পথে অনেক ভোগান্তি থাকলেও বাড়ি ফেরার খুশিতে সকল কিছু তুচ্ছ মনে হচ্ছে।’ ঢাকা থেকে বরিশাল যাচ্ছেন তিতুমীর কলেজের অনার্স দ্বিতীয় পর্বের ছাত্র আবদুল্লাহ। রাইজিংবিডিকে অনেকটা ছন্দ মিলিয়ে এভাবেই তার বাড়ি ফেরার অনুভূতি জানালেন। পবিত্র ঈদুল আজহার আর মাত্র দুই দিন বাকি। এরই মধ্যে রাজধানী ঢাকা প্রায় ফাঁকা। গতকাল যারা ঢাকা ছাড়তে পারেননি, তারা আজ শুক্রবার সকাল থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। আর দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ লঞ্চে করে বাড়ি ফিরছেন। তাই দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা যে যার মতো দুপুর থেকেই ছুটেছেন লঞ্চঘাটের দিকে। যারা কেবিন কিংবা সোফার টিকিট আগেই সংগ্রহ করেছেন, তারা দুপুরের পর থেকে লঞ্চঘাটে গেছেন। রাজধানীর ভেতরে অনেকটা ফাঁকা হলেও ঢাকার সংযোগ সড়কসহ সদরঘাটের আশপাশে ভয়াবহ যানজট ছিল। সীমিতসংখ্যক লঞ্চ চলাচল করায় লঞ্চ কর্তৃপক্ষকেও পোহাতে হচ্ছে নানান ঝামেলা। এরই মধ্যে সরকার-নির্ধারিত হারের অজুহাত তুলে প্রথম শ্রেণির টিকিটের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক লঞ্চ কর্মকর্তা বলেন, ‘ঈদ আসলেই টিকিট নিয়ে শুধু যাত্রী ভোগান্তি নয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও ভোগান্তির শেষ নেই। যাত্রীরা অভিযোগ করেই খালাস। কিন্তু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমস্যা নিয়ে চিন্তা নেই কারো।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিটি লঞ্চে যে পরিমাণ কেবিন আছে, ঈদে চাহিদা রয়েছে তার ১০ গুণ। এ অবস্থায় কাউকে টিকিট না দিতে পারলে শুরু হয় নানান কাল্পনিক অভিযোগ। পাশাপাশি প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং কর্মকর্তাদের কেবিন দিতে না পারলেও হতে হয় নানাভাবে নাজেহাল।’ বিকেলে ঢাকা নদীবন্দর (সদরঘাট) ঘুরে দেখা গেছে, দুপুরের পর থেকে লঞ্চঘাটে ছিল উপচে পড়া ভিড়। যাত্রীরা লঞ্চের ভেতর ও ছাদে যেখানেই জায়গা পেয়েছেন সেখানে উঠে বসেছেন। ঘাট থেকে ৪১টি রুটে শতাধিক লঞ্চ চলছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা যায়, আজ মোট ১৩০টি লঞ্চ বরিশাল, চাঁদপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠিসহ দক্ষিণাঞ্চলের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ৬০টি লঞ্চ ঢাকা ছেড়ে গেছে। ৩৫টির মতো লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার জন্য ঘাটে রয়েছে। স্পেশাল সার্ভিসের জন্য আরো রয়েছে ৩৩টি লঞ্চ। এবারে ঢাকা-বগা লাইনে নতুন একটি লঞ্চ যাত্রা শুরু করেছে। ২৫০ জন যাত্রী ধারণক্ষমতার লঞ্চটির নাম কাজল-৭। ঢাকা থেকে বরিশাল রুটে প্রতিটি লঞ্চের ডাবল কেবিন আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা, সিঙ্গেল কেবিন দেড় হাজার ও সোফা ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ক্ষেত্রবিশেষে এসব ভাড়া কম-বেশি করা হচ্ছে। বিআইডব্লিউটির যুগ্ম পরিচালক (ট্রাফিক) জয়নাল আবেদিন রাইজিংবিডিকে জানান, ঈদে যাত্রীর প্রচণ্ড চাপ রয়েছে। তবে রোজার ঈদের তুলনায় চাপ কম। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানান তিনি। অতিরিক্ত যাত্রীর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রীর বিষয়ে আমরা সচেতন রয়েছি। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর কয়েকটি টিম সার্বিক তদারকি করছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও কাজ করছেন।’