ঢাকা: মন্ত্রী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, দলের প্রাথমিক সদস্য পদ হারানোর পরে এবার সংসদ সদস্য পদও হারাতে পরেনে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। শুক্রবার দলের কার্যনির্বাহী কমিটির রুদ্ধদার বৈঠকে সৈয়দ আশরাফ বলেছেন, বিতর্কিত এই ব্যক্তির এমপি পদ থাকা ঠিক নয়। বৈঠক সুত্র এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে বৈঠকের পরেও সৈয়দ আশরাফ সাংবাদিকদের এমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন। দল থেকে বাদ পড়ায় লতিফের সংসদ সদস্যপদ থাকছে কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে আশরাফ বলেন, “আমরা আমাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ইসিতে পাঠিয়ে দেব। ইসির সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত।”
বৈঠক শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আরো বলেন, “ধর্মীয় অনুভৃতিতে আঘাত হেনে বক্তব্য দেয়ায় মন্ত্রিসভা ও সভাপতিমণ্ডলীর পদ থেকে অব্যাহতির পর লতিফ সিদ্দিকীকে কারণ দর্শাও নেটিস দেয়া হয়েছিল। তিনি যে জবাব দিয়েছেন তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে তার প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিল করে দল থেকে বহিষ্কারের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।” লতিফ সিদ্দিকী এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দলে আপিল করার সুযোগ পাবেন না বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বাগত ভাষণের পর রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বক্তব্য রাখেন, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, আবদুল মতিন খসরু, শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, এইচএন আশিকুর রহমান, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, একেএম রহমত উল্লাহ, নুরুল মজিদ হুমায়ুন, সুভাষ বোস প্রমুখ।
লতিফকে নিয়ে যা বললেন নেতারা
বৈঠকের শুরুতেই দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর চিঠি পাঠ করে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সদস্যদের শোনান। এ সময় আশরাফের বক্তব্য পাঠ শেষ না হতেই বেশ কয়েকজন নেতা বক্তব্য দেন।
বৈঠক সুত্র জানায়, দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, এই আবদুল লতিফ সিদ্দিকী দীর্ঘ রাজনীতির জীবনে অবদান আছে স্বীকার করতে হবে। তবে তিনি অনেক বির্তকে জড়িয়েছেন। ৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক সরকারকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। এরপর ৮১ সালে নেত্রী (শেখ হাসিনা) যখন দেশে আসে তখন তিনি ভারতে অবস্থান করেও বিরোধিতা করেছিলেন। ৮৬-তে এরশাদ সরকারকে সমর্থন জানিয়ে তার স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকীকে এমপি বানিয়েছিলেন।”
এছাড়া অনেক বির্তকিত বক্তব্য রেখেছেন, দল ও সরকারকে বিব্রত করেছেন। এছাড়া ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে যে বক্তব্য দিয়েছে, তা দলের ঘোষণাপত্র ও গঠণতন্ত্রবিরোধী। কোনোভাবেই তাকে অনুকম্পনা করার সুযোগ নেই। তার প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হোক।” এ সময় উপস্থিত সবাই টেবিল চাপড়িয়ে সমর্থন জানান।
সৈয়দ আশরাফ আরো বলেন, আমরা তার এমপি পদ থেকে বহিষ্কারের জন্যও নির্বাচন কমিশনে লিখিত আবেদন জানাবো।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভেবেছিলাম লতিফ সিদ্দিকী বক্তব্য অতিকথনের অংশ হিসেবেই বলেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে তার বক্তব্যে অটুট থাকায় প্রমাণিত তিনি দুরভিসন্ধি কোনো পরিকল্পনা নিয়ে এ বক্তব্য রেখেছে। এটি সুপরিকল্পিত কোনো ষড়যন্ত্র কি না তাও খতিয়ে দেখতে হবে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে হজ, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.), তাবলীগ জামায়াত ও ইসলাম ধর্ম নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করেন। সঙ্গে সঙ্গে বিদেশে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী তাকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করার ঘোষণা দেন। গত ১২ অক্টোবর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তাকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
ওইদিন লতিফ সিদ্দিকীর প্রাথমিক সদস্যপদ স্থগিতেরও সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। তাকে কেন চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হবে না- তা জানতে চেয়ে ১৪ অক্টোবর কারণ দর্শাও নোটিস পাঠানো হয়।
চিঠিতে যা বলেছেন লতিফ
কলকাতায় অবস্থানরত লতিফ সেখান থেকেই নিজের জবাব পাঠিয়ে দেন। দীর্ঘ কয়েক পৃষ্ঠার চিঠিতে তার বক্তব্যে খণ্ডিত আকারে ব্যাখ্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন।
দীর্ঘ এ চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, দলের সভাপতিমণ্ডলীর পদ ও মন্ত্রী হচ্ছে একজন রাজনীতিবিদের জন্য ‘অলঙ্কার’। আর প্রাথমিক সদস্যপদ হচ্ছে ‘হৃদপিন্ড’। আমার দীর্ঘ রাজনীতিতে জীবনের ত্যাগ, তিতীক্ষা বিবেচনা করে দল প্রাথমিক সদস্যপদটি বহাল রাখতে বিবেচনা করবে বলে মনে করছি।