শোকে অসুখে ভালো নেই খালেদা জিয়া

0

112505_1শরীর ও মন কোনোটাই ভালো নেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। টানা ৪০ দিন ধরে গুলশানে রাজনৈতিক কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় দুই রুমের মধ্যে হাঁটাচলায় সীমাবদ্ধ সত্তোরোধর্্ব বেগম জিয়ার দৈনন্দিন জীবন। বাইরের আলো-বাতাস দেখা মেলে না তার। নানা রোগ-শোকে থাকা বিএনপি-প্রধানকে প্রতি রাতেই ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. মামুন এসে শারীরিক চেকআপ করান। এ ছাড়া কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারও মাঝে-মধ্যে এসে বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়ে যান। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, পায়ের গোড়ালির সমস্যা, এলার্জি, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগের প্রতিনিয়ত চেকআপ করা হয়। তবে পিপার স্প্রে নিক্ষেপের ফলে শ্বাসকষ্ট ও এলার্জি সমস্যা এখন আর নেই বলে জানা গেছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে এখন অনেক ভালো। প্রতিনিয়ত শারীরিক চেকআপ করা হচ্ছে। একজন চিকিৎসক নিয়মিত আসছেন। তবে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন ধরে কার্যালয়ে থাকলে একজন নেত্রী কতটা ভালো থাকতে পারেন- এটা সবারই জানা।’

গুলশান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান, চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও নতুন নির্বাচনের দাবিতে থাকা নিজের অবস্থানে এখনো অনড় তিনি। সম্প্রতি ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মারা যাওয়ার ঘটনায় শোক কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। যদিও ছেলের মৃত্যুর পর থেকে বেগম জিয়ার খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম হচ্ছে। শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল হয়েও পড়েছেন শোকাহত খালেদা জিয়া। এরই মধ্যে গত শুক্রবার রাতে তার কার্যালয়ের বিদ্যুৎ, টেলিফোন, ডিস, ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনের সংযোগ ছিন্ন করা হয়। প্রায় ২০ ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হয়। এ ছাড়া গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্কও সংযুক্ত করা হয়। তবে অন্যান্য সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এ কারণে নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও রাজনৈতিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বিএনপিপ্রধানের। এসব কারণে টেনশনে সময় কাটে বেগম জিয়ার। দুই দিন ধরে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান নেওয়া প্রায় অর্ধশত নেতা-নেত্রী, স্টাফ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাইরে থেকে আসা খাবার প্রবেশে বাধা দেওয়ায়ও গভীর চিন্তিত বেগম জিয়া।

জানা যায়, পুলিশি পাহারায় কার্যালয়ের অবস্থা, শোকগ্রস্ততা, বিদ্যুৎহীন অন্ধকার, গ্রেফতারের ঝুঁকি ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা- কোনো কিছুই টলাতে পারেনি বেগম জিয়াকে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সরকারবিরোধী আন্দোলন থেকে পিছপা হবেন না বলে আন্দোলনরত নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন মাধ্যমে বার্তা পাঠিয়েছেন তিনি। চেয়ারপারসন কার্যালয় সূত্র জানায়, বড় ছেলে তারেক রহমানের শ্বশুরবাড়ি থেকে প্রতিদিন খাবার আসে। নিজের বাসা থেকেও খাবার আসে। কখনো কখনো দুই ভাই সাঈদ এস্কান্দার ও শামীম এস্কান্দারের পরিবার থেকেও বেগম জিয়ার জন্য খাবার আসে। খাবারের ব্যাপারে অনেক বেশি যাচাই-বাছাই ও নিয়ম রক্ষা করে চলেন খালেদা জিয়া। খাবার খান খুবই পরিমিত- সামান্য একটু ভাত এবং সবজি, মাছ বা এক টুকরো মাংস। বেশির ভাগ দিন তার মেন্যুতে থাকে করলা ভাজি। এটি তিনি খুবই পছন্দ করেন। তিনি প্রায়ই পেঁপের জুস ও তাজা ফলমূল খান। সূত্র জানায়, রাতে ঘুমাতে যান দেরিতে। সকালের নাশতা ও চা খেয়ে তিনি কিছুক্ষণ পত্রপত্রিকায় চোখ বোলান। দলের কাজকর্মের কিছু কাগজপত্রও দেখেন। বিকাল বা সন্ধ্যার পর গুলশানে অবস্থান নেওয়া নেতা-নেত্রী ও স্টাফদের সঙ্গে কথা বলেন।

