২০১৮ সাল থেকেই র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাথে সকল প্রকার সহযোগিতামূলক সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন দেশটির স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস।
মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও জানান তিনি। বুধবার (যুক্তরাষ্ট্র সময়) স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে দেশটির পক্ষে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন নেড প্রাইস।
র্যাব প্রসঙ্গে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে নেড প্রাইস বলেন, সত্যিকার অর্থে, বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০১৮ সাল থেকে র্যাবের সাথে সকল ধরনের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়েছিল। মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে র্যাবের ৬ জন বর্তমান এবং প্রাক্তন কর্মকর্তাকে গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি আইনের আওতায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। তিনি আরো জানান, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় র্যাবের দুই প্রাক্তন কর্মকর্তাকে প্রকাশ্যে ৭০৩১ (সি) আইনের ক্ষমতাবলে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ বা দক্ষিণ এশিয়া কিংবা বিশ্বের যে কোন প্রান্তেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মানবাধিকার-এমনটা জানিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র আরও বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে সেগুলোর প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে এবং ব্যবস্থা নিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
নেড প্রাইস বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা এবং এই ভিসা বিধিনিষেধের লক্ষ্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগে (র্যাবকে) সংস্কারের আওতায় আনা। সর্বোপরি মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধ করা। আমরা যেমন এই অভিযুক্তদের দায়বদ্ধ রাখতে চাই, তেমনি আমরা অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই, ন্যায়বিচার পরিচালনা এবং আইনের শাসন রক্ষার জন্য নিজস্ব ক্ষমতা বিকাশে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সাথে অংশীদারিত্ব অব্যাহত রাখবো। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ প্রদান, আমাদের উক্ত নীতিমালারই বহিঃপ্রকাশ।
বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের উপর আক্রমণ প্রসঙ্গে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, যারা সমাবেশের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সার্বজনীন অধিকার প্রয়োগ করছেন তাদের উপর আক্রমণের ক্ষেত্রে আমাদের মন্তব্য অভিন্ন। আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে শান্তিপূর্ণভাবে কথা বলার, সমাবেশ করার এবং নিজেদের প্রত্যাশা বাস্তবায়ন করার অধিকার যে কোনো স্থানের জনগণেরই রয়েছে।
গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিশেষ পুলিশ র্যাব এবং এর ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
এতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের দিনে মার্কিন অর্থ দফতরের ফরেন অ্যাসেটস কনট্রোল অফিস (ওএফএসি) বিভিন্ন দেশের মোট ১০টি প্রতিষ্ঠান ও ১৫ জন ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে- যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নিপীড়নের সাথে সংশ্লিষ্ট।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত ছয় জন কর্মকর্তা হচ্ছেন: চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন (বর্তমান আইজিপি), বেনজির আহমেদ (সদ্য অবসরপ্রাপ্ত আইজিপি ও সাবেক র্যাব মহাপরিচালক, জানুয়ারি ২০১৫-এপ্রিল ২০২০), খান মোহাম্মদ আজাদ (বর্তমান অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশনস), তোফায়েল মুস্তাফা সরওয়ার (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশনস, জুন ২০১৯-মার্চ ২০২১), মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশনস, সেপ্টেম্বর ২০১৮-জুন২০১৯), এবং মোহাম্মদ আনোয়ার লতিফ খান (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশনস, এপ্রিল-২০১৬-সেপ্টেম্বর ২০১৮)।