ঢাকা: কে হচ্ছেন জামায়াতের আমির এবং সেক্রেটারি জেনারেল? মানবতাবিরোধী অপরাধে গত ১১ মে দিবাগত রাতে দলটির আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। এর আগে সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ আরো তিন শীর্ষ নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পরই নতুন আমির এবং সেক্রেটারি জেনারেল পদ দুটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। নিজামী ও মুজাহিদ গ্রেপ্তার পর গত কয়েক বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত দিয়েই চালিয়ে নিচ্ছে জামায়াত। মকবুল আহমাদ পাঁচ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত আমির এবং ডা. শফিকুর রহমান কয়েকবছর ধরে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে এটিএম আজহারুল ইসলাম এবং রফিকুল ইসলাম খানও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছেন।
যদিও কারাবন্দি থাকা অবস্থাতেও মতিউর রহমান নিজামী এবং আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের পরামর্শ জামায়াতের নীতি-নির্ধারকরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতেন বলে জানা যায়।
এখন ভারপ্রাপ্ত আমির ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল পদে যথাক্রমে মকবুল আহমাদ এবং ডা. শফিকুর রহমানকেই দায়িত্ব দেয়ার সম্ভবনা বেশি। কোনো কারণে যদি এরা দায়িত্ব না পান তাহলে নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বা ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান আমির হতে পারেন। আবার একটি পক্ষ চায়, ডা. শফিকুর রহমান আমির হলে ঢাকা মহানগরের আমির রফিকুল ইসলাম খান যেন সেক্রেটারি জেনারেল করা হোক। এছাড়া সেক্রেটারি জেনারেল পদে ঢাকা মহানগর আমির রফিকুল ইসলাম খান, নির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যাপক তাসনীম আলম ও হামিদুর রহমান আযাদের নামও আলোচনায় রয়েছে।
এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে রুকন সম্মেলনের মাধ্যমে আমির নির্বাচন সম্ভব না হওয়ায় ভিন্নপন্থায় রুকনদের ভোট বা মতামত নিয়ে আমিরসহ অন্যান্য পদে নির্বাচনের চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। নির্বাহী পরিষদ, কর্মপরিষদ ও মজলিশে শুরার পদেও পরিবর্তন আসছে।
তবে একটি সূত্রে জানা গেছে, আমির ও সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচনের ক্ষেত্রে জামায়াত আরো সময় নিতে পারে। সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে পারে- এমন আশঙ্কায় রয়েছেন নেতাকর্মীরা। এ কারণে কিছুটা সময় নিতে পারে দলটি।
এদিকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেছেন, এই পরিস্থিতিতে আমির পদে নির্বাচন হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাহী পরিষদ ও মজলিশে শুরা। পরিস্থিতির কারণে শুরার বৈঠক করা সম্ভব না হলে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত নেতৃত্ব নির্বাহী পরিষদ ও কর্মপরিষদের মত নেবেন।
১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে তিনবার নিষিদ্ধ হয় জামায়াতে ইসলামী। তারপরও এখনকার মতো পরিস্থিতিতে তারা কখনো পড়েনি। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর চরম সঙ্কটে পড়ে জামায়াত। এক বছরের মাথায় আমির, সেক্রেটারি জেনারেলসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা গ্রেপ্তার হোন এবং তাদের বিচার শুরু হয়।
মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই শীর্ষ দুটি পদ ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে। এ অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে থেকেই দল চালাচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান।
জামায়াতের কমিটিতে ছয়টি নায়েবে আমির পদ রয়েছে। এরমধ্যে তিনটি পদই এখন শূন্য। আর একেএম ইউসুফ ও এ কে এম নাজির আহমেদ মারা গেছেন। আমৃত্যু দণ্ডিত হয়েছেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। আরেক নায়েবে আমির আবদুস সোবহানের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে কারাগারে আছেন মুজিবুর রহমান। একমাত্র সক্রিয় নায়েবে আমির মকবুল আহমাদ ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পালন করছেন।
সহাকারী সেক্রেটারি জেনারেলের দুই জন মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। এটিএম আজহারের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে। ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক তিন বছর ধরে বিদেশে। একমাত্র সক্রিয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করছেন।