ঢাকা: এই মুহূর্তে বিশ্বের নানা প্রান্তে চলছে সংঘাত রক্তপাত। ক’দিন আগে আমাদের দেশেও সহিংসতা এবং প্রাণহানি নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন যেন ঠিক তার উল্টো পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিরূপ প্রকৃতি এবং পরিবেশ জয় করে যারা সব সময় স্বচ্ছন্দে থেকেছেন, তারা এখন বৈশাখের প্রখর রোদ মাথায় ধুলোময় রাজপথ আর সুবিধাবঞ্চিত বস্তিতে নিয়মিত যাতায়াত এবং সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে সখ্য তৈরির চেষ্টা করছেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে অন্তত ১৬ জন প্রার্থী রয়েছেন তার মধ্যে আনিসুল হক, তাবিথ আউয়াল এবং মাহী বি চৌধুরীকে অভিজাত প্রার্থী হিসেবে ধরা হচ্ছে। এই প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় তাক লাগানো কৌশল অবলম্বন করছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ছবিতে দেখা গেছে, কম আয়ের মানুষগুলোর সঙ্গে ভোট প্রার্থীদের হৃদ্যতার দৃশ্য। আনিসুল হককে এক বৃদ্ধা তার মুখে চুমু খাচ্ছেন, এই প্রার্থী আবার তারুণ্য প্রমাণের জন্য রাজপথে দৌড় দিয়েও দেখিয়েছেন। এগুলো যেমন সবাইকে আকৃষ্ট করছে তেমনি তাবিথ আউয়াল বস্তির শিশুকে কাঁধে নিয়েছেন, তাতেও ব্যাপক সাড়া পড়েছে। পিছিয়ে নেই মাহী বি চৌধুরী। তিনি তো রীতিমত ঢাকা সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। এর মাধ্যমে অনেকেই মনে করছেন মাহী বি চৌধুরী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অনুসরণ করছেন। তবে সমালোচনাও রয়েছে- তিনি রাস্তা পরিষ্কারের সময় মুখে মাস্ক ব্যবহার করেননি বলে।
ভোটারদের মধ্যে প্রার্থীদের এই কৌশলের কোনো প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে রাজনীতি বিশ্লেষক মহিউদ্দিন খান মোহন বাংলামেইলকে বলেন, ‘এগুলো রাজনীতির অংশ। বস্তির শিশু কাঁধে, বৃদ্ধার চুমু, রাস্তায় ঝাড়ু এগুলো লোক দেখানো ছবি মাত্র। ভোটের ক্ষেত্রে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। যিনি মাস্ক ছাড়া রাস্তা ঝাড়ু দিয়েছেন তিনি জীবনে কি কখনও তার বাসায় ঝাড়ু দিয়েছেন? তবে এই ধরনের গণসংযোগ রাজনীতির মাঠে নতুনদের জন্যে ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে যা তাদের ভবিষ্যতের নেতৃত্বকে সুদৃঢ় করবে।’
মোহন বলেন, ‘নির্দলীয় ভোট হলেও দলীয় ভিত্তিতে ভোট পড়বে। যে সকল রাজনৈতিক দলগুলো যাদের সমর্থন দিয়েছে দলগুলোর সমর্থকরা সেই প্রার্থীকে ভোট দেবে।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে তাবিথ আউয়াল তার নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হন তিনি। বাংলামেইলের পক্ষ থেকে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, নির্বাচনী প্রচারণায় বস্তির শিশু কাঁধে নেয়া এবং তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মেলামেশা কি শুধু ভোটের কৌশল নাকি নির্বাচনের পরও এই সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে?
জবাবে তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকে বস্তিতে ও রাজধানীর বিভিন্ন অলিতে-গলিতে ফুটবল খেলেছি। নিম্নবিত্ত শ্রেণী থেকে শুরু করে উচ্চবিত্তদের সঙ্গে আমার মেলামেশার সুযোগ হয়েছে। ভবিষ্যতেও আমি সবার পাশে থাকবো ইনশাআল্লাহ।’
সঙ্গত কারণে আনিসুল হক এবং মাহী বি চৌধুরীও সব সময় জনগণের সঙ্গে থাকার কথা বলেছেন।