ইসলামি দলগুলোর ২১ পালনে ‘ভিন্ন’ পন্থা

0

islami-party-Bangladeshঢাকা: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস একুশে ফেব্রুয়ারি পালনে সারাদেশের মানুষ শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানালেও অধিকাংশ ইসলামি দলগুলোর পা পড়েনি শহিদ মিনারে। তাদের মতে, শহিদ মিনারে ফুল দেয়া ইসলাম সমর্থিত নয় বলে তারা সে কাজ থেকে বিরত থেকেছে।

হাতে গোনা দুয়েকটি ইসলামি দল ছাড়া আর কাউকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায়নি। তবে দিনটি পালনে তারা বেছে নিয়েছে ‘ভিন্ন’ পন্থা। জামায়াতে ইসলামি তাদের কর্মসূচি সীমাবদ্ধ রেখেছে বিবৃতির মধ্যে। অন্যান্য ইসলামি দলগুলোও শহিদদের স্মরণ করেছে নিজস্ব ‘গণ্ডিতে’ আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে।

ভাষা দিবসের আগের দিন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমেদ ‘যথাযথ মর্যাদায় ভাষা দিবস’ পালনের আহ্বান জানিয়ে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠান। এতে তিনি বলেন, “বাংলা ভাষাকে সর্বস্তরে যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করে বিজাতীয় শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক আগ্রসন থেকে হেফাজত করতে হবে। তা হলেই ভাষা আন্দোলনের শহিদদের স্বপ্ন স্বার্থক হবে।”

তবে একুশে ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর কোথাও শহিদ মিনারে গিয়ে জামায়াত কর্মীদের শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায়নি। এমনকি প্রকাশ্যে ভাষা দিবস নিয়ে অনুষ্ঠান কিংবা অন্য কোনো আয়োজনও চোখে পড়েনি। এ বিষয়ে জামায়াতের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি। রাজধানীর মোহাম্মদপুর জোনের জামায়াতের একজন দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাদেশকে বলেন, “শহিদ মিনারে আমরা ফুল কখনোই দেই না। এটা আমরা সমর্থনও করি না। বরাবরই আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের মধ্যে ভাষা দিবসকে স্মরণ করি। এবারও নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় এ আয়োজন হচ্ছে। তবে সরকারি দলের ভয়ে প্রকাশ্যে করার সুযোগ পাচ্ছি না।”

সদ্য ২০ দল থেকে বেরিয়ে যাওয়া ইসলামী ঐক্যজোটও লালবাগ মাদরাসায় নিজস্ব গণ্ডিতে দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে ভাষা শহিদদের স্মরণ করেছে। এতে দলের গুটি কয়েক নেতা ও মাদরাসার কিছু শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। দলের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামীসহ অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতাই এ দোয়া মাহফিলে অংশ নেয়নি।

ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ নিউজবাংলাদেশকে বলেন, “শহিদ মিনারে গিয়েই শ্রদ্ধা জানাতে হবে, বিষয়টি এমন না। যারা দেশের ভাষার জন্য শহিদ হয়েছেন, তারা অত্যন্ত সম্মানিত। আমরা তাদের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়ার মাধ্যমে স্মরণ করেছি। তাদের পরিবার ও স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছি। তারা আমাদের কাছে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।”

একুশের বিকেলে পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভাষা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ঢাকা মহানগর সভাপতি এটিএম হেমায়েত উদ্দিনের সভাপতিত্বে এ আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ। তবে এ দলটিরও কেউ শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়নি।

এ বিষয়ে দলের কেন্দ্রীয় প্রচার ও নগর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আহমদ আব্দুল কাইয়ুম নিউজবাংলাদেশকে বলেন, “ইসলাম শহিদ মিনারে মালা দেয়া সমর্থন করে না। ইসলামি দল হিসেবে আমরা এ কাজটি করতে পারি না। তবে আমরা ভাষাকে ভালোবাসি, শহিদকে ভালোবাসি। সেজন্যই নিজস্ব আয়োজনে দোয়ার মাধ্যমে শহিদদের স্মরণ করেছি।”

নিজেদের পরিসরে দোয়ার আয়োজন করেছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামও। দুপুরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ আয়োজন করা হয়। তবে ওই আয়োজনে দলের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতাই অনুপস্থিত ছিলেন বলে দলীয় সূত্র জানায়।

শহিদ মিনারে না যাওয়া প্রসঙ্গে দলটির কেন্দ্রীয় কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা ওয়ালি উল্লাহ আরমান নিউজবাংলাদেশকে বলেন, “শহিদ মিনারে যাওয়া বা ফুল দেয়া ইসলাম স্বীকৃত কোনো বিষয় না। যারা শহিদ মিনারে যাচ্ছে তারা মনগড়া পন্থায় শহিদদের স্মরণ করছেন। আমরা মুসলমান হিসেবে বিশ্বাস করি যারা ভাষার অধিকার রক্ষায় শহিদ হয়েছেন দোয়া করলেই তাদের জন্য উপকার হবে। তাই ইসলাম সমর্থিত পথেই আমরা তাদেরকে স্মরণ করেছি।”

খোঁজ নিয়ে জানা যায় অন্যান্য ইসলামি দলগুলোও নিজেদের মধ্যে থেকে ছোট ছোট আয়োজনের মাধ্যমে ভাষা দিবস পালন করেছে। এ দিবস নিয়ে বড় কোনো আয়োজন কোনো ইসলামি দলকেই করতে দেখা যায়নি। এমনকি হেফাজতে আন্দোলনও এ দিবস নিয়ে কোনো আয়োজন কিংবা গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠায়নি।

তবে মহাজোটের শরিকদল বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন একুশের প্রথম প্রহরেই শহিদ মিনারে গিয়ে ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছে। বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টও শহিদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More