একদিনের জন্যও বিএনপিকে ছাড় দিবেন না শেখ হাসিনা

0

100184_1একদিনের জন্যও বিএনপিকে ছাড় দিবেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত জিরো টলারেন্স ও বিএনপিকে দমন করার অবিচল থেকেই এই সরকারকে পাঁচ বছর মেয়াদ পুর্তির ইতিহাস তৈরি করতে চাইছেন। এই জন্য যত কঠোর হওয়া দরকার তা হবেন। ইতোমধ্যে তার সিদ্ধান্ত নীতি নির্ধারক মন্ত্রীদেরও জানিয়েছেন। তাদেরকে সেইভাবে দলের ও সরকারের পক্ষে সবাইকে আশ্বস্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তারা কাজও করছেন।

শেখ হাসিনার ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে কোন ভুল করেছেন ৫ জানুয়ারির নির্বাচন করে এটা মনে করেন না। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী তার করা নির্বাচন বৈধ আর ওই নির্বাচন করেই যে সরকার গঠন করেছেন সেই সরকারও শতভাগ বৈধ বলেই মনে করেন। এই কারণেই তিনি বিএনপি ও সকল আন্তর্জাতিক মহলের চাপকে উপেক্ষা করছেন। কোন চাপের কাছে তিনি ২০১৩ সালে নতি শিকার করেননি। এবারও করবেন না। ২০১৩ সালে তার বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করার ব্যাপারে চাপ ছিল ভিন্ন। আন্তর্জাতিক মহল বলেছিল বিএনপিকে নিয়ে ও সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করতে হবে। এই জন্য সরকারও চিন্তা করেছিলেন বিএনপিকে বাদ দিয়ে নয় বিএনপিকে নিয়েই নির্বাচন করতে হবে। সেই জন্য শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে ফোন করেছেন। দাওয়াত দিয়েছিলেন। বিদেশিদের সঙ্গে আলোচনা করতেও তার নেতাদেরকে বসার অনুমতি দিয়েছিলেন। বিএনপি নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা করার অনুমতি দেন। বিএনপি কি চায় সেটাও লিখিত নেন। ওই সময়ে তিনি সময় ক্ষেপণ করে সফল হন। সব বাঁধা উপক্ষো করে ওই সময়ের ভারত সরকার নির্বাচনের ব্যাপারে ইতিবাচক মত দেয়। এবং নির্বাচন যথা সময়ে করারও তাগিদ দেন। সেই সময়ে সরকার নির্বাচনও করে ফেলে।

কিন্তু এখন আর সরকারের উপর সেই ধরনের চাপ নেই। বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখার পর যে অবস্থা হতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল ২০১৩ সালে এখন তা নেই। বিএনপি ২০১৪ সালে তেমন কোন চাপ তৈরি করতে না পারায় ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে যে চাপ তৈরির চেষ্টা করছে সরকার সেটা নিয়ে চিন্তিত নয়। এখনও তিনি মনে করেন সব তার নিয়ন্ত্রণে। প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হিসাবে সব কিছুই তার নিয়ন্ত্রণে। তিনি যে নির্দেশ দিচ্ছেন সেই অনুযায়ী বেশিরভাগ কাজ হচ্ছে।

তাই গত ৩৪ দিনের আন্দোলনে বিএনপি সরকারের উপর বিশেষ কোন চাপ তৈরি করতে পারছে না। অবস্থাও সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে এমন ধরনের কোন অবস্থা না হওয়ার কারণে সরকার ধরেই নিয়েছে বিএনপি এখন আর কিছুই করতে পারবে না। যতই আন্দোলন করুক না কেন। তিনি এই সব বিষয়ে কোন গুরুত্ব দিবেন না। তিনি যতক্ষণ ক্ষমতাসীন আছেন আর সমঝোতা করবেন না।

সরকারের একজন নীতি নির্ধারক মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার প্রতি তার ছেলের মৃত্যুর পর সহানুভূতি জানাতে গেছেন। কিন্তু তার সহানভূতি তিনি নেননি। আর তাকে অফিসের বাইরে থেকে বিদায় দিয়েছেন। এটাকে ভীষণ মর্মাহত হয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি এই অপমানও সহ্য করতে পারছেন না। একজন প্রধানমন্ত্রীকে অপমান করার ধৃষ্টতাও খালেদা জিয়া দেখিয়েছেন। কিন্তু এটা মেনে নেওয়া যায় না।

