ শুধু সাংবাদিকদের জন্য করা হয়নি। ডিজিটাল যুগকে নিয়ন্ত্রণের জন্য করা হয়েছে। সাংবাদিকদের পরিচিতি বেশি তাই অ্যাকশনটা তাদের ওপরেই হয়। এ আইনে কোনো সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হবে না, এমন একটি প্রশাসনিক আদেশ সব দপ্তরে দেওয়া আছে। তবে আইন আকারে পাস করা হয়নি। আইন পাস করতে হবে জাতীয় সংসদে। তাহলেই কোনো সাংবাদিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হয়রানি হবেন না।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পক্ষে সাফাই গেয়ে নিজামুল হক বলেন, দেশের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি সংসদে পাস করা হয়। তখন সরকার যা ভাল মনে করেছে, তারা সেটি করেছে। এখন বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার পরে জানতে পারছি, আইনটি সাংবাদিকদের পেশায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে বর্তমান সরকার প্রশাসনিকভাবে জানিয়েছে, যেন কোনো সাংবাদিকের ওপর আইনটি প্রয়োগ করা না হয়।
এদিকে কর্মশালায় সাংবাদিকদের নীতি ও নৈতিকতা এবং প্রেস কাউন্সিল আইন ১৯৭৪ সম্পর্কিত নানা বিষয় তুলে ধরে প্রেস কাউন্সিল গঠনের পটভূমি, ইতিহাস, কাউন্সিল গঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
এছাড়া জেলার সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে কর্মশালাটি শেষ হয়।
সেমিনার ও প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. রুহুল আমীন। বক্তব্য দেন প্রেস কাউন্সিলের সচিব মাসুদ খান, সদস্য এম জি কিবরিয়া চৌধুরী, ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাইনুল হক।
সেমিনারে জেলায় কর্মরত ৫০ জন সাংবাদিক অংশ নেন। পরে তাদের মধ্যে সনদ বিতরণ করা হয়।