৩ জানুয়ারি রাত থেকে গুলশান কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে অবস্থান করছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ুম, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান সোহেল, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, একান্ত সহকারী মাহবুব আল আমিন ডিউ, একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার, প্রেস উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার, শায়রুল কবীর খানসহ কয়েকজন কর্মকর্তা। এ ছাড়া খালেদা জিয়াকে সহায়তা করার জন্য তার বাসা থেকে আসা কয়েকজন গৃহকর্মীও রয়েছেন প্রথম দিন থেকেই। সব মিলিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে অর্ধশত নেতা-নেত্রী ও স্টাফ সেখানে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

গুলশান কার্যালয়ে খাবার প্রবেশে বাধা : দুই দিন ধরে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে নেতা-নেত্রী ও স্টাফদের জন্য বাইরে থেকে পাঠানো খাবার প্রবেশে বাধা দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কার্যালয়ে অবস্থানরত নেতা-নেত্রী, তার কর্মকর্তা ও নিরাপত্তারক্ষীরা শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। বুধবার রাতে খাবার নিতে পুলিশ বাধা দেয়। এর পর গতকাল সকালের নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবারও কার্যালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

কার্যালয়ে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বুধবার রাতে খাবার নিতে বাধা দেওয়ার ঘটনা শুনে বিএনপি চেয়ারপারসন তার কার্যালয়ে অবস্থানরতদের খোঁজখবর নিয়েছেন। তিনি নিজে সবাইকে খোরমা খেজুর ও মুড়ি দিয়েছেন। কার্যালয়ে থাকা শুকনো খাবার খেয়েই দিন কাটাচ্ছেন বলে জানান দিদার। অবশ্য পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে খাবার ঢুকতে দেওয়া হয়নি, এমন তথ্য তার জানা নেই। প্রতিদিন যেভাবে খাবার যায়, গতকালও সেভাবে খাবার গেছে বলে জানান তিনি।

কার্যালয়ে প্রবেশে বিধিনিষেধ : পরিবার-পরিজন ছাড়া গুলশান কার্যালয়ে কাউকেই প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। গতকাল রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। কিন্তু পুলিশি বাধায় সাংবাদিক নেতাদের ফেরত পাঠানো হয়। সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে ছিলেন- রুহুল আমিন গাজী, এম এ আজিজ, আমিরুল ইসলাম কাগজী, সৈয়দ আবদাল আহমদ ও ইলিয়াস খান। এর আগে ক্রসফায়ারে নিহত ছাত্রদল নেতা নূরুজ্জামান জনির স্ত্রী, মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যরা দেখা করতে গেলেও পুলিশ তাদের প্রবেশে বাধা দেয়। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা ছাত্রদল নেত্রী সেলিনা সুলতানা নিশিতাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। গতকাল সকাল থেকেই গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদেরও প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। কয়েক দিন ধরে কার্যালয়ে অন্যদের প্রবেশে বাধা থাকলেও হাতেগোনা কিছু সংবাদকর্মীদের স্পেশাল ব্রাঞ্চের রেজিস্টার খাতায় নাম-ঠিকানাসহ বিস্তারিত লিপিবদ্ধ করার পর সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হতো। অবশ্য বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মিরপুর আহলে দরবার শরিফ মসজিদের আবদুল মজিদসহ চারজন কিছু তবারক নিয়ে কার্যালয়ে এলে পুলিশ তাদের কিছুক্ষণ অপেক্ষায় রেখে কার্যালয়ে প্রবেশ করতে দেয়। কার্যালয়ে সাংবাদিক প্রবেশে কোনো বাধা আছে কিনা জানতে চাইলে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা মোক্তারুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, ‘এটা উপরের নির্দেশ। এ বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারব না।’

কার্যালয়ের সামনে ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ : হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার ও নাশকতা বন্ধের দাবিতে গতকাল দুপুরে কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছে ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ নামে একটি সংগঠন। তারা কার্যালয়ের মূল ফটকের সামনে কিছু সময় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সংগঠনের সভাপতি হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারছে না। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারছেন না। বিএনপি-জামায়াত দেশ ধ্বংস করছে।’

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More