ওই মন্ত্রী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া মনে করছেন বিদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করলে আর দেশের বিরুদ্ধে এবং সরকারের বিরুদ্ধে বললেই তারা চাপ তৈরি করবে। আর সেই চাপের কারণে শেখ হাসিনা সরকার থেকে পদত্যাগ করবে। বিএনপি এখন নতুন করে দাবি তুলেছে সরকার মধ্যবর্তী নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে সরকারকে পদত্যাগ করার দাবি জানিয়েছে। কিন্তু তারা এটা জানেন না যে সরকার শেষ দিন পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করবে। আর একদিন আগেও বিএনপির দাবির প্রেক্ষিতে ক্ষমতা ছাড়বে না। এটা বিএনপি যদি মনে রাখে তাহলে তাদের লাভ হবে। অন্তত এই আন্দোলন চার বছর টেনে নিয়ে দেশের ক্ষতি করবেন না।

আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক বলেন, বিএনপি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য দেশে বিদেশে বাংলাদেশের ইমেজ নষ্ট করছে। তারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য দেশের বিরুদ্ধে কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ সবার কাছেই দেশের ও সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যে তথ্য দিচ্ছেন। আর এতে করে তারাও ওই তথ্যের ভিত্তিতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে। সরকারকে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করতে বলছে।

এটা আসলে তারা বলে কি করবে। এই ভাবে কি বিদেশিদের দিয়ে তারা সরকারের পতন ঘটাতে পারবে। বাংলাদেশ স্বাধীন। স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে আমরাই সব ধরনের সিদ্ধান্ত নেব। দেশটাকে বিদেশিদের দিয়ে চাপ স্বীকার করিয়ে সরকারকে দিয়ে সংলাপে ও সমঝোতায় বসানোর চেষ্টা সফল হবে না। তিনি বলেন, বিদেশিরা কি বলতে চান সেটা শুনতে সমস্যা নেই। তাদের কথা শুনে আমাদের কথাও তাদেরকে বলতে হবে। না বললে তারা বিএনপির ভুল তথ্যগুলো বিশ্বাস করবে। কিন্তু সরকার হিসাবে আমরা দেশের ইমেজ কেউ নষ্ট করবে সেটা সহ্য করবো না। এই কারণেই তাদেরকে আমরা প্রকৃত অবস্থা জানানোর চেষ্টা করছি। তাদেরকেও মনে রাখতে হবে একটি দেশের সংবিধানই বড়। সেখানে অসাংবিধানিক কোন কিছু করানোর চেষ্টা কিংবা সরকারকে চাপ দেওয়া তাদের সমুচিত হবে না। তারা যে এই দেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলেন, সেটাতো তারা পারেন না।

প্রধানমন্ত্রী বিএনপির আন্দোলন নিয়ে বলেছেন, ধ্বংস করা, পুড়িয়ে ফেলা, লাশ ফেলা ছাড়া আর কোনো অর্জন তাদের নাই। এটা করে যদি মনে করেন, বিরাট কিছু করে ফেলেছেন- তা হলে জাতির জন্য দুর্ভাগ্যের। কারণ, এরা দেশের নেতৃত্ব দেবে। এরা ক্ষমতায় ছিল। আবার ক্ষমতায় যাবার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু সে ক্ষমতা মানুষের লাশের ওপর দিয়ে কেন? সেটাই আমার প্রশ্ন। তিনি বলেন, ক্ষমতায় যেতে হলে গণতান্ত্রিক উপায়েই যেতে হবে। দশম সংসদ নির্বাচনে না গিয়ে বিএনপি ভুল করেছেন মন্তব্য করে বলেন, ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে খালেদা জিয়া, নির্বাচনে যায় নাই। এর খেসারত জাতি কেন দেবে? মানুষ পুড়িয়ে মেরে সেই লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় যাবেন? এটা কোন ধরনের বিবেচনা? কী ধরনের কাজ- আমি জানি না। আল্লাহ তাদের সুমতি দিক। হাসিনা বলেন, বিএনপি নেত্রী বোধ হয় উম্মাদ। নইলে বাড়িঘর ছেড়ে অফিসে থেকে কোন বিপ্লব ঘটাচ্ছেন- আমার কাছে বোধগম্য নয়। এতে উনি কী পাবেন আমি জানি না। আল্লাহ এদের সুমতি দিক- মানুষ পুড়িয়ে মারা বন্ধ করুক, ছেলে-মেয়েরা যাতে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারে।

সব কিছু একটা নিয়মের মধে নিয়ে এসেছি সেই সময় এই হরতাল অবরোধের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারা। অবরোধের মধ্যে আবার হরতাল, অর্থাৎ মরার ওপর খাড়ার ঘা। বিএনপি-জামাত জোট মিলে এসব করে যাচ্ছে। জানি না বিএনপি নেত্রীর কী উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, মানুষ লেখাপড়া শিখুক, মানুষ হয়ে উঠুক, উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হোক- তা তিনি চান না। জামাত-শিবিরও আবার হরতাল ডাকে। লেখা পড়া শিখলে তো বিভ্রান্ত করতে পারবে না। তাই তারা দেশের মানুষকে লেখাপড়া শিখতে দিতে চায় না। এটাই বোধ হয় তাদের উদ্দেশ্য। শুক্রবার-শনিবার আবার হরতাল দেয় কি না- এদের বিশ্বাস নাই। এরা তো ধর্মের নামে ব্যবসা করে। দেখা গেল শুক্রবারেও হরতাল দিয়ে দিল। তিনি বলেন, মানুষ মারার এ আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াত জোটের অর্জন নিয়ে প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, দিনের পর দিন মানুষ পুড়িয়ে মেরে তাদের অর্জনটা কী? এতোগুলো মানুষকে পুঙ্গ করে দেওয়া.. , হাজার হাজার গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া।

এদিকে সরকারের আরো একটি সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের শেষ দিকেও নমনীয় ছিলেন। তিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজে অ্যাবের মতো একটি আগাম নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন এই বছরের মার্চ থেকে নভেম্বরে। যদিও লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে। বিএনপি ওই ধরনের একটি নির্বাচন হলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারতো। কিন্তু এখন বিএনপি যে আন্দোলন শুরু করেছে সেখানে তারা সরকারের পতন চাইছে এইভাবে সরকারের পতন হবে না। এখানে রাজনৈতিক প্রশ্ন। বিএনপি এখন যা করছে তারা মনে করছে সরকারের পতন ঘটাবে। তবে সরকার দেখেছে জনগন এখনও সরকারে বিপক্ষে নয়। জনগণ যদি এই সরকারকে না চায় সেই ক্ষেত্রেই জনগণ রাজপথে নেমে আসলেই পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। কিন্তু সব দিক থেকে সরকারের কাছে রিপোর্ট আসছে, জনগণের একটি অংশ সরকারকে সমর্থন করে না। তবে তারা মাঠে নামবে না। এই জন্য সরকার এই সব বিষয় গুরুত্ব দিচ্ছে না।

সরকারের আরেকজন মন্ত্রী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া মনে করেছেন তিনি জেদ করে তার অফিসে বসে আন্দোলন কর্মসূচি দিনের পর দিন চালিয়ে যাবেন আর সেটা সবাই মেনে নিবে। তিনি দেশের রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করে সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনা ঘটার সুযোগ দিচ্ছেন। এতে করে তিনি ইচ্ছে করেই দেশের ক্ষতি করে চলেছেন। কিন্তু কোন ভাবেই এটা মেনে নিবে না। সরকার বিএনপির শেষ শক্তিটাও পরীক্ষা করবে। এরপর তারা কি করবে সেটাও দেখা হবে।

আইনমন্ত্রী বলেন, এখনও আমি নিশ্চিত করেই বলতে চাই, বিএনপি যত আন্দোলন করুক একদিনের জন্য সরকার এখন আর বিএনপির সঙ্গে কোন সংলাপ ও সমঝোতা করবে না। বিএনপিকে সংলাপ ও সমঝোতা সত্যিকার অর্থে চাইলে নমনীয় হতে হবে। আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করতে হবে। সংলাপের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিতে হবে। সমঝোতা হতে পারে ২০১৯ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে। তবে সেটা অবশ্যই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবি বাদে। নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনেই করতে হবে। সেটা তাদেরকে মেনে নেওয়ারও মানসিকতা থাকতে হবে। এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বিন্দুমাত্র ছাড় দিবেন না। আর সংবিধানের এই বিধানেও কোন পরিবর্তন তিনি আনবেন না।

যদি তারা এটা মেনে না নেয় এখনই সরকারের পতন চায় তাহলে বিএনপিকে মনে রাখতে হবে তাদের আন্দোলন ২০১৩ সালের মতোই ফলশূণ্য হবে। আর শূণ্য হাতেই খালেদা জিয়াকে অফিস থেকে বাসায় যেতে হবে। আমরাও দেখতে চাই খালেদা জিয়ার জেদের দৌরাত্ম কতখানি। আর তিনি কি করতে পারেন। তাকে মনে রাখতে হবে প্রধানমন্ত্রী যা করছেন তা কোনটি অসাংবিধানিক নয়। বরং আমরা খবর পাচ্ছি তিনি সরকারের পতন স্বাভাবিক আন্দোলন করে না পারলে কিভাবে তা করবেন এই জন্য ভিন্ন ধরনের চিন্তা করছেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More