স্ত্রীর সামনে স্বামীকে নৃশংসভাবে হত্যা করছে ঘাতকরা, সাহায্য চাইলেও কেউ এগিয়ে আসছে না। বন্যার পরে এই দৃশ্যের মুখোমুখি হতে হলো আশামনিকে। স্ত্রী আশামনির চোখের সামনেই খুন হলেন তার স্বামী ব্লগার নিলয়। বাড়ির ভেতরে ঢুকে স্ত্রী ও শ্যালিকাকে বারান্দায় আটকে রেখে নিলয়কে কুপিয়ে হত্যা করে খুনিরা।
এবছর ফেব্রুয়ারিতে লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়কেও তার স্ত্রী বন্যার সামনেই কুপিয়ে হত্যা করেছিলো খুনিরা। সেই হামলায় বন্যা আহত হন। আজকের ঘটনায় আশামনি হামলার শিকার না হলেও দেখেছেন স্বামী হত্যার নারকীয় দৃশ্য।
হামলার সময় আশামণি ‘বাঁচাও,বাঁচাও’ বলে প্রতিবেশিদের কাছে সাহায্য চাইলেও এগিয়ে আসেনি কেউ। বইমেলার লোকারণ্যের মধ্যেও অভিজিৎয়ের স্ত্রী বন্যারও একই অভিজ্ঞতা হয়েছে।
শুধু রাজধানীর বেগুন বাড়িতে ব্লগার ওয়াশিকুর বাবুর হত্যাকারীদের ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছিলো কয়েকজন হিজড়া। ওই ঘটনা ছাড়া বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ডের সময়ে নিরাপদ দুরত্বে থেকে নিরব ভূমিকায় দেখা গেছে জনগণকে।
সাংবাদিকদের সামনে স্বামী হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন আশামনি।
শোক এবং আতঙ্কের মধ্যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ এবং তার অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে তিনি জানান, ‘খুনীরা ‘নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবর’ বলে আমার স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করে চলে যায়। বারান্দায় আমি বারবার ‘বাঁচাও, ‘বাঁচাও’ বলে চিৎকার দিলেও কেউ এগিয়ে আসেনি আমার স্বামীকে বাঁচাতে।”
নিলয়ের স্ত্রী জানান, দুপুর ১২টার দিকে আমার স্বামী বাজার থেকে ফিরে ড্রয়িংরুমে ল্যাপটপ নিয়ে বসেন। এসময় আমি ছাড়াও আমার ছোটবোন তন্বী ছিলাম বাসায়। হঠাৎ করে ২০-২১ বছর বয়সী জিন্সের প্যান্ট পরা এক যুবক দরজা খুলতেই বাসায় ঢোকেন। তিনি বাসা ভাড়া নেবেন বলে নিজ থেকেই দু’বার পুরো ফ্ল্যাট ঘুরে দেখেন।’
তখন আমি বলি, ‘আমরা তো বাসা ছাড়ছি না, বাসা ভাড়া নেবেন কীভাবে? বাড়িওয়ালাকেও তো এ বিষয়ে কিছু বলিনি’ এসময় ওই যুবক বলেন, ‘বাড়িওয়ালাই আমাকে দেখে যেতে বলেছেন’ বলে হাতে মোবাইলেও যেন কী করছিলেন।
‘আমি বিষয়টি ড্রয়িংরুমে আমার স্বামীকে জানাতে যাই। এইমধ্যে আরও তিন যুবক বাসায় ঢোকেন। এরমধ্যে একজনের মুখে দাড়িও ছিল। তারা ভেতরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দেন। তিনজন যুবকের হাতে রামদা ও একজনের হাতে পিস্তল দেখেছেন বলে জানান আশামনি।
বারবার মূর্ছা যাওয়া নিলয়ের স্ত্রী বলেন, ‘একজন আমার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বারান্দায় রেখে ভেতর থেকে দরজা লক করে দেয়। একইভাবে অন্য রুম থেকে তন্বীকেও এখানে নিয়ে আসে।’
স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে আশামনি বলেন, ‘অতীতেও এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। কিন্তু বিচার হতে দেখিনি। বিচার হলে আজ আমাকে স্বামী হারাতে হতো না।’
স্বামী হত্যাকাণ্ডের পর নিজেকেও ‘নিরাপত্তাহীন’ মনে করছেন যুবমৈত্রীর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও গণজাগরণ মঞ্চে নিলয়ের সঙ্গী আশামনি।