ঢাকা: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ বা ‘গণতন্ত্র অভিযাত্রা’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে সারা দেশ থেকে ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন জোটের নেতা-কর্মীরা। হামলা-মামলা-গ্রেপ্তারসহ নানা বাধা আসতে পারে এমন আশঙ্কায় সমাবেশের দু’দিন আগ থেকেই তারা রাজধানীতে এসে অবস্থান নিচ্ছেন।
দলীয় সূত্র দাবি করেছে, এরইমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লক্ষাধিক নেতাকর্মী ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে ঢাকায় পৌঁছেছে।
জোটের এক কেন্দ্রীয় নেতা সাংবাদিকদের বলেন, ‘সমাবেশে ১০ লাখ লোকের সমাগমের পরিকল্পনা করেছে বিএনপি। বিএনপির এই সমাবেশকে বানচাল করার জন্য পুলিশের পাশাপাশি দলীয় ক্যাডাররাও মাঠে নামাবে। তাই দলের হাইকমান্ড থেকে নিরাপদ সময়ে নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ আবাসিক হোটেলে সিট নেই। অনেক আগেই অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। অনেক হোটেলে সিট থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশে তা ভাড়া দেয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় আত্মীয়-স্বজনদের বাসা বাড়ি ও মেসে উঠতে শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা। শুক্রবারের মধ্যেই সারা দেশের অধিকাংশ নেতা-কর্মীরা ঢাকায় অবস্থান নেবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ২৯ ডিসেম্বরের কর্মসূচিতে সরকারের পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বাধা আসবে। এ আশঙ্কায় কর্মসূচি ঘোষণার পরদিন থেকেই কৌশলগত কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় আসতে শুরু করেছে ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা।
এদিকে রাজধানীর আবাসিক হোটেলগুলোতে পুলিশের বিশেষ অভিযান চলতে পারে এমন আশঙ্কাও করছেন ঢাকায় আসা নেতাকর্মীরা। তাই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টি এড়াতে হোটেলগুলোতে না উঠে অনেকেই আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের বাসায় উঠেছেন।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের এক সদস্য সাংবাদিকদের বলেন, ‘জালিম এ সরকার ইসলামী শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আল্লাহর সন্তুষ্ঠি অর্জন করাই আমাদের কর্মীদের একমাত্র লক্ষ্য। সরকার ইসলামি আন্দোলনের কর্মীদের বিরুদ্ধে যতই দমন-নিপীড়ণ করুক না কেন ২৯ তারিখেই এ সরকারের পতনের ঘণ্টা বাজবে। সে জন্য সংগঠনের নেতাকর্মীদের ঈমাদের ঝাণ্ডা নিয়ে রাজধানীতে চলে আসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা তাদের নেতাদের অনুগত। তাই যে কোনো নির্দেশ পালনে তারা সদা জাগ্রত থাকে। জোটের কর্মসূচি সফল করতেও আমাদের কর্মীরা মাঠে থাকবে।’
তবে সরকারের কঠোর নজরদারি থাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রিত মেস, বাসা-বাড়ি ও স্কুল মাদরাসায় নেতাকর্মীদের অবস্থান করতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জানা গেছে, গত ২৪ নভেম্বর রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামকে সমাবেশ করতে না দেয়ায় ক্ষোভ রয়েছে দলটির (হেফাজতের) নেতাকর্মীদের মধ্যে। তাই তারা বিএনপির এ সমাবেশে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করবেন। সে জন্য হেফাজতের নেতাকর্মীরাও রাজধানী এবং আশপাশের এলাকার মসজিদ ও মাদরাসাগুলোতে অবস্থান করতে শুরু করেছেন।
পঞ্চম দফায় টানা ৮৩ ঘণ্টার অবরোধ শেষে গত মঙ্গলবার বিকেলে জোটের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া গুলশানে তার নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আগামী ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় পাতাকা হাতে ঢাকা অভিমুখে ‘মাচ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
২৯ তারিখের কর্মসূচিতে যোগ দিতে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে আসা বিএনপিকর্মী নিজাম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকার ২৭ ও ২৮ তারিখ অলিখিত হরতাল পালনসহ যানবাহন বন্ধ করে দিতে পারে। সমাবশেকে কেন্দ্র করে পথে পথে গণগ্রেপ্তরসহ নেতাকর্মীদেরকে হয়রানি করতে পারে। সে জন্য নিরাপদ সময়ে আজ (বৃহস্পতিবার) ঢাকায় চলে এসেছি।’
তার সঙ্গে আরও ৮জন দলীয় কর্মী ঢাকায় এসেছেন বলেও জানান তিনি।
ঢাকা-খুলনা রুটে চলাচলকারী ফালগুনী পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার সাগর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আসলে যাত্রীদের সংখ্যা অনেক বেশি। এদের মধ্যে নেতাশ্রেণীর লোকজন বেশি দেখা যাচ্ছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করেই হতে পারে যাত্রীদের এমন ভীড়।’
এশিয়া পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার নুরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সমাবেশেকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেকটা রিজার্ভের মতো গাড়ি ভাড়া করে ঢাকায় আসছেন। সেজন্য যাত্রীদের অনেক ভীড় রয়েছে।’
বিএনপির এ কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার জন্য সরকার সব ধরণের চেষ্টা চলাচ্ছে বলে এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘যতই বাধা আসুক, এ ফ্যাসিস্ট সরকার থেকে জনগণ তাদের দাবি আদায় করতে জোটের কর্মসূচি সফল করবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘কর্মসূচি ঘোষণার সঙ্গেই ম্যাডাম খালেদা নারী-পুরুষ, দলমত নির্বিশেষে সবাইকে গণতন্ত্র রক্ষায় সাড়া দিতে ঢাকায় আসতে বলেছেন। নেতাকর্মীরা যে যার সুবিধামতো ঢাকায় আসছে। রাজধানী থেকে যাদের বাড়ি দূরে তারা দু’একদিন আগেই আসবে। তাছাড়া সরকার সমাবেশেকে বানচাল করার জন্য গণগ্রেপ্তারসহ বিভিন্নভাবে প্রাণপণ চেষ্টা করছে।’
সমাবেশ সফল হলে সরকার জনগণের দাবি আদায়ে বাধ্য হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
চেয়ারপরসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, ‘২৯ মার্চের কর্মসূচি সফল হবে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে আর্ন্তজাতিক মহল বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানবে। দেখবে বাংলাদেশের একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিবাদ জনগণ ফুঁসে উঠেছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে আর্ন্তজাতিক মহল অবগত আছে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রশাসনসহ সর্বস্তরে আরেকটি বার্তা দেয়া হবে।’
দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) এম হাফিজ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এর আগেও ১২ মার্চে ঢাকা চলো কর্মসূচিতে সরকার বাধা দিয়েছিল। কিন্তু এবার বাধা দিয়েও কাজ হবে না। জনগণ এরইমধ্যে ঢাকা আসতে শুরু করেছে। কর্মসূচি সফল হবেই।’
নেতাকর্মীরা কীভাবে আসবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নেতাকর্মীদের যার যার নিজের মতো করে আসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, ‘সরকার যত বাধাই দিক না কেন, ২৯ ডিসেম্বরের কর্মসূচি সফল হবে। সেদিন সমাবেশ থেকে বেগম খালেদা জিয়া নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।’
পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান টোটন সাংবাদিকদের বলেন, ‘পটুয়াখালী থেকে প্রায় ৫ হাজারের অধিক মানুষ এই কর্মসূচিতে অংশ নেবে। এরইমধ্যে অনেকে লঞ্চে-বাসে করে ঢাকা পৌঁছেছেন।’