হরিহরের পাঁঠা মানত এবং সরকারের পদ্মা সেতু নির্মাণ

0
Padmaহিন্দুধর্মীয় সংস্কৃতির অতি পুরনো কাহিনী। ধরে নিন লোকটার নাম হরিহর। স্কুল-কলেজে পড়ার পরও বহু দিন বেকার। বেকার ছেলের কাছে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে চায় না। সংসার শুরু করার জন্য অধৈর্য হয়ে উঠেছিল হরিহর। একদিন কালীমন্দিরে গিয়ে উপুড় হয়ে ধরনা দিলো। মনে মনে মানত করল ভালো একটা চাকরি হলে মা কালীর নামে জোড়া পাঁঠা বলি দেবে।

কিছু দিনের মধ্যেই একটা চাকরি হলো, চাকরি পাকাও হলো; কিন্তু পাঁঠা বলির নাম নেই। মা কালী স্বপ্নে দর্শন দিলেন। হরিহর তার কথা রাখেনি বলে তম্বি করলেন। সে সবিনয়ে বলল একটু ধৈর্য ধরো মা, একটা বাসা কেনার চেষ্টা করছি, হয়ে গেলে পাঁঠা ঠিকই দেবো তোমাকে। বাসা কেনা হয়ে গেল, মা কালী আবার স্বপ্নে তাগিদ দিলেন। হরিহর বলল, মা কালী, পাঁঠার দাম আজকাল কেমন তুমি জানো। দুটোর বদলে একটা দিলে হয় না? দেবী বললেন বেশ, তাই দে। তারপরও পাঁঠা বলির নাম-নিশানা নেই। দেবী স্বপ্নে আবার আবির্ভূত হলেন তাগিদ দিতে। হরিহর বলল, ভালো একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছে, বিয়েটা হয়ে গেলেই পাঁঠা বলি দেবো।

যথাসময়ে ঘটা করে বিয়ে হয়ে গেল; কিন্তু কোথায় কার পাঁঠা? মা কালী এবার স্বপ্নে ঈষৎ রাগতস্বরে কৈফিয়ত চাইলেন। হরিহর মুখ কাঁচুমাচু করে বলল, বিয়ে ইত্যাদিতে অনেক টাকা ব্যয় হয়ে গেছে। তুমি যদি কিছু মনে না করো তাহলে একটা কবুতরই না হয় বলি দিলাম। দেবী তাতেও রাজি হলেন। কবুতরও বলি দেয়া হলো না। তার বদলে ফড়িং বলিতেও রাজি হলেন দেবী। তাতেও বিলম্ব দেখে দেবী আবার স্বপ্নে দেখা দিলেন। হরিহর আর কৈফিয়ত খুঁজে পাচ্ছিল না। সরাসরি বলে দিলো দেবী, তোর যখন এতই খাঁকতি, কষ্ট করে নিজেই কেন ধরে খাস না?

পদ্মার ওপর সেতুনির্মাণ নিয়ে বর্তমান সরকারের কথা ও কাজ নিশ্চয়ই সবাইকে হরিহরের কাহিনী মনে করিয়ে দেবে। সেতুর নকশা তৈরি ও অনুমোদন আগেই হয়েছিল। অর্থায়নেরও আয়োজন পাকাপাকি। মোট ব্যয়ের মূল অংশ খুবই সস্তা সুদে ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। মূল পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১১-১২ সালেই মাওয়া থেকে সোয়া ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক ও রেল সেতু নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা; কিন্তু সমস্যা দেখা দিলো আওয়ামী লীগ সরকারের চরিত্র নিয়ে। প্রকল্পের কাজ হবে কিন্তু মন্ত্রী, তাদের লেজুড় আর শাসক দলের সংসদ সদস্যরা মোট বাজেটের বখরা পাবে না, এ কেমন কথা? পদ্মা সেতুর কাজ শুরু না হতেই উপদেষ্টা ও ঠিকাদার নির্বাচনের পর্যায়েই হরির লুট শুরু হয়ে গেল। বিদেশে অন্তত তিনটি প্রাসাদোপম অট্টালিকার মর্টগেজ রাতারাতি শোধ হয়ে গেল!

এই হরির লুটের কেলেঙ্কারি বিশ্বব্যাংকেরও দৃষ্টি এড়াল না। তারা বেঁকে বসল। এসব দুর্নীতির তদন্ত ও বিচার না হলে তারা সেতু নির্মাণের টাকা দেবে না। বিশ্বব্যাংকের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ ছিল। এজাতীয় প্রকল্পে কিছু কিছু দুর্নীতি বহু দেশেই হয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের আমলে সেটা যে বহু গুণে বেড়েছে তা এখন আর কারো অজানা নেই। সংশ্লিষ্ট মহলে এখন বলা-কওয়া হয় যে বাজেট বরাদ্দের ৬০ শতাংশই এখন শাসক দলের মন্ত্রী-সংসদ সদস্য আর তাদের লেজুড়দের পকেটে চলে যায়। ফলে বাংলাদেশে বহু প্রকল্পের কাজ এখন অর্থাভাবে মাঝপথে থেমে যায়। বিশ্বব্যাংক প্রমাদ গুনল। পদ্মা সেতুর কাজও যদি মাঝপথে থেমে যায় সরকার তখন বিশ্বব্যাংককে ব্ল্যাকমেইল করবে, ব্যাংকের গলায় পা দিয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য বাড়তি টাকা আদায় করে নেবে। বলাই বাহুল্য, মন্ত্রী ও লেজুড়দের পকেট তাতে আরো ভারী হতে থাকবে। ব্যাংক সাফ বলে দিলো তদন্ত, বিচার ও শাস্তি না হলে তারা টাকা দেবে না।  ব্যাংকের এ অবস্থানে প্রধানমন্ত্রীসহ সর্বস্তরে সরকারের অবিশ্বাস্য ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়ার কথা আপনারা ভুলে যাননি, আশা করি।

আসলে এটা হচ্ছে এই সরকারের চরিত্রের আরেকটা বড় দিক। হাজার অন্যায় আর দুষ্কর্ম করে তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। কোথাও ধরা পড়ে গেলে কপট ক্রোধ আর গালাগালির ধূলিঝড় তুলে তারা নিজেদের দুষ্কর্মগুলো চাপা দিতে চায়। আবার বড় কোনো দুষ্কর্ম করার কিংবা খুবই বিতর্কিত কোনো কাজ করার আগে তারা বিএনপি এবং খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অযথা অসত্য গালিগালাজের ঝড় তুলে দেশবাসীর দৃষ্টি ভিন্নমুখী করতে চায়, যেমন বর্তমান সময়ে সরকারপ্রধান রোজই সকালে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নতুন অসত্য গালাগালি করে চলেছেন।

হ্যাটের ভেতর জাদুকরের খরগোশ

বলছিলাম পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সাফ জবাবের পর সরকারের প্রতিক্রিয়ার কথা। বহু ধানাইপানাই করে সরকার বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের তালিকা থেকে কয়েকজন মন্ত্রীর নাম তাদের নতজানু দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠাতে রাজি হলেও প্রধান অভিযুক্ত তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্তে কিছুতেই সম্মতি দেয়নি। পাঠকদের আরো মনে থাকার কথা যে, দেশব্যাপী ব্যাপক ধারণা হচ্ছে যে, ওই মন্ত্রী সরকারের শীর্ষতমপর্যায়ের কারো কারো পক্ষে প্রক্সিতে দুর্নীতি করতেন। এ ধারণায় কিছুটা বিশ্বাসযোগ্যতা থাকা স্বাভাবিক। অন্যদের বাদ দিয়ে শুধু এ মন্ত্রীকে বাঁচানোর জন্য সরকারের মরণপণ বাধাদানের আর কী ব্যাখ্যা হতে পারে? সরকারের পক্ষ থেকে প্রচারণা শুরু হয়ে যায় যে (সাধাসাধি করলেও) তারা বিশ্বব্যাংকের টাকা নেবে না। পরিবর্তে জাতির কাছ থেকে চাঁদা তুলে সেতুর ব্যয়নির্বাহ করা হবে। ছাত্রলীগ-যুবলীগ আরো এক দফায় চাঁদাবাজির ত্রাস সৃষ্টি করে। কিছু দিন পরে নতুন ঘোষণা হয় যে চাঁদার টাকা থেকে নয়, সরকার রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে সেতু নির্মাণের টাকা দেবে। এই তুঘলকি কাণ্ডকারখানার ফাঁকতালে সরকারের ক্যাডারেরা কত কোটি টাকা দেশের মানুষের কাছ থেকে আদায় করেছে, তার হিসাব কে দেবে?

ও দিকে ভেতরে ভেতরে সেতুর জন্য ঋণ সংগ্রহের তদবির চলছে বহু দেশে। প্রথমত, কোনো দেশই ঋণ দিতে রাজি হয়নি। বিশ্বব্যাংক যে দেশকে বিশ্বাস করতে পারে না সে দেশকে ঋণ দেয়ার ঝুঁকি কে নেবে? কোনো কোনো দেশ এত উঁচু হারে সুদ চাইল যে, এ সরকারও তাতে রাজি হতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঋণের তদবিরে দেশ-বিদেশে ঘুরে এলেন। শেষে নাকি চীন ঋণ দিতে এবং সেতুটি নির্মাণ করতে রাজি হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের অবস্থা এখন ম্যাজিক শোর দর্শকের মতো। ম্যাজিশিয়ান তার হ্যাট থেকে জ্যান্ত খরগোশ বের করেছেন। কী করে বিশ্বাস করা যায় যে, সে খরগোশ আসলেই খরগোশ? তার ওপর সরকারের মন্ত্রীরা অনবরত সেতু তৈরীর কাজ শুরু ও শেষ হওয়ার নিত্যনতুন সন-তারিখ দিয়ে চলেছেন। এখন আর কোনো কথাতেই মানুষ বিশ্বাস করতে পারছে না।

গত বছর বহু মন্ত্রী বহুবার ঘোষণা দিয়েছেন, নির্বাচনী পুলসিরাত পার হয়ে গেলেই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে। সত্যিকারের নির্বাচন করার কোনো ইচ্ছা সরকারের আদৌ ছিল না। তারা প্রতারণা করে আর ফাঁক-ফোকর দিয়ে বাকশালী কায়দায় গদি ধরে রাখতে চেয়েছিল। নির্বাচন হওয়ার আগেই প্রশাসনিক ঘোষণা দিয়ে সংসদে গরিষ্ঠতা লাভের কাজটা সমাধা হয়ে গেল। তারপর ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে অবশিষ্ট আসনগুলো। ‘নির্বাচনী বিজয়ের’ বৈধতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা সংগ্রহের ব্যর্থ চেষ্টায় ভারতীয় ও বাংলাদেশী কূটনীতিকেরা বহু দেশের রাজধানী চষে বেড়ালেন। শেষে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর গোপন বৈঠকের মিথ্যা বিবরণ প্রচার করে বেকায়দায় পড়লেন সরকারের কূটনীতিক ও প্রবক্তারা। এ দিকে সেতু নিয়ে জিজ্ঞাসা-সমালোচনা আবার সোচ্চার হয়ে ওঠে।  সেতুর নির্মাণকাজ ও কাজির গরু মন্ত্রী হওয়ার আগে ওবায়দুল কাদেরের কিছু বিশ্বাসযোগ্যতা ছিল। অন্তত আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে তো বটেই। দেশবাসীকে ভুয়া আশ্বাস দেয়ার প্রয়োজনে তাকেও বলতেই হলো যে, চলতি বছরের জুন মাসে সেতু নির্মাণের কাজ পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে। ভুয়া আশ্বাসের একটা সমস্যা এই যে, দাতা কখন কী আশ্বাস দিলেন সব সময় মনে রাখতে পারেন না। ওবায়দুল কাদেরও সে সমস্যার ফাঁদে পড়লেন। মাত্র দিন কয়েক আগে তিনি সম্ভবত বেমওকা বলে বসলেন, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হবে ২০১৫ সালে, অর্থাৎ আগামী বছর। মুখের কথা বেরিয়ে যাওয়ার পরই মন্ত্রী বোধ হয় বুঝতে পারলেন অথবা সহকর্মীদের কেউ তাকে বলে দিলেন যে মারাত্মক ভুল করে ফেলেছেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার ‘বোকা মানুষদের’ চোখ ঠারার চেষ্টায় তিনি বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে সেতু নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।

কাজির গরু নাকি কেতাবেই থাকে, গোয়ালে নয়। মাওয়া ঘাটে কিংবা পদ্মার ওপারের জাজিরায় কোনো নির্মাণকাজ কেউ চোখে দেখছে না। সোয়া ছয় কিলোমিটার সেতুর জন্য অনেক স্তম্ভ নির্মাণ করতে হবে। একটার কাজও, এমনকি খোঁড়াখুঁড়িও শুরু হয়েছে বলে কেউ শোনেনি। এক আঁটি লোহার রডও কি দেখা গেছে পদ্মার ধারে? অ্যাপ্রোচ রোড ইত্যাদির জন্য কিছু জমি সংগ্রহ হয়েছে, কিন্তু সেটা তো অনেক দিন আগেই হয়ে গেছে। সেটা নিয়ে শিয়ালের কুমিরের বাচ্চা দেখানোর অভিনয় কারোই বিশ্বাসযোগ্য হবে না।

তবে সরকারের ‘তৎপরতার’ একটা চিহ্ন দেখতে পেলাম পত্রান্তরে। সরকার নাকি ‘সেতুর জন্য’ ৩৮ খানি পাজেরো ও সমমানের বিলাসবহুল গাড়ি কিনেছে। নিশ্চয়ই বহু কোটি টাকা খরচ হয়েছে তাতে। দুই দিন ধরে ভাবছি, সেতু নির্মাণের কী কাজে লাগবে এসব গাড়ি। যেসব শ্রমিক সেতু নির্মাণে অংশ নেবে, এমনকি অ্যাপ্রোচ রোডও নির্মাণ করবেন, তাদের কি কোনো দিন পাজেরো গাড়িতে চড়ার সৌভাগ্য হবে? সেতুর ইট-কাঠ, লোহা-লক্কড়ও এসব গাড়িতে যাবে না। চীনের ঠিকাদারেরা সেতুনির্মাণ করবেন। তাদের প্রকৌশলী এবং পরিচালকেরা ঠিকাদার কোম্পানির যানবাহন ব্যবহার করবেন; অন্তত সেটাই হচ্ছে নিয়ম। সরকারের মন্ত্রী আর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কিংবা প্রশাসকদের মাঝে মাঝে মাওয়া কিংবা জাজিরায় যেতে হতে পারে। গোটা যোগাযোগ বিভাগ তো আর রোজ নির্মাণ স্থানে যাচ্ছে না যে, যে কারণে ৩৮ খানি পাজেরো গাড়ি ক্রয়ের প্রয়োজন দেখা দিলো!

তাহলে এই বিরাট বিলাসবহুল গাড়ির বহর কার ভোগে লাগবে? দিব্য চোখে দেখতে পারছি, মন্ত্রী, সচিব আর তাদের পরিবার এসব গাড়িতে চড়ে বাজার করতে কিংবা আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছেন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে মনোরম কোথাও পিকনিকে যাচ্ছেন। এসব গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ, ড্রাইভারের বেতন, পেট্রলের দাম ইত্যাদি সবই আসবে জনসাধারণের দেয়া রাজস্ব তহবিল থেকে। দেশের অসহনীয় যানজট আরো দুঃসহ হবে, পরিবেশের দূষণ বেড়ে যাবে। কিছুকাল আগে পত্রিকায় পড়েছি, বিভিন্ন সময়ে সরকারি কাজে ব্যবহারের জন্য যেসব গাড়ি কেনা হয়েছিল তার ভেতর কয়েক শ’ গাড়ি কোথায় আছে কেউ জানে না। গত কয়েক বছরে শত শত সরকারি গাড়ি লোপাট হয়ে গেছে। পদ্মা সেতুর নামে কেনা এই ৩৮টি গাড়ির কোনো কোনোটিরও নিশ্চয়ই সে দশা হবে এবং সরকারের কোনো কোনো প্রিয়ভাজন ব্যক্তির সম্পদের পরিমাণ আরো কিছু স্ফীত হবে।

এ সরকারের আমলে সম্ভব নয়

 ইতোমধ্যে সেতুর অভাবে দেশের অর্থনীতির কী পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে, কেউ হিসাব করে দেখেছেন কি? প্রায়ই ইন্টারনেটে পড়ছি প্রমত্তা পদ্মায় পানি কম অথবা চর সৃষ্টি হওয়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ। স্রোত খুব বেশি হলেও ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মাওয়া, পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়ায় শত শত ট্রাক ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন অচল পড়ে থাকছে। বাড়তি পেট্রল, বসে থাকা ট্রাকের ভাড়া, নিষ্ক্রিয় ড্রাইভারের বেতন ইত্যাদি বাবদ অর্থনীতির কোটি কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। আরো বড় ট্র্যাজেডি ঘটছে মাঝে মাঝে। মাত্র সেদিন একখানি ফেরি ডুবে গেল। বহু নিরীহ যাত্রী প্রাণ হারিয়েছেন। কিছু লাশ উদ্ধার হয়েছে, বেশির ভাগই উদ্ধার হয়নি। এমনকি ফেরি জাহাজখানিও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। শুনেছি নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খানের তিন ভাতিজি-ভাগ্নি ছিলেন মৃতদের মধ্যে। তাতে কি মন্ত্রী কিংবা সরকারের কিছু এসে যায়? শাহজাহান খান প্রায়ই দম্ভ করেন, তার আমলে ফেরি দুর্ঘটনা কম হচ্ছে। ও দিকে বিদেশীরাও বলছেন, যথাসময়ে পদ্মা সেতুটি নির্মিত হলে কত প্রাণহানি এড়ানো যেত, অর্থনীতির কত কোটি টাকা অপচয় হতো না।

পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়েছে কি হয়নি, না হলেও কবে হবেÑ এসব নিয়ে জল্পনা অবান্তর। বর্তমান অবৈধ বাকশালী সরকারের অধীনে সেতু আদৌ নির্মাণ হবে কী না আমার সন্দেহ আছে। নির্মাণকাজ শুরু হয়ে গেলে সংশ্লিষ্টদের আবার বখরা আদায়ের কথা মনে হবে, নির্মাণকাজ বন্ধ না হলেও বিলম্বিত হবে। অর্থনীতির একটা গুরুত্বপূর্ণ নীতি হচ্ছে উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির সর্বোত্তম পরিবেশ গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্যে। এই তিন শর্তের অনুপস্থিতি পদ্মা সেতুর কাল হয